রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৩...
ল্যাজে পা
ই সময়ে, যখন বিপ্লবের ভরসাপূর্তিতে মিশর বুঝে ওঠে না উৎসব করবে, না শ্রাদ্ধ, শাহবাগ বুঝতে পারে না মৌলবাদীদের হাতে গুম হবেন কত জন রাজীব হায়দার, মোটমাট ফ্রম রাশিয়া টু এশিয়া, ইপিএল টু আই-লিগ বেবাক বিশ্ব ফুটফুটন্তি; ঠিক তখনই ডিপ্রেস্ড মানবজাতির মাথায় সপাট চাঁটি মেরে, অর্থনীতিবিদ ও গণিতজ্ঞদের ধাঁ করে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য তথা পুলিশ তথা স্বরাষ্ট্র তথা ব্লা তথা ব্লো মন্ত্রীর নবতম থিয়োরি ‘উৎসব করব না তো কি শ্রাদ্ধ করব...আরে এটাও তো একটা শিল্প না কি?’ আলবাত। পরের বছর থেকে অঙ্ক বইতে নয়া ফর্মুলা: লিমিট উৎসব টেন্ডস টু ইনফিনিটি= শিল্প= কর্মসংস্থান। দমদমে খুন? খাদ্যমেলা। এ জি বি উধাও? বেঙ্গল লিড্স (শিল্পও একটা উৎসব আর কী)। পাহাড়ে রাগ-ফুলকি? বারাসতে অশ্লীলতা? লাগাও উৎসব। ওয়েদার গ্লুমি হোক, খটখট, কনকন দ্য উৎসব মাস্ট গো অন। ফির্সে, এই উৎসবময় বাংলায়, যখন দলীয় সভা কাম সরকারি অনুষ্ঠান কাম শিলান্যাস কাম জলসা চলছে ফুল অন, ফিলিম ফেস্টিভাল হয়ে গিয়েছে আধসেদ্ধ আঁতেল থেকে সর্বজ্ঞানী সাধাওনের, বইমেলা চার দিন এক্সেস, খুচখাচ রেপারেপি নিয়ে বিরোধীদের চিলচিৎকার আমল না দিয়ে রাজ্য তরতরাচ্ছে (প্রায় সব সাবজেক্টে সেকেন্ড), তিন ঘণ্টায় গণ-জমায়েতকে যুগপৎ আপটু ডেট ও এডুকেট করছেন মুখ্যমন্ত্রী, অর্থাৎ মোটের উপর আরাবুলের আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়া ছাড়া কোনও খারাপ খবর আলিপুরের কাছে নেই; ঠিক তখনই ঢিসুম। পতন। মূর্ছা। সরি। মূর্ছা নয়, মৃত্যু। মানুষ করে পুলিশ শিকার!
বলি তাতে হলটা কী হ্যাঁ? অ্যাদ্দিন ধরে তো পুলিশ এই কাণ্ডই করল, যথাতথা গুলি ছুড়ে এনকাউন্টারে মানুষ কোতল, তা একটু স্বাদ বদলাব না? বাচ্চা মানুষ, ভুল করেছে। টোটাল নন-ইস্যু। মন্ত্রীস্য শাগরেদ, শাগরেদস্য ভাইপো, ভাইপোস্য বন্দুক, বন্দুকস্য গুলি। সেই গুলির রাস্তা আটকাবে পুলিশ? কোন পুলিশ? যে কিনা ইয়ের দেওয়া মাইনেতে সংসার চালায়, ইয়ের মারা লাথিতে পায়ের ধুলো খুঁজে, ইয়ের শেখানো সাজানো তত্ত্ব বুঝে ও মুখ বুজে প্রেস মিট করে, নচেৎ পোস্টিং পায় ন্যাড়াখাঁখাঁবেলতলায়, সেই পুলিশ? ছোঃ। কী বললি? ইকবাল? জানিস ও কে? খিদিরপুরের ক্যাপ্টেন কুল। ভয়াবহ হাঙ্গামা প্ল্যানপূর্বক বাধিয়ে আধ ঘণ্টার গ্যাপে প্রেসকে ণত্বষত্ব বাইট দিতে পারবি তোরা? আর এত কথা কেন? ওরা কি বিনোদ মেহতাকে চুমু খেয়েছিল? ক্ষতিপূরণ তো দেওয়া হচ্ছেই। ফোট্ এ বার।
এ বার বল মিডিয়ার কোর্টে। রবীন্দ্রগান ক্র্যাক করার চাইতে ঢের টাফ খুন-ধর্ষণ জাস্টিফাই করা। কিন্তু বাওয়া, সে ব্যাপারে মিডিয়ামস্তিষ্ক আলোকস্পিডে ক্রিয়াশীল। আপনি কিচ্ছুটি বলার বা বোঝার আগেই আপেক্ষিকের আপেল কামড়ে প্যানেল বসবে। অ্যাঙ্করের প্যাঁ, বুদ্ধিজীবীর পোঁ, দরদির ভ্যাঁ, বিরোধীর ভো।ঁ আর বাই চান্স বেগতিক দেখলেই পরবর্তী বাক্য হতেই হবে ‘বিগত চৌত্রিশ বছরে বাংলায়...’। নেহ্, এ বার কাউন্টার কর।
ঝোপের আড়াল থেকে নিন্দুক বলে, ‘কিন্তু শুনেছিলাম এ জমানায় রাজনীতিমুক্ত হবে শিক্ষাঙ্গন...’। হাহা, হোহোহোহো। শিক্ষা, তার আবার অঙ্গন। তাও নাকি মুক্ত ফ্রম রাজনীতি। আর তুই কানা নাকি বে? গুলিটা তো কলেজের বাইরে চলেছে, ভিতরে তো না। প্লাস কলেজে রাজনীতি না থাকলে আমরা আমরা হতাম না কি? ওরাও ওরা হত না। অতএব বাছাই করা টপ ব্রেন যত্রতত্র না ছড়িয়ে বাছাই করা কলেজে আটকে রাখো। সে সব জায়গায় ইচ্ছামত নির্বাচন বন্ধ করো, পিছিয়ে দাও, সময় বুঝে প্রোমোট করো অরাজনীতি। কিন্তু অন্যত্র? সেগুলো তো ক্যাডারখানা। মাঝেমধ্যে অধ্যক্ষের গাল টিপে দেওয়াটা আমাদের মৌলিক ও অবশ্যপালনীয় কর্তব্য বটে। জলের জগ ছোড়াটাকে কার্টসি বলে রে। হুঁঃ, আর কোন মূর্খ কলেজ যায় শিক্ষা পারপাসে, অ্যাঁ? ওর জন্যে ব্রিগেড এনাফ। কলেজ মানে ইলেকশন। ফেস্ট ফ্রেশার্স ফেয়ারওয়েল। এবং পার্টি দিবস। আর সেখানে কিন্তু ইয়ে মাস্ট। লাচ মেরি বুলবুল তো পইসা মিলেগা। কলেজে কলেজে টক্কর ‘র’ কলেজ ইয়ে খুললে ‘ড়’ কলেজ উয়ো নামায়। কয়েকটা মিডিয়া আছে বটে, মোক্ষম স্ফূর্তি-সেকেন্ডে কোনও দুর্বোধ্য অ্যাঙ্গল থেকে ভিডিয়ো-ফিডিয়ো তোলে। যাকগে, ওরা তো মোটে দুই। বাকি সব করে রব আমাদের ফরে।
কয়েক বছর আগেও সুভাষ শুনলে ফঃ বঃ ভাবত বোস আর পঃ বঃ বুঝত চক্রবর্তী। এখন অন্য ছবি। ববি। না না, এক কামরায় বন্ধ হওয়ার স্বপ্ন বুদবুদালে, শুধরে যান প্লিজ। ইনি রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। রাজকুমার হিরানিরও। ‘মুন্নার উপরে বিশ্বাস হারানো পাপ।’ অবশ্য সমস্যাটা ববি অর নট-ববি গোত্রের নয়। এ এক এমন বিপদসঙ্কুল জোন, যেথায় মানবাধিকার দিবসে খুব খানিক অরওয়েল নামিয়ে, শাসককে রুষ্ট করে, দর্শককে মুগ্ধ করে, বছর কয়েকের মধ্যে ফিল্ডে নামতে হয় ধর্ষণের প্রেক্ষিত নিয়ে জ্ঞান দিতে। তখন যিনি সহযোদ্ধা ছিলেন, এখন যদি স্লাইট বিরোধিতার আভাস, ব্যস। তাঁর নির্বিষতম নাটকের ওপর ট্যাক্টিকাল খাঁড়া, যাতে টেকনিকালি কিস্সু প্রমাণ করা না যায়। শিয়োরলি, এটাও চৌত্রিশ বছরের আমদানি। তা বাপ নতুনটা কী রইল? কেন? ক্ষতিপূরণ। ঋণের দায়ে জাঙিয়া জোটে না, তবু উদারনেসটা দ্যাখ, ধর্ষণ টু চোলাই, বন্ধ-খরা-ধোলাই, ক্ষতিপূরণ জেনো হেথা সতত বিরাজে। আরও আছে। ছবি বিক্রি করে ভোট-ফান্ড। সিগনালে রবি-গান। হোমগার্ডের লেফ্ট-রাইট। আর অবশ্যই ভূগোল। ‘বেঙ্গল ইজ দ্য বর্ডার অফ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইজ দ্য বর্ডার অব পাকিস্তান।’ ভাবতে অবাক লাগে, স্টেট স্পনসর্ড লাফটার শো থাকতে লোকে দাবাংমুখী?
আসলে সব ঠিকই আছে। পিপুল সেই নায়কই পায়, ঠিক যেমন তারা চায়। ভাল ইংরেজি জানলে, গোটা একটা বাক্য নির্ভুল বললে, সম্মানকে সন্মান না বললে ভোটাররা কানেক্ট করতে পারবে না। পুলিশ তো আর পার্টির চেয়ে বড় নয়, তাই সরকারি ফ্রাস্ট্রেশন বর্তায় পুলিশের ওপরেই। পুলিশেরও ফ্রাস্ট্রেটেড লাগে। তা উগরে দেওয়ার জন্য জনতা আছে। আর জনতার যৌনতা ছাড়া কোনও বিষয়েই ফ্রাস্ট্রেশন নেই। তাই প্রকাশ্যে খুন দেখলে কেটে পড়ো, প্রকাশ্যে চুমু দেখলে ফেটে পড়ো হাসিতে বা ক্ষোভে, হোয়াটেভার। মাঝে মাঝে বাই উঠলে ব্যাড আর ব্যাডারকে পাল্টাপাল্টি করে দাও। অঙ্ক কিচ্ছু কঠিন নয়। পরিবর্তন মানে হকিস্টিকের বদলে বন্দুক। শর্টার, শার্পার, স্মার্টার।
কোনও ফোকলা দুপুরে ৩৪টা হাই তুলে ও ৩৫ বার আড়মোড়া ভেঙে যদি ভাবুক-ভাবুক মুড আসে, যদি মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলো, যখন নন্দীগ্রামে পুলিশ কড়কাচ্ছে, নন্দনে বুদ্ধবাবু লোরকাচ্ছে আর প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে প্রিয় লেখক-নায়ক-গায়ক-নাট্যকাররা কেমন একটা মনখারাপ হয়ে যায়। বুঝে গেছি, হাতকাটা দিলীপ বা বড়-মেজ পকাইদের মতোই এঁরা স্রেফ সময় বুঝে পকেট বদলেছেন। কী জানেন, নন্দীগ্রাম থেকে গার্ডেনরিচ সব ঘটনার পেট চিরলে পড়ে থাকে ঘষা কাচের দেওয়াল, তার ভিতরে কিছু প্রাণী। আমরা গাধার দল তো, তাই ক্ষীণ দৃষ্টিতে বুঝতে পারি না ওরা মানুষ নাকি শুয়োর। গুলিয়ে যায়। হ্যাঁ? কী বলছেন? কী আছে আমাদের? সার সার লাশ, বেওয়ারিশ লাশে ভরা ভূশণ্ডীর মাঠে আপনি দাঁড়িয়ে। সেখানে কী-ই বা থাকতে পারে?
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার অ্যানিমাল ফার্ম...


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.