|
|
|
|
পাঁশকুড়া ফুল বাজার নিয়ে তৃণমূলে দ্বৈরথ চলছেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
এক দিকে পুরপ্রধান, অন্য দিকে পুরপিতা। পাঁশকুড়ার ফুল বাজার ভাগ নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ বাড়ছে ক্রমশ।
প্রায় তিন মাস হল। কনকপুরে সরকারি ফুল বাজারে আড়তদারদের বসা বারণ হয়ে যাওয়ায় কয়েক’শো মিটার দূরে নারান্দায় ব্র্যাডলিবার্ট হাইস্কুলের মাঠে শুরু হয়েছে বেসরকারি ফুল বাজার। স্কুলের মাঠে ওই ফুল বাজার বন্ধ করতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সরকারি ফুল বাজার পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান জাকিউর রহমান। তাঁর অভিযোগ, “অনুমতি না নিয়েই স্কুলের মাঠে ফুল বাজার চলছে।” এ দিকে, বেসরকারি ফুলবাজারের উদ্যোক্তা তথা পাঁশকুড়া পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নিজে ওই হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক। তাঁর দাবি, “হাইস্কুলের মাঠ নয়, মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গায় ওই ফুল বাজার অস্থায়ী ভাবে চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের উদ্যানপালন দফতরের উদ্যোগে পাঁশকুড়ার কনকপুরে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ২০০৪ সালে সরকারি ফুল বাজার চালু হয়েছিল। বামফ্রন্ট আমলে তৈরি ওই সরকারি ফুল বাজারের পরিচালন সমিতি নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় বাম নেতৃত্ব। মূলত, আড়তদার প্রথায় ওই সরকারি ফুল বাজারে চাষিদের কাছ থেকে ফুল কেনা হত। সরকার পরিবর্তনের পর গত বছর নতুন করে ফুল বাজারের পরিচালন সমিতি গঠন করে রাজ্য উদ্যানপালন দফতর। নতুন পরিচালন সমিতির সভাপতি পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান-সহ অধিকাংশ সদস্যই সরকারি ফুল বাজারে আড়তদার প্রথা তুলে দিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ফুল কেনার পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছর ২৬ নভেম্বর থেকে তা চালুও হয়। কিন্তু, পুরসভারই তৃণমূল কাউন্সিলর আনিসুর রহমান সরকারি ফুল বাজারে আড়তদার প্রথা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একতরফা বলে অভিযোগ তোলেন। আনিসুরের মদতেই গত ২৮ নভেম্বর থেকে কয়েক’শো মিটার দূরে জাতীয় সড়কের পাশে পাঁশকুড়া ব্র্যাডলিবার্ট হাইস্কুলের মাঠের একাংশে বেসরকারি ফুল বাজার চালু হয়।
লোক হচ্ছে দু’টোতেই। সরকারি ফুলবাজার সন্ধ্যায় একটু আগে বসে। সেখানে বেচার পরে কিছু ফুল চাষি আবার বেসরকারি বাজারটিতে যান। তবে আড়তদারেরা ঢুকতে পারেন না সরকারি ফুল বাজারে। চাষি-আড়তদারদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলেও দুই ফুলবাজারের মাথা পুরপ্রধান ও কাউন্সিলরের বিবাদ চলছেই।
সরকারি ফুল বাজার পরিচালন সমিতির সভাপতি বেসরকারি ফুল বাজার বন্ধ করতে দলের জেলা নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তমলুকের মহকুমাশাসক গত ডিসেম্বর মাসে বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঠে ফুলের প্রদর্শনী ও বিক্রয় চলছে বলে জানান। কিন্তু, প্রায় দু’মাস পরও হাইস্কুলের মাঠে ফুলের বেচাকেনা চলায় মহকুমাশাসক চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধান শিক্ষককে ফের চিঠি পাঠান। মহকুমাশাসক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে স্কুলের মাঠে ফুল বেচাকেনা হচ্ছে কি না। যদি হয় তা কী ভাবে এত দিন ধরে চলছে। তাঁর কাছ থেকে এখনও জবাব আসেনি।”
ব্র্যাডলিবার্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বনমালী সামন্ত দায় এড়িয়ে বলেন, “বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির নির্দেশ মতো ফুল বাজারের জন্য স্কুলের মাঠ দেওয়া হয়েছে।” বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান মহকুমাশাসকের ওই চিঠি এসেছে জানিয়ে বলেন, “ফুল বাজারের জন্য স্কুলের মাঠ ব্যবহার হচ্ছে না। মাঠের সংলগ্ন খালি জায়গা অস্থায়ী ভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।” আনিসুরের পাল্টা দাবি, “সরকারি ফুল বাজার নিয়ে পরিচালন সমিতির কিছু সিদ্ধান্ত কৃষকদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। তা নিয়ে আলোচনা না করে পরিচালন সমিতি একতরফা ভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। সেই জন্য কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে এই ফুল বাজার চালু করেছে। কৃষকদের স্বার্থেই আমরা অস্থায়ী ভাবে স্কুলের মাঠের খালি জায়গায় ফুল বেচা-কেনার অনুমতি দিয়েছি।” |
|
|
|
|
|