কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে আবার বেফাঁস কথা বলিয়া দল ও সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলিয়া দিয়াছেন। ভন্ডারার ধর্ষণ-কাণ্ডের শিকার তিন নাবালিকার নাম তিনি সংসদের উচ্চতর কক্ষে দাঁড়াইয়া উচ্চারণ করিয়া বসিয়াছেন। সৌজন্য, শোভনতা দাবি করে, ধর্ষিতাদের নামধাম গোপন রাখাই রাষ্ট্রের কর্তব্য। ধর্ষণের শিকার যাঁহারা, তাঁহাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখিতেই ইহা জরুরি। তদুপরি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে ধর্ষিতাদের পরিচয় প্রকাশ করিয়া দেওয়াটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সত্য, বিরোধী দল বিজেপির প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই উক্তি সংসদের কার্যবিবরণী হইতে তৎক্ষণাৎ বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যাহা হওয়ার হইয়া গিয়াছে। কংগ্রেসের তরফে বলা হইতেছে সাংসদরা সকলেই দায়িত্ববান, ধর্ষিতাদের নামধাম পাঁচ-কান করা হইতে তাঁহারা নিশ্চয়ই নিরস্ত থাকিবেন। সাংসদদের বিচক্ষণতা বা সংবেদনশীলতা লইয়া এতটা নিঃসংশয় হওয়া যায় কি না, সেই প্রশ্ন থাকুক, কিন্তু দায়িত্ববোধ কি কেবল অন্যদের থাকিতে হইবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর থাকিতে নাই? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি আকারে সংসদে যাহা পাঠ করেন, তাহার উপর আগাম চোখ বুলাইয়া লওয়ার দায়িত্বও তাঁহার। তাহার আগে অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিভিন্ন স্তরে ওই বিবৃতি খতাইয়া দেখার কথা, তাহার খুঁটিনাটি তথ্য পরীক্ষা করিয়া দেখার কথা। একটি লিখিত বিবৃতির বয়ান খসড়া করার সময় খসড়াকারীদের মনে যেমন কোনও প্রশ্ন জাগে নাই, তাহা পাঠ করিবার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও তেমনই ভ্রু কুঞ্চিত হইতে দেখা যায় নাই। ইহা কেবল বিচিত্র নহে, অকল্পনীয়।
লোকসভার গত শীতকালীন অধিবেশনে শিন্দে ২৬/১১-র খলনায়ক, লস্কর-এ-তৈবার প্রধানকে ‘শ্রীহাফিজ সইদ’ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছিলেন। ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ বিষয়ে তাঁহার বক্তব্যও দল ও সরকারকে বড় বিড়ম্বনায় ফেলিয়া দেয়। দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের প্রকারান্তরে মাওবাদীদের সহিত তুলনা করা, অসমের জাতিদাঙ্গা লইয়া সাংসদ জয়া বচ্চনের বক্তব্যকে বিদ্রুপ করিয়া ‘ইহা একটি গুরুতর বিষয়, সিনেমার গল্প নয়’ জাতীয় মন্তব্য করা, এক মাসের মধ্যে তেলেঙ্গানা সমস্যার সমাধান বিষয়ে অপরিণামদর্শী আশ্বাস দেওয়া কিংবা কয়লাখনি কেলেঙ্কারি ‘বফর্স কেলেঙ্কারির মতোই লোকে এক দিন ভুলিয়া যাইবে’ বলা সরকারকে বারংবার বিপাকে ফেলিয়াছে। এত বার এ ধরনের স্খলনের পরও যে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকেন, তাহার কারণ কি হাইকম্যান্ডের প্রতি তাঁহার অবিচল আনুগত্য? সেই অনুমান সরাইয়া রাখিলেও একটি গভীর নীতিগত প্রশ্ন উঠে। আইন ও নৈতিকতার বিচারে কাহারও কাহারও ‘বেশি সমান’ হইবার প্রশ্ন। মহিলা কমিশনের তরফে গুয়াহাটিতে ছাত্রীর প্রকাশ্য যৌন নিগ্রহের তদন্ত করিতে গিয়া নিগৃহীতার নাম প্রকাশ করিয়া ফেলার দায়ে যদি পত্রপাঠ তদন্তকারিণীকে অপসারিত করা হয়, তবে শিন্দে কেমন করিয়া পার পাইয়া যান? গণতন্ত্রের মর্যাদা কিন্তু তাহার চালকদের আত্মমর্যাদার উপর অনেকখানি নির্ভর করে। |