অধ্যাপক প্রণব বর্ধন ভূমি সংস্কার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘পাট্টা দেওয়ার ফলে সে ভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়েনি। কারণ যে জমি তেমন উর্বর নয়, উৎপাদনশীলতা কম, তেমন জমিই সাধারণত পাট্টার মাধ্যমে বণ্টন করা হয়’। (‘ছোট চাষিদের নিজস্ব সংহতি দরকার’, ১৫-১) নমুনা সমীক্ষায় তিনি যা জেনেছেন, আমরা বাস্তব অভিজ্ঞতায় সেটাই প্রত্যক্ষ করেছি। পার্টির নেতা ও সরাসরি আমলাদের সঙ্গে সাঁট করে জোতদাররা তাদের জোতের উচ্ছিষ্ট অংশই উগরে দিয়েছে, ভূমিহীনদের সেটাই গিলতে হয়েছে। কিন্তু ‘বর্গার মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীলতা বেড়েছে’ তাঁর এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা মিলছে না। তাঁর যুক্তি, যে-বর্গাদার বর্গা নথিভুক্ত হওয়ার ফলে পাকাপাকি চাষের অধিকার পেয়েছেন, তিনি নিশ্চিন্ত হলেন যে, পরের বছরও ওই জমিতে তিনিই চাষ করবেন। ফলে, তিনি নিজের জমিতে বিনিয়োগ করবেন। তাতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
অধ্যাপক অশোক রুদ্র তাঁর ‘ভারতের কৃষি রাজনীতি’ গ্রন্থে সত্তরের দশকে অধ্যাপক বর্ধনের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লিখছেন, ‘নিজ স্বত্বের জমি কৃষক যতটা ভাল ভাবে চাষ করে, ভাগে নেওয়া জমির চাষ তার চেয়ে কম যত্ন নিয়ে করেএই বক্তব্যের সপক্ষে তেমন কোনও সাক্ষ্যই পাওয়া যায়নি’।
আমরা অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ‘পরের বছরও ওই জমিতে তিনিই চাষ করবেন’ এই নিশ্চয়তাই বরং অনেক ক্ষেত্রে চাষির সক্রিয়তা তথা জমির উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার কারণ হয়েছে। দ্বিতীয়, যদি ধরেও নিই যে বর্গাদারই কার্যত তাঁর নামে নথিভুক্ত জমির মালিক হয়ে গিয়েছিলেন, সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন, তাঁদের বিনিয়োগের মতো যথেষ্ট সংগতি ছিল কি? তা না থাকলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে কী ভাবে? বাস্তবে বাড়েওনি। তাই বর্গাদারদের পরিণাম পাট্টাদারদের মতোই বা তার চেয়েও শোচনীয় হয়েছে। রাজ্য সরকারের ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০০৪’ জানাচ্ছে, ‘পাট্টাদারদের মধ্যে ক্রমাগত উদ্বৃত্ত জমি বণ্টন করা সত্ত্বেও গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে ভূমিহীনতার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে, জমির অধিকার হারানো পাট্টাদারদের শতকরা হার ১৩.২৩ এবং উচ্ছেদ হওয়া বর্গাদারদের শতকরা হার ১৪.৩৭। জাতীয় নমুনা সমীক্ষার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, পঃবঙ্গে ভূমিহীন গ্রামীণ পরিবারের শতকরা হার ১৯৮৭-’৮৮ সালে ৩৯.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৯৩-’৯৪ সালে হয়েছে ৪১.৬ শতাংশ। আর ১৯৯৯-’২০০০ সালের হিসেবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৮ শতাংশ। তুলনায় সমস্ত গ্রামীণ ভারতে ওই হার ৪১ শতাংশ।
বর্ধন সাহেব বর্গার অন্তর্ভুক্ত নয় এমন জমিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকেও ভূমি সংস্কারের ফল বলেছেন। আমার মতে এই বৃদ্ধির কারণ বিলম্বিত সবুজ বিপ্লব। সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনের জেরে জোতদার ও সম্পন্ন চাষিরা চাষে মনোনিবেশ করতে পারেননি। ’৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার আসার পর তাঁরা সরেস জমিগুলি বাঁচানোর জন্য চাষিদের সঙ্গে রফা করে নেন। কৃষির ক্ষেত্রে সুস্থিতি আসে। শুরু হয় বিলম্বিত সবুজ বিপ্লব। এর ফলেই উৎপাদন বেড়েছিল দ্রুত হারে।
বর্ধন সাহেব ঠিকই বলেছেন, ‘বর্তমান অবস্থায় ক্ষুদ্র জমিতে খেতের মাটি থেকে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না। এই মানুষগুলির কথা ভাবতে হবে।’ কিন্তু এই মানুষগুলির কথা ভাবতে গিয়ে তিনি কৃষি উপকরণ ও শস্য বিপণনে চাষিদের ‘আনন্দ’র মতো সমবায় পদ্ধতিতে সংহত হওয়ার কথা বলেছেন। এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জোতার সামিল। চাষিদের অসংহতির মূলে আছে জমির মাপের আইলগুলি। ওই চিনের প্রাচীরগুলি ভেঙে ছোটবড় সব চাষি যদি খামার প্রথায় চাষ করতে পারেন, তা হলে রাতারাতি বিশ শতাংশ জমি মুক্ত হবে। কৃষিতে পুঁজি বিনিয়োগ বাড়বে, উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ হবে। কিন্তু জমিগুলিকে সংহত করার আওয়াজ তুলতে গেলে স্বীকার করতে হয় ভূমি সংস্কারের ভুল। বামেদের পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ভূমি সংস্কারের অতিকল্পের জোয়াল টানার কোনও দায় নেই। তিনিই পারেন খামার ব্যবস্থায় চাষের আওয়াজ তুলতে।
দীনবন্ধু সামন্ত। কলকাতা-৬৪
|
রামচন্দ্র গুহ বলেছেন, ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে সি পি এম হাতে ধরে নষ্ট করে ফেলল।’ (‘দশ বছর পর কেউ মোদীর নাম উল্লেখ করবে না’, অমিতাভ গুপ্ত, ৫-২) ভারতে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ফাইভ স্টার পেয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দুটো বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কলকাতা ও যাদবপুর। এই ‘ফাইভ স্টার’ পাওয়ার সময়কাল হল বামফ্রন্টের আমলে। এই ফাইভ স্টার দেওয়া হয় ন্যাক-এর তরফে। যেটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান। অধ্যাপক গুহ জানেন কি?
সঞ্জয় চৌধুরী। ইন্দা, খড়্গপুর
|
রামচন্দ্র গুহ নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে বলেছেন, ‘সারবত্তাহীন’; বলেছেন, ‘দশ বছর পরে কেউ মোদীর নাম উল্লেখ করবে না’। আবার, তিনি সাধারণ ভাবে বলেছেন, ‘সবাই চটজলদি কথা বলতে ব্যস্ত’। মনে হয়, এই দোষ থেকে শ্রীগুহও মুক্ত নন।
জ্যোতিষী নই, সে রকম দূরদৃষ্টিও নেই। দশ বছর পর কে কার নাম উল্লেখ করবে, বলতে পারি না। কিন্তু যেটা এই মুহূর্তে উল্লেখ করা যেতে পারে, তা হল ‘সারবত্তাহীন’ মোদীর নেতৃত্বেই বিজেপি তিন বার গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। ২০০২ বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করেছিলেন মোদী। সগর্ব নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দাও তাঁর এই আহ্বানে গুজরাতবাসী বিপুল ভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। যার ফলে ১৮২টি আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ১২৭টি আসন পায়।
উজ্জ্বলকুমার মণ্ডল। শেওড়াফুলি, হুগলি
|
অভিরূপ সরকার লিখেছেন, ‘...এর মানে কিন্তু এই নয় যে, কয়েক বছরের মধ্যেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আসলে সমস্যার পরিধি বিরাট। বিশেষত এই কারণে যে, শুরুটা হয়েছে পিছিয়ে থেকে। কাজ অনেক প্রত্যেক স্কুলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া... এর জন্য সময় লাগবে।’ (‘আমরা শুরু করেছি অনেক পিছিয়ে থেকে’, ২৬-২)
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু আজ থেকে প্রায় দশ মাস আগেই বলে দিয়েছেন, নব্বই শতাংশ কাজ এই সরকার করে ফেলেছে। অভিরূপবাবুর এই মন্তব্যে নেত্রী আবার কুপিত হবেন না তো?
প্রণব রাহা। দুর্গাপুর-৪
|
দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মতো পুলিশ বিভাগের স্বাধীনতারও বিশেষ প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়।
গৌরীপদ ভট্টাচার্য। কলকাতা-৪৫ |