|
|
|
|
সরকারি প্রকল্পের বাড়ি বিক্রিতে অভিযুক্ত তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
কেন্দ্রীয় সরকারের আম্বেদকর আবাস যোজনার (ভ্যামবে) একটি বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। বাড়ির মালিক বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন। মহকুমাশাসক আয়েষারানি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ওই বাড়ির মালিক, সুমিতা সাউ মহকুমাশাসকের কাছে দায়ের করা অভিযোগে জানান, সরকারি নিয়ম মেনেই, অমরাবতীর ভ্যামবে কলোনির একটি বাড়ি চেয়ে ২০০৮ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি পুরসভার কাছে ৫ হাজার টাকা জমা দেন। এরপরে ঠিক এক বছরের মাথায় ওই কলোনির ১২০ সি নম্বর বাড়িটি পুরসভা তাঁকে দেয়। তখন থেকে তিনি ওই বাড়িতেই থাকেন। মাস দেড়েক আগে এক আত্মীয় অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি দেশের বাড়ি উত্তরপ্রদেশ চলে যান। ২৪ ফেব্রুয়ারি ফিরে দেখেন, তাঁর বাড়ি বেদখল হয়ে গিয়েছে। মুন্না রজক নামে একজন সেখানে বসবাস করছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, বাড়ির ভিতর থেকে যাবতীয় আসবাবপত্র, সোনার আংটি এবং নগদ টাকা উধাও। |
|
আমেদকার আবাস যোজনার সেই বাড়ি। |
সুমিতাদেবীর দাবি, তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, তৃণমূল কর্মী দীনেশ কর্মকার, মলয় বাউরি-সহ আরও কয়েকজন মিলে তাঁর বাড়িটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। সুমিতাদেবীর দাবি, বিষয়টি তিনি স্থানীয় নিউ টাউনশিপ থানায় জানাতে গেল তাঁর অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। উল্টে তাঁকে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য গড়ে ওঠা কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভ্যামবে প্রকল্প রূপায়নের দায়িত্বে ছিল আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ। প্রকল্পের আওতায় শহরের তিন জায়গায় প্রায় পাঁচশোটি বাড়ি বানানো হয়। উপভোক্তা বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিল পুরসভা। উপভোক্তারা প্রত্যেকে পুরসভার কাছে ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে ঘরের মালিকানা পান। সুমিতাদেবীও সেভাবেই পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই এলাকায় বাড়ি পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বেঘর হয়ে গিয়েছি। আমার নায্য ঘর ফেরত দেওয়া হোক। লুঠ হওয়া সামগ্রী যাতে ফিরে পাই তা দেখুক প্রশাসন। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” |
|
সুমিতাদেবী ও তাঁর পরিবারের লোকজন। |
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সুমিতাদেবীর জন্য বরাদ্দ ঘরটি তালাবন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিষয়টি নিয়ে সুমিতাদেবী সরব হওয়ার পর থেকে মুন্না রজক বাড়িটি তালাবন্ধ করে দিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। কাছেই একটি বাড়িতে ছিলেন মুন্নার ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সন্তোষ রজক। তিনি বলেন, “আমি শুধু জানি, বাবা বাড়িটি কিনেছেন। এর বেশি কিছু জানি না।” সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “কে বা কোন রাজনৈতিক দল ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেটা বিবেচ্য নয়। পুরসভার মাধ্যমে ওই মহিলা বাড়ি পেয়েছিলেন। আইন অনুযায়ী বাড়ি থেকে প্রকৃত মালিক উচ্ছেদ হলে তা যাতে বৈধ মালিক ফিরে পান তা পুরসভাকেই দেখতে হবে।” স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দীপু বাউড়ি বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। প্রকৃত মালিক যাতে নিজের বাড়ি ফিরে পান স্থানীয় কাউন্সিলর হিসাবে তা দেখা আমার কাজ।” সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “মানুষ তৃণমূলকে সমর্থন করেছিল ভাল কিছুর আশায়। কিন্তু জোর করে বাড়ি-জমি-কাজ কেড়ে ওরা নিজেদের স্বরূপ নিজেরাই প্রকাশ করে দিয়েছে।” ঘটনার সঙ্গে দলের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর দীপুবাবু। তিনি বলেন, “সিপিএমের অভিযোগ হাস্যকর। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নেই বলেই জানি। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|