সব উড়ালপুলের হাল দেখার পরামর্শ
ড়বাজার থেকে হাওড়ার দিকে কিছুটা এগোতেই বাঁকটা তীক্ষ্ন। কংক্রিট-লোহার কাঠামোর রেলিং দুমড়ে-মুচড়ে রয়েছে সেখানেই। অনেক পুরনো সেই ক্ষতচিহ্ন। মেরামতির বালাই নেই। মধ্য কলকাতার সঙ্গে হাওড়া সেতুর অন্যতম ‘যোগসূত্র’ ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলের বেহাল দশার ছবিটা এমনই।
গোটা উড়ালপুলেই অযত্নের চিহ্ন ছড়িয়ে। কলকাতার বেশ কয়েকটি সেতু, উড়ালপুল নীল-সাদায় ঢাকলেও, রঙের প্রলেপ পড়েনি ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলে। চেহারাটাই ভাঙাচোরা। তার উপরে ওই তীক্ষ্ন বাঁক। চালু হওয়ার দু’বছরের মধ্যেই রবিবার ভোরে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের খসে পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে ওই বাঁককেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। আবার ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল ৪০ বছরেরও বেশি পুরনো। উড়ালপুলের এ দিক-ও দিকে ফাটলও রয়েছে বেশ কয়েকটা। হাওড়ার দিক থেকে উড়ালপুল ধরে শহরে ঢোকার রাস্তার নীচে কংক্রিটের স্তম্ভেও চিড়। উড়ালপুলের এই হালের ব্যাখ্যা মিলল রাজ্যের প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর কথায়, “৩০ বছরের পর থেকে কংক্রিটের নির্মাণে ক্ষয় শুরু হয়। সেই জায়গায় ব্রেবোর্ন রোডের এই উড়ালপুল সাতের দশকের একেবারে শুরুতে চালু হয়েছিল।”
এমনই হাল ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলের। রবিবার। ছবি: রাজীব বসু
রবিবার ভোরে উল্টোডাঙার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শহরের সমস্ত উড়ালপুল, বিশেষত যেগুলিতে বাঁক রয়েছে, সেগুলি অবিলম্বে পরিদর্শন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। আর তাঁদের মতে, সেই তালিকায় এক নম্বরে এই ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল, তার বয়সের ভারের জন্য। যদিও শহরে তীক্ষ্ন বাঁকের বিচারে তার চেয়ে এগিয়ে চিংড়িহাটার উড়ালপুলটি। ই এম বাইপাস থেকে যেটি উঠে নেমে গিয়েছে সল্টলেকে, নিকো পার্কের দিকে। তীক্ষ্ন বাঁকের একই সমস্যা ভিআইপি রোড ও নিউ টাউনের সংযোগকারী উড়ালপুলে। অতটা তীক্ষ্ন না-হলেও বেশ কিছুটা বাঁক আছে লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলেও। লেক গার্ডেন্সের ওই উড়ালপুলটির নির্মাতা সংস্থা আবার সেই ম্যাকিনটোশ বার্ন, যারা উল্টোডাঙার উড়ালপুলটি তৈরি করেছিল।
শহরের বিভিন্ন উড়ালপুল বর্তমানে কী অবস্থায় আছে, এ দিনের ঘটনার পরে তা জানতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুলিশও। তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার কাছে এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই জানতে চাওয়া হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “সংস্থাগুলি কী তথ্য দেয়, আমরা তার অপেক্ষায় আছি। সেই মতো বিভিন্ন উড়ালপুলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ হবে।”
ভেঙে পড়া সেতুর অবস্থা খুঁটিয়ে দেখছেন পরিদর্শকেরা। রবিবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর গোকুল মণ্ডল বলেন, “উল্টোডাঙার ঘটনার পরে শহরের প্রতিটি উড়ালপুলের মূল নকশা নতুন করে খুঁটিয়ে দেখা এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। বিশেষত যে-সব উড়ালপুলে তীক্ষ্ন বাঁক আছে, সেগুলির ক্ষেত্রে এই কাজ জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, উল্টোডাঙায় ঘটনাটি ভোরে ঘটায় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে। কাজের দিনে, ব্যস্ত সময়ে হলে অনেক মানুষের জীবনহানি হতে পারত। তাই, কোনও ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই নেই। যে উড়ালপুলের দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষেত্রেই সমস্যা রয়েছে, অর্থাৎ গোড়াতেই গলদ থেকে গিয়েছে, সেটি কী করে ওজন অর্থাৎ গাড়ির চাপ বইবে?”
গোকুলবাবুর মতে, “উল্টোডাঙার দুর্ঘটনার ছবি দেখে ও খবর নিয়ে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণ নয়, উড়ালপুলের নকশাগত ত্রুটিই এর জন্য মূলত দায়ী। সে জন্যই শহরের প্রতিটি উড়ালপুলের নকশা নতুন ভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যে উড়ালপুলের ক্ষেত্রে কাভর্র্ড বিম-ইন প্ল্যান অর্থাৎ বাঁক রয়েছে, তার নকশা তৈরির সময়ে বিশেষ ধরনের মুন্সিয়ানা ও বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। অনেক সময়েই তাতে ত্রুটি থেকে যায়। তাই, নকশাগুলি আবার বার করে দেখতে হবে।” প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, “রবিবার যা হল, তার পরে শহরের প্রতিটি উড়ালপুলে অবিলম্বে পরিদর্শনের কাজ শুরু হওয়া প্রয়োজন। উল্টোডাঙার ওই উড়ালপুলের সঙ্কট এত তাড়াতাড়ি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নিশ্চয়ই ওই উড়ালপুলের পরিকল্পনা ও নির্মাণগত কোনও দুর্বলতা গোড়া থেকেই ছিল। ওই উড়ালপুলের তীক্ষ্ন বাঁকই মূলত দায়ী বলে মনে হচ্ছে। তাই, এ রকম বাঁক যে সব উড়ালপুল ও সেতুর রয়েছে, প্রতিটিতেই এখন জরুরি ভিত্তিতে পরিদর্শন হওয়া প্রয়োজন। সবার আগে দরকার ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল পরিদর্শন।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.