নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিজের বেনিফিট ম্যাচ। কিন্তু দর্শকাসনে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলেন না তিনি। জিনস-ফুল হাতা সাদা শার্টের উপর লাল-হলুদ জার্সি গায়ে একটা মাঠে নেমেই পড়লেন নইমুদ্দিন।
সঞ্জয় মাঝির জোড়া গোলে তাঁর দল ক্রীড়ামন্ত্রী একাদশ জেতায় ম্যাচ শেষে তৃপ্তির হাসি ‘দ্রোণাচার্য’ কোচের মুখে। তার পরেই কলকাতায় তাঁকে আনার ভগীরথ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ, “জ্যোতিষচন্দ্র গুহ না থাকলে আজ এ জায়গায় আসা হত না।” সৌজন্যের মোড়কে মুড়ে রাখলেন না নিজের ঠোঁট-কাটা ব্যক্তিত্বকেও। নস্ট্যালজিয়া এবং আবেগের মাঝেই ইস্টবেঙ্গল মাঠে নইমের প্রশ্ন, “সবুজ গ্যালারিতে কাউকে দেখছি না কেন? স্কুলের ছাত্রদের তো আনা যেত।”
অস্ত্রোপচার সেরে এক লক্ষ টাকার চেক হাতে তড়িঘড়ি নইমের বেনিফিট ম্যাচে হাজির হওয়া ইস্টবেঙ্গলের চিকিৎসক সভাপতি প্রণব দাশগুপ্তও যে প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন। লাল-হলুদ সভাপতির সংযোজন, “নইম বদলায়নি। এ রকম সোজাসাপটা ভাবেই আমাকে বলেছিল, ইস্টবেঙ্গল কোচ হতে চাই। শুনে সে দিনই পল্টুদার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।” |
বিকাশ পাঁজি ও সঞ্জয় মাঝির সঙ্গে নইম। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র |
১৯৬৬ সালের এক সকাল। হায়দরাবাদ থেকে এ শহরে নইমের প্রথম পা রাখা, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব জ্যোতিষচন্দ্র গুহর হাত ধরে। তার পরের সাতচল্লিশ বছরে কলকাতার তিন প্রধান এবং জাতীয় দলে সাফল্যের সঙ্গে ফুটবল খেলার পাশাপাশিই বিয়ে, সংসার, কোচিং জীবন কেটেছে সৈয়দ নইমুদ্দিনের। জীবনমুখী গানের মতোই, এই শহর জানে তাঁর প্রথম সব কিছু। এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী দলের অধিনায়কত্ব থেকে ‘অর্জুন’, ‘দ্রোণাচার্য’ খেতাব প্রাপ্তি।
শনিবার ‘স্পোর্টস অ্যান্ড বিয়ন্ড’ আয়োজিত সেই নইমের বেনিফিট ম্যাচে হাজির ভারতীয় ফুটবলের পাঁচ দশকের প্রতিনিধিরা। চুনী গোস্বামী, শান্ত মিত্র থেকে বিকাশ-অমিত-বাসুদেব। মুম্বই থেকে নইমের বেনিফিট ম্যাচ খেলতে হাজির বাবুল সুপ্রিয়ও।
বেনিফিট ম্যাচ থেকে উঠল ১২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাজ্য ক্রীড়া দফতর থেকে পাঁচ লক্ষ। আর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব থেকে চার লক্ষ দশ হাজার।
ময়দানে আসার জন্য একটা সময় স্কুটার ছিল তাঁর বাহন। এখন তা-ও নেই। নইমের ভরসা এখন বাস-ট্যাক্সি। বেনিফিট ম্যাচের পড়ন্ত বিকেলে নইমকে ঘিরে তাঁর অনুরাগীদের প্রশ্ন, “এ বার গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে দেখা যাবে কি দ্রোণাচার্য কোচকে?”
শুনে চিরাচরিত ধারাতেই নইম বলে গেলেন, “আল্লা মেহেরবান তো নইম পালোয়ান!” |