ঠিকমতো বরাদ্দ টাকা না মেলায় হুগলি জেলার বহু প্রাথমিক এবং আপার প্রাইমারি (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) স্কুলে মিড-ডে মিল চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। কোথাও ধারে চাল কিনে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে, কোথাও আবার বিডিও নিজের তহবিল থেকে স্কুলগুলিকে টাকা দিয়ে সমস্যা দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে, সকলেই একমত এ ভাবে বেশি দিন ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালানো যাবে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে হুগলির জন্য শেষ বার ওই প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা এসেছিল। তবে, চালের জোগান নিয়মিত রয়েছে। ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটও নিয়মমতো জমা দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তরফে মিড ডে মিল প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক (ওসি) সুতীর্থ দাস বলেন, “রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছ থেকে মিড ডে মিলের প্রয়োজনীয় তহবিল চেয়ে পাঠিয়েছি। প্রকল্পটি চালু রাখতে বিডিওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।” মিড ডে মিলের রাজ্য প্রকল্প অধিকর্তা নরেন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, “হুগলি জেলা থেকে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত সমস্যার জন্য বরাদ্দ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। শীঘ্রই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হল মিড ডে মিল। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত স্তরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাল বিক্রি করে যেমন টাকার ব্যবস্থা করা যাবে না, তেমনই সব্জি বা জ্বালানি কেনা এবং রাঁধুনিদের বেতনও দেওয়া যাবে না। উল্টো দিকে, সব্জি বা জ্বালানি কেনার খরচ বা রাঁধুনিদের বেতন থেকে চাল কেনা যাবে না। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে টাকার জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব্জি বা জ্বালানি কেনা এবং রাঁধুনিদের বেতন দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়ছে বহু স্কুল। এ নিয়ে ব্লক অফিসে ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে। শুক্রবারই মিড ডে মিল রান্না বন্ধ রেখে বেতন না পাওয়ার প্রতিবাদে গোঘাট-১ ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান গোঘাট রামকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভগবতী শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের রাঁধুনিরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে ৩৩১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব ক’টিতেই মিড-ডে-মিল প্রকল্প চালু রয়েছে। কিন্তু তা চালাতে জেরবার হচ্ছেন অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ। পাণ্ডুয়ার সরাইতিন্না পঞ্চায়েতের পুরুষোত্তমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিস দাস বলেন, “টাকার অভাবে দোকান থেকে ধারে মালপত্র কিনে মিড ডে মিল চালাতে হচ্ছে। রাঁধুনিদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। টাকা চেয়ে জেরবার হয়ে যাচ্ছি। এ ভাবে চললে বেশি দিন প্রকল্পটি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।” তারকেশ্বরের সন্তোষপুর পঞ্চায়েতের বিষ্ণুবাটি-গয়েশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপকুমার কোলে বলেন, “মিড-ডে মিল বন্ধ করে দেব ভেবেছিলাম। বিডিও নিজের তহবিল থেকে টাকা দিয়েছেন। তাই প্রকল্পটি চালানো যাচ্ছে।” গোঘাট প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামসুন্দর মালিক শুক্রবার বলেন, “ধার করে প্রকল্পটি চালানো হচ্ছে। কিন্তু রাঁধুনিদের পাঁছ মাস ধরে বেতন দিতে পারছি না। এ জন্য ওঁদের ক্ষোভ ছিলই। এ দিন ওঁরা রান্না বন্ধ করে দিলেন।” একই কথা বলছেন আরও অনেক প্রধান শিক্ষকই।
তুলনায় সমস্যা কিছুটা কম জেলার আপার প্রাইমারি স্কুলগুলির। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ৭৪১টি আপার প্রাইমারি স্কুলের মধ্যে ৬৬২টিতে চলছে মিড-ডে মিল (বাকিগুলিতে প্রকল্পটি এখনও চালু হয়নি)। এই সব স্কুলে একাধিকবার পরীক্ষা এবং অনুপস্থিতির হার বেশি বলে প্রকল্পটি চালাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির সমস্যা মেটাতে কিছু ক্ষেত্রে বিডিও-রাও এগিয়ে এসেছেন। তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মজুমদার বলেন, “মিড-ডে মিল খাতে পুরনো পড়ে থাকা তহবিল দিয়েই প্রকল্প চালু রেখেছি।” ধনেখালির বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের খরচ না হওয়া ব্লক তহবিল থেকে স্কুলকে মিড-ডে মিল চালু রাখার জন্য টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। |