সম্পাদকীয় ১...
বামপন্থী দুঃখ
বামপন্থীরা আজীবন একটি দুঃখ লালন করিতেন পশ্চিমবঙ্গ নাকি কেন্দ্রীয় সরকারের দুয়োরানি। বঞ্চিত থাকাই তাহার একমাত্র নিয়তি। পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্যাকাশ হইতে বামপন্থী ঘনঘটা আপাতত মুছিয়াছে বটে, কিন্তু তাঁহাদের বহু উত্তরাধিকারের ন্যায় এই দুঃখটি লালন করিবার দায়িত্বও বর্তমান শাসককুল লইয়াছেন। বিশেষত, রাগ করিয়া ইউ পি এ ছাড়িবার পর হইতে দুঃখের তীব্রতা বাড়িয়াছে। এই বৎসর রেল বাজেট এবং সাধারণ বাজেট এই দুঃখের একটি বড় উপলক্ষ বটে। পবনকুমার বনশলের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ভাগে যৎকিঞ্চিৎ পড়িয়াছে। পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমের তালিকাও তথৈবচ। পশ্চিমবঙ্গের শাসককুল ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইয়াছেন। তাঁহারা এখন সরকারের বিরোধী, সেই কারণেই যে ‘পশ্চিমবঙ্গকে হত্যা করিবার বাজেট’ রচিত হইয়াছে, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। তাঁহাদের ক্ষোভে আর এক প্রস্ত আঁচড় কাটিয়াছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। বলিয়াছেন, কোনও একটি রাজ্যের কথা ভাবিয়া নহে, গোটা দেশের জন্যই রেল বাজেট তৈরি করা হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা যে মোক্ষম চটিবেন, সন্দেহ কী?
বাস্তব হইল, সত্যই পশ্চিমবঙ্গের ভাগে কম পড়িয়াছে। গত তিন বৎসরের রেল বাজেটের সহিত তুলনা করিলে বিসদৃশ রকম কম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত দিন রেলমন্ত্রী ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ গনিয়া শেষ করা মুশকিল হইত। পবনকুমার বনশল তাহা লইয়া কটাক্ষ করিতেও ছাড়েন নাই। বলিয়াছেন, এ কথা সত্য যে, রেল বাজেটের ৯৮ শতাংশ এই দফায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয় নাই। অন্য দৃষ্টান্তও আছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, কর্নাটক এবং রাজস্থানের জন্য প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার দ্বিতীয় দফায় অর্থ মঞ্জুর হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গ সেই তালিকাতেও নাই। কিন্তু কেন? বামপন্থীদের মানসিকতা বলিবে: কেন্দ্রের চক্রান্ত। কিন্তু প্রকৃত কারণ অন্য। ঘটনা হইল, পশ্চিমবঙ্গ যাহা পায়, তাহা ব্যবহার করিতে পারে না। গত বাজেটে নোয়াপাড়া-বারাসত ভায়া বিমানবন্দর রেল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হইয়াছিল ১০৫০ কোটি টাকা। খরচ হইয়াছে মাত্র ৬০ কোটি। টাকা খরচ করা অসম্ভব বুঝিয়া মেট্রো কর্তৃপক্ষই তাঁহাদের দাবির বারো আনাই ছাঁটিয়া ফেলিয়াছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের নীতির দৌলতে রেলের প্রকল্পেও আর জমি পাওয়ার উপায় নাই। অন্য দিকে, কর্নাটক বা রাজস্থানের ন্যায় রাজ্য রেলকে বিনামূল্যে জমি দিতে প্রস্তুত। টাকা কোথায় যাইবে, বুঝিতে সমস্যা হওয়ার কথা কি? পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্বয়ং কবুল করিয়াছেন, তাঁহারা সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করিতে এমনই ব্যস্ত ছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বরাদ্দ হইয়া আসা অর্থে রাস্তা নির্মাণ করিয়া উঠিতে পারেন নাই। টাকা ফেরত গিয়াছে। ইহাই যখন কর্মসংস্কৃতি, তখন ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-র অজুহাতের আড়ালে মুখ লুকানোই শাসকদের একমাত্র বিকল্প। সেই কাজটি তাঁহারা দক্ষতার সহিত করিতেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের শাসককুল টের পান নাই, কিন্তু দিন বদলাইতেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্যে রাজ্যের উন্নয়ন করিতে হইলেও রাজ্য সরকারকে সচেষ্ট হইতে হইবে। ঘরের কাছেই উদাহরণ উপস্থিত নীতীশ কুমার। তিনি কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়াইবার জন্য লড়াই যেমন করিয়াছেন, তেমনই সেই অর্থে যাহাতে সর্বাধিক উন্নয়ন সম্ভব হয়, তাহাও নিশ্চিত করিয়াছেন। তাঁহার মডেলটিই ভবিষ্যতের পথ হইবে। রাজ্য সরকার নিশ্চেষ্ট থাকিলে কেন্দ্রও হাত গুটাইয়া লইবে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যেমন হইয়াছে। অর্থমন্ত্রী তাঁহার বাজেটে বলিয়াছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প এবং কেন্দ্রের সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পের টাকা অতঃপর যোজনা খাতে রাজ্য সরকারের হাতে তুলিয়া দেওয়া হইবে এবং প্রতি দুই বৎসর অন্তর প্রকল্পগুলির পর্যালোচনা করা হইবে। রাজ্য সরকারকেও প্রকল্পের আংশিক খরচ বহন করিতে হইবে, সেই সম্ভাবনাও উড়াইয়া দেওয়া যায় না। অর্থাৎ, উন্নয়ন কর্মসূচিতে রাজ্যের ভূমিকা বাড়িতেছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসকরা নূতন খেলার নিয়মটি শিখিয়া লইবেন, না কি অন্য নানা ক্ষেত্রে যেমন বামফ্রন্টের পদাঙ্ক অনুসরণ করিতেছেন, এ বিষয়েও তেমনই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বামপন্থী কাঁদুনি আঁকড়াইয়া থাকিবেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.