নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
আন্দোলন নয়, আলোচনার পথে ‘শান্তিপূর্ণ ভাবেই’ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তবে সেক্ষেত্রেও তারা রাজ্যের উপরে চাপ বজায় রাখতে চাইছে। রাজ্য সরকারের কোনও উচ্চপদস্থ প্রশাসক মোর্চার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পাহাড়ে যেতে পারেন, এ খবর জানাজানি হওয়ার পরেই মোর্চা দিল্লিতে গিয়ে সরাসরি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেই কথা বলতে চায়। মোর্চা সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে আজ, সোমবার নয়াদিল্লি যাচ্ছেন মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তাঁর সঙ্গে যাচ্ছেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ও দার্জিলিঙের বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়ানও। মোর্চার অন্দরের খবর, রাষ্ট্রপতির তরফে আশ্বাস পেলে সব আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে। বস্তুত, তাঁরা যে আন্দোলন থেকে সরার কথা ভাবছেন, সেই বার্তাও আজ দিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। কারণ, এদিনই মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে বলে পাহাড়ে নারী মোর্চার সব রকম মিটিং-মিছিল আপাতত স্থগিত করে দিয়েছেন গুরুঙ্গ।
রোশন বলেন, “নয়াদিল্লিতে আমরা নানা মহলে যোগাযোগ করেছি। আগামী ৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ মিলতে পারে। আমরা আমাদের বক্তব্য জানাব। এটাও জানিয়ে দেব, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই দাবি-দাওয়া আদায় করতে চাই।” কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পবন বনশল ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সঙ্গেও তাঁরা দেখা করবেন বলে রোশন জানান। তিনি বলেন, “দু’জন মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা পাহাড়ের রেল প্রকল্পগুলি নিয়ে জানতে চাইব। দার্জিলিঙের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের থেকে বিশেষ বরাদ্দের আনুরোধও করব।” লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন সহ কয়েকটি বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে মোর্চার মতবিরোধ এখনও মেটেনি। রাজ্য সরকারের তরফে মোর্চাকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারি ভাবে এখনও আমন্ত্রণ যায়নি। যদিও রাজ্য সরকারের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে জিটিএ-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আলোচনার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে মোর্চা নেতারা দিল্লি যাচ্ছেন কেন?
মোর্চার অন্দরের খবর, লাগাতার বেশ কিছু আন্দোলন ঘোষণা করে দিয়েছে মোর্চা। তার মধ্যে রয়েছে দু’দফায় ৪ দিনের বন্ধও। কিন্তু সামনেই গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম, প্রথম বৃষ্টির পরে চা পাতা তোলার কাজ শুরু হবে। সেই সঙ্গে নয়া শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে পাহাড়ে। সেই সঙ্গে জিটিএ-এর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও আন্দোলনের জেরে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আন্দোলন তুলে নেওয়ার জন্য নানা মহলের চাপও বাড়ছে মোর্চা নেতাদের উপরে। সে কারণেই মোর্চা এখন চাইছে এমন একটা রফাসূত্র, যাতে নিজেদের মুখ রক্ষা করেই আন্দোলন তুলে নেওয়া যায়। সে কারণেই নয়াদিল্লিতে আলোচনার পথ খুলতে জোর দিচ্ছে মোর্চা নেতৃত্ব। সেখান থেকে কোনও আশ্বাস আদায় করতে পারলে পাহাড়ে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সুযোগ পাবেন তাঁরা। তবে মোর্চা-রাজ্য সম্পর্ক এখন যে অবস্থায় পৌঁছেছে, তাতে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা না-আঁচালে কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
|