জাঠায় ছায়ায়-কায়ায় পিল্লাই, প্রশ্ন সিপিএমেই
লালকৃষ্ণ আডবাণীর ছিল রামচন্দ্র। প্রকাশ কারাটের আছেন রামচন্দ্রন!
এক জন অবতার। এক জন কমিউনিস্ট! দুই দশকে দু’জনের ছবিই রথ-বাহিত হয়ে পরিক্রমায় বেরিয়েছে! বিজেপি-র রামচন্দ্রকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না। সিপিএমের রামচন্দ্রনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলেই! কারণ, তিনি কমিউনিস্ট!
কারাটদের পরিকল্পনায় যে ‘সংগ্রাম বার্তা জাঠা’ ভারত পরিক্রমায় বেরিয়েছে, দক্ষিণ ভারতে তার রশি রয়েছে পলিটব্যুরোর সদস্য এস রামচন্দ্রন পিল্লাইয়ের (দলে পরিচিত নাম এসআরপি) হাতে। দক্ষিণে সেই জাঠার ট্যাবলোয় নিজেরই ছবি নিয়ে ঘুরছেন ৭৫ বছরের মালয়ালি নেতা! সামনে ট্যাবলোর মাথায় তাঁর হাসি মুখ, পাশেও তিনি! যা দেখে প্রশ্ন তুলছেন সতীর্থ কমরেডরা। সর্বভারতীয় এক নেতার কথায়, “সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট নিজেই পূর্বাঞ্চলীয় জাঠার নেতৃত্বে। কই তাঁর তো নিজের ছবি জাঠায় নেই? পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর ছবিও নেই। থাকার কথাও নয়। কমিউনিস্ট পার্টি তো নেতার ছবি নিয়ে চলে না!”
সিপিএমের জাঠা।—নিজস্ব চিত্র
সিপিএমের মধ্যে এখন অত্যন্ত প্রচলিত চর্চা হল, তিন বারের মেয়াদ ফুরোলে কারাটের হাত থেকে দলের ব্যাটন চলে যাবে এসআরপি-রই হাতে। ইতিমধ্যেই পলিটব্যুরোর আওতায় পৃথক সাংগঠনিক শাখা খুলে তার মাথায় এসআরপি-কেই বসিয়েছেন কারাট। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশই প্রশ্ন তুলছেন, অদূর ভবিষ্যতে তাঁর অভিষেকের আরও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিতেই কি এসআরপি-কে এ ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে জাঠার মধ্যেও? নিজে এ সবের মধ্যে না ঢুকেও নীরবে প্রশ্রয় দিচ্ছেন কারাট? প্রসঙ্গত, দক্ষিণের জাঠার সূচনা করে কন্যাকুমারীতে এসআরপি-র হাতে পতাকা তুলে দিয়ে এসেছিলেন কারাটই। দলের বড় অংশের ধারণা, কাকতালীয় হলেও ঘটনাটা বেশ প্রতীকী বৈকি!
তামিলনাড়ু, কেরল হয়ে রবিবার অষ্টম দিনে দক্ষিণী জাঠা ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরম জেলায়। দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে অবশ্য কাট-আউট সংস্কৃতির বিশেষ চল আছে। এসআরপি-র ছবিও সেই সংস্কৃতির অঙ্গ বলেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলের আর এক অংশ পাল্টা প্রশ্ন তুলছে, “কেরলে ২০১১-র বিধানসভা ভোটে এলডিএফের প্রায় সব প্রার্থী ভি এস অচ্যুতানন্দনের ছবি নিয়ে ভোটের প্রচার করেছিলেন। সিপিএমে সচরাচর এই রকম হয় না। কিন্তু ভি এসের জনপ্রিয়তার জন্যই ওই ঘটনা ঘটেছিল। জাঠাতেও ভি এসের ছবি থাকলে না হয় হত! যাঁর ছবি আছে, তিনি কি ওই রকম জননেতা?” ঘটনাচক্রে, কেরলের আট্টিঙ্গালে এসআরপি-র জাঠাকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন ভি এস।
উত্তর কলকাতায় গত লোকসভা ভোটের প্রচারে মহম্মদ সেলিমের ছবি-সহ কিছু হোর্ডিং পড়েছিল বলে দলে কথা উঠেছিল। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর নির্দেশে সে সব হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়। সেই উদাহরণ ব্যবহার করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, “পি এস সুন্দরাইয়ার শতবর্ষে তাঁর ছবি রাখা যেত। নরেন্দ্র মোদী যে কিছু দিন আগে বিকাশ যাত্রা করলেন, সেটাও বিবেকানন্দের ছবি নিয়ে। নিজের ছবি নিয়ে নিজেরই জাঠা, ভাবতে কেমন লাগে!” এমনিতে বিজেপি-র রথযাত্রার সঙ্গে জাঠার তুলনায় ঘোর আপত্তি আছে সিপিএমের! বিমানবাবুর যেমন ব্যাখ্যা, আডবাণীদের রথ বিভেদ ঘটিয়েছিল। তাঁদের জাঠা সম্প্রীতি মেলাতে বেরিয়েছে। কিন্তু ছবি-তর্কে বিজেপি-র তুলনা সেই এসেই পড়ছে!
পলিটব্যুরোর দক্ষিণ ভারতীয় সদস্যেরা প্রায় সকলে সাধ্যমতো সঙ্গত করছেন এসআরপি-র সঙ্গে। জাঠায় ব্যস্ত থাকায় এসআরপি-র বক্তব্য জানা যায়নি। তবে পলিটব্যুরোয় তাঁর সতীর্থ এম এ বেবি বলছেন, “এসআরপি-র ছবি আছে ঠিকই। কিন্তু কোথাও কোথাও আমার ছবিও দেওয়া হয়েছে! কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য ওয়াই শ্রীনিবাস রাও এবং সুধা সুন্দররামনের ছবিও আছে। থাকলে ক্ষতি কী? আসল কথা হল আমাদের দাবির স্লোগান। সেগুলোও তো লেখা আছে।”
অতএব জয় রামচন্দ্রন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.