মোহনবাগান ৩ (সাবিথ ২, আইবর)
মহমেডান ০ |
ওডাফা ওকোলির ছায়া থেকে বেরিয়েও বেরোতে পারল না মোহনবাগান।
বাগানে ফুল ফুটছে অথচ স্কোরলাইনে চার কোটির দুই মহাতারকা—ওডাফা এবং টোলগে ওজবের নাম নেই, এটা সাম্প্রতিক কালে অঘটন হিসাবে ধরা হচ্ছে।
শনিবার কল্যাণীতে সেটা ঘটালেন এক কেরলিয়ান যুবক— চরাচ্চর সত্যেন সাবিথ। জেদি, নাছোড় মনোভাবের ছেলেটি দেখালেন, সুযোগ পেলে কী ভাবে সেটা কাজে লাগাতে হয়। রক্তাক্ত হয়েও দু’টি গোল করলেন। অথচ এর পরেও ম্যাচের পর বিপক্ষ কোচের প্রশংসা জুটল না! “সাবিথ গোল করেছে ঠিক। কিন্তু ওডাফাই তো সব। ও-ই তো আমাদের রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টি করল। সাবিথ সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে,” বলে দিলেন মহমেডান কোচ সঞ্জয় সেন।
হোক না একটা গোল অধিনায়কের পাস থেকে। কিন্তু তাতেও জোড়া গোল করে পার্শ্বনায়ক সাবিথ! কেমন লাগছে ব্যাপারটা? ম্যাচের শেষে কপালে সেলাই নিয়ে ফেরা সাবিথ গোল করার পরই ওডাফাকে এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন। বলে দিলেন, “সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেও গোল করব।” খুব আস্তে আস্তে কথা বলেন উটির পুলিশকর্মী সত্যেনের ছেলে। “জানেন, বাবা এখনও নিলগিরি পুলিশের হয়ে ফুটবল খেলেন। বাবা-ই আমার আদর্শ। ওঁকেই গোল দুটি উৎসর্গ করছি,” এমন ভাবে বললেন, যেন বুক থেকে পাথর নেমে গিয়েছে। মহাতারকাদের জন্য টিমে নিয়মিত জায়গা হয় না। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে বসে পায়ে মরচে পড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা তো থাকবেই। তার উদ্গীরণ হওয়াও স্বাভাবিক। বিশেষ করে যদি সেটা হয় বড় ম্যাচের মঞ্চ। হোক না মহমেডান এখন ‘দুর্বল’, আইএফএর খাতায় তো এটা বড় ম্যাচই।
প্রথম কুড়ি মিনিট চাপে পড়ে যাওয়া করিম ব্রিগেডকে গোলের অক্সিজেন দিয়ে সাবিথ বাঁচিয়েছেন ঠিক। কিন্তু তিনটি গোলের দু’টির পিছনেই যে ওডাফার অবদান। বাগান অধিনায়কের ছেলে স্ট্যানলি আগের দিনই বাবার কাছে পাঁচ গোলের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ছোট্ট স্ট্যানলির জানা ছিল না বাবার শারীরিক অবস্থার কথা। জ্বর, তাই ওষুধ খেয়ে মাঠে নেমেছিলেন ওডাফা। পা ঠিকমতো চলছে না। বল না পেয়ে বিরক্ত হচ্ছেন। তিনি বল পেলেই স্বাভাবিক নিয়মে ঘিরে ধরছেন তিন-চার জন। কিন্তু তাতেই কী দাপট! তাঁর শট পোস্টে লাগল। মহমেডান রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করার ব্যবস্থা করে গেলেন নিরন্তর।
মোহনবাগানের দুঃসময় চলছে। কিন্তু তার মধ্যেই টানা দশ ম্যাচ অপরাজিত থেকে গেলেন করিম বেঞ্চারিফা। দুই ‘ম’— মরক্কো এবং মোহনবাগান রসায়ন যে কতটা কার্যকর তা প্রমাণ হয়েছে আগেই। বাগানে প্রথম ইনিংসে টানা দশ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ছিল করিমের। |
জোড়া গোলের নতুন নায়ক সাবিথকে অভিনন্দন ওডাফার। কল্যাণীতে শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার |
এ বার আশঙ্কার বাজারেও কলকাতা লিগের খেতাবি লড়াইয়ে প্রবল ভাবে টিকে রইলেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সোজা পথ—প্রয়াগ এবং ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে হবে। যা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। আর এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য এ দিনের ম্যাচটা জেতা জরুরি ছিল। নিখুঁত ট্যাকটিক্স আর ধৈর্যের ফল পেলেন করিম। টেক্কা দিয়ে গেলেন সঞ্জয় সেনকে।
দিনদু’য়েক হল মহমেডানের দায়িত্ব নিয়েছেন চেতলার সঞ্জয়। এখনও গুছিয়ে উঠতে পারেননি। তা সত্ত্বেও অসীম-আলফ্রেজদের দিয়ে পারম্যুটেশন-কম্বিনেশন করে একটা চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁর লড়াই থেমে গেল গোলকিপার আর রক্ষণের ব্যর্থতায়। চাপের মুখ থেকে করিম ম্যাচটা বের করে নিয়ে গেলেন। কখনও মাঠ ছোট করে, কখনও মাঝমাঠে জঙ্গল তৈরি করে। মহমেডানকে গোলকধাঁধায় ফেলে। মোহনবাগানের ৪-৪-২ ভাঙাগড়া হল মাঝেমধ্যেই। কপালও কিছুটা সাহায্য করল করিম বিগ্রেডকে। না হলে সাবিথ কেন পিঠ দিয়ে গোল করবেন, কেন ওডাফার শট বদলি গোলকিপার অর্ণব দাশ শর্মা ফস্কাবেন? আইবর যা থেকে গোল করে গেলেন!
|
মোহনবাগান: শিল্টন, আইবর, ইচে, মেহরাজ, বিশ্বজিৎ, মণীশ ভার্গব (দীপেন্দু), ডেনশন, মণীশ মৈথানি, কুইনটন, ওডাফা (টোলগে), সাবিথ। |