শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, দুই শহরে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ চলছেই। সন্ধ্যার পরে দুই শহরে যাতায়াতের ট্রেন নেই। যে কটি বাস চলার কথা অধিকাংশের দেখা মেলে না। নিত্যযাত্রীদের রোজই হয়রান হতে হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থার চাকুরে হওয়ায় সকলের অফিস থেকে বেরোতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। যাত্রীদের তরফে বহুবার নেতা-কর্তা-আমলাদের কাছে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। অনেকে সহানুভূতি দেখিয়ে ‘কিছু করা হবে’ গোছের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, কাজের কাজ এখনও কিছুই হয়নি।
যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিত্যযাত্রীদের সমস্যা মেটানো হবে বলে ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন। ঘটনাচক্রে, গৌতমবাবুই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান। মন্ত্রী বলেন, “দুই শহরের নিত্যযাত্রীদের সমস্যার বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল। শীঘ্রই এনবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে আলোচনায় বসে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী আশ্বাস দিলে কাজের কাজ আদপে কবে হবে তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে জল্পনা চলছে। বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাটা সংক্ষেপে এরকম। সাড়ে ৭টা নাগাদ শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের জলপাইগুড়ি বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান, গাড়ি নেই। ৮টা নাগাদ যদিও বা এক বেসরকারি বাস পৌঁছল, মুহূর্তে তা ভর্তি হয়ে যায়। দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। বাকিদের শেয়ারে গাড়ি ভাড়া করে বা ট্রাকে চড়ে বাড়ির ফেরার জন্য ‘লড়াই’ চালাতে হয়। |
একনজরে |
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি |
৪৫ কিলোমিটার |
নিত্যযাত্রী |
১০ হাজার |
লোকাল ট্রেন একটি
সকালে-দুপুর-সন্ধ্যা যাতায়াত করে। কামরা ৫/৬টি |
সরকারি বাস |
৬টি |
বেসরকারি (সুপার) বাস |
২২টি |
লোকাল বাস |
১৫টি |
সমস্যা
সন্ধ্যার পরে সরকারি ও বেসরকারি বাস অনিয়মিত।
সাড়ে ৮টার পরে কোনও বাস চলে না। |
দীর্ঘদিনের দাবি
৯টা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি বাস পর্যায়ক্রমে চালানো হোক।
রাত ৮টায় শিলিগুড়ি জংশন থেকে জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার
ট্রেন চালানো হোক। |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন: “সন্ধ্যার পরে একটা বাস চালানোর নির্দেশ আগেই দিয়েছি। নিত্যযাত্রীদের যাতে অসুবিধে না হয় সে জন্য যা করণীয় করা হবে।” |
|
একই ভাবে শিলিগুড়ি থেকে যাঁরা রোজ কর্মসূত্রে জলপাইগুড়ি যান, তাঁরা বিকেলের ট্রেন ধরতে না-পারলে কী ভাবে বাড়িতে ফেরা হবে সেটা ভেবে কূলকিনারা পান না। জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার শেষ বাসটি ছাড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। স্বভাবতই, ওই নিত্যযাত্রীদের রোজই নানা কসরত করে ফেরার উপায় খুঁজতে হয়। জলপাইগুড়ি গোশালা মোড়ে দাঁড়িয়ে দূরপাল্লার শিলিগুড়িগামী বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা পায়েল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “মাঝেমধ্যে দুঃসহ মনে হয়। বাড়ি ফিরতে রাত ১১টা বাজে। এত কাছে দুটো শহর। অথচ সন্ধ্যার পরে রাস্তায় বেরোলে মনে হয় কয়েকশো কিমি দূর!”
এত যাত্রী রয়েছে। তবুও বাস চালানো হয় না কেন? উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একাধিক বাস চালক জানিয়েছেন, সংস্থা পরিচালন বোর্ডের তরফে উদ্যোগী হলে কবেই সমস্যা মিটে যেত। পক্ষান্তরে, বেসরকারি বাস মালিকদের তরফে বলা হচ্ছে, ওই রাস্তার বেহাল দশার জন্য সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া বেসরকারি বাস বিয়ে ও অন্যান্য নানা অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়। তাই বছরের প্রায় সমস্ত উৎসবের দিনগুলিতে নিত্যযাত্রীদের যাত্রাপথের ভোগান্তি চরমে পৌঁছয়।
বস্তুত, রাস্তা খারাপ হওয়াটা একটা সমস্যা হলেও তা প্রধান কারণ বলে মনে করেন না নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের অনেকেরই কথায়, বেহাল রাস্তায় সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়ি চলছে। তা হলে রাতে চলতে অসুবিধে কোথায় সেটাই নিত্যযাত্রীরা ভেবে পান না। নর্থ বেঙ্গল প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্ট ওনার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক প্রণব মানি বলেন, “রাস্তা খারাপ হওয়ায় বাসগুলো দুটো ট্রিপ করছে। রাতের ট্রিপটা অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে না। রাস্তা ঠিক হলে সমস্যা মিটে যাবে। বিয়ে ও অনুষ্ঠানের দিন গাড়ির সমস্যার বিষয়টি আমাদেরও নজরে আছে। দেখা যাক কী করা যায়।” |