দু’বছরেও বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে হাওড়া জেলার জরিশিল্পীদের মধ্যে ‘আর্টিশান কার্ড’ (হস্তশিল্পীদের পরিচয়পত্র) বিলির প্রক্রিয়া আশানুরূপ না হাওয়ায় এ বার সেই কাজে সরাসরি যুক্ত হল জেলা শিল্প দফতর। মাস খানেকের মধ্যে সাঁকরাইলের কান্দুয়া, আমতা-২ ব্লকের গাজিপুর পঞ্চাননতলা এবং উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের কয়ালপাড়ায় শিবির করে ওই কার্ড বিলির প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে প্রায় দু’হাজার জরিশিল্পীর কাছ থেকে আবেদনপত্র নিয়েছে ওই দফতর। আবেদনপত্রগুলি খতিয়ে দেখে যোগ্যদের ওই কার্ড দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও শিবির করা হবে বলে জেলা শিল্পকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে।
রাজ্য শ্রম দফতর জরিশিল্পকে অসংগঠিত শিল্পের মধ্যে ধরেনি। ফলে অসংগঠিত শিল্প-শ্রমিকদের জন্য যে ‘ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ রয়েছে তাদের দেওয়া কোনও সুযোগ-সুবিধা জরিশিল্পীরা পান না। অথচ, হাওড়া জেলায় অন্তত ছ’লক্ষ জরিশিল্পী রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই হতদরিদ্র অবস্থায় দিন কাটান।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রক হস্তশিল্পীদের মধ্যে ‘আর্টিশান কার্ড’ বিলি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরিশিল্পীদের। ওই কার্ড যিনি পাবেন তাঁকে রাজীব গাঁধী স্বাস্থ্যবিমা যোজনা, পেনশন প্রকল্প, উন্নত মানের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই নয়, হস্তশিল্পীদের জন্য ক্রেডিট কার্ডও চালু করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। ওই কার্ড থাকলে জরিশিল্পীরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন।
কিন্তু ২০১১ সালের গোড়া থেকে জেলায় জরিশিল্পীদের মধ্যে ওই কার্ড বিলির প্রক্রিয়া শুরু হলেও তার অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি। জেলা শিল্পকেন্দ্র সূত্রের খবর, প্রথমে আবেদনপত্র বিলির দায়িত্ব দেওয়া হয় পঞ্চায়েতগুলিকে। জরিশিল্পীদের মধ্যে আবেদনপত্র বিলি করে এবং তাঁদের দিয়েই তা পূরণ করিয়ে ফের সেগুলি জেলা শিল্পকেন্দ্রে ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্লকের শিল্প সম্প্রসারণ আধিকারিকদের (আইডিও)। কিন্তু পঞ্চায়েতগুলি এই কাজে আশানুরূপ আগ্রহ দেখায়নি। অন্য দিকে, নানা কাজের চাপে আইডিও-রাও প্রকল্পটির ঠিকমতো তত্ত্বাবধান করতে পারেননি বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে প্রায় দু’বছর ধরে কার্ড বিলির প্রক্রিয়া চললেও জেলায় প্রায় ছয় লক্ষ জরিশিল্পীর মধ্যে কার্ড পান মাত্র হাজার তিরিশ জন। ফলে, লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে কার্ড বিলির প্রক্রিয়া। শেষ পর্যন্ত নিজেরাই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন জেলা শিল্পকেন্দ্রের কর্তারা। জেলা শিল্পকেন্দ্রের এক আধিকারিক জানান, পঞ্চতায়েতের মাধ্যমে আবেদনপত্র বিলি ও পূরণের কাজ যেমন চলছে, চলবে। সঙ্গে এই প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে শিবিরের আয়োজন হয়েছে। তাদের সাহায্য করছে জরিশিল্পীদের সংগঠনগুলি। ‘সারা ভারত জরিশিল্পী কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক মুজিবর রহমান বলেন, “আর্টিশান কার্ড বিলির অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ার জন্য আমরা জেলা শিল্পকেন্দ্রের সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করি। শিল্পকেন্দ্রের পক্ষ থেকে সরাসরি শিবির করার কথা বলা হয়। আমরাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।” |