|
|
|
|
|
কাঁটা সেই ক্লার্ক,
ধোনির আকাশে মেঘ থাকছে রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • হায়দরাবাদ |
|
পড়ন্ত বিকেলে চরম নাটকের সন্ধান পেয়ে আর থাকতে পারলেন না সুনীল গাওস্কর। কমেন্ট্রি বক্সে বসে বলে ফেললেন, ‘‘গুড, ভেরি গুড ডিসিশন। কিছু না হোক, একটা চেষ্টা তো করল। এখন দু’একটা পড়ে গেলে...।”
প্রেসবক্সের মুখ ততক্ষণে হাঁ। বিস্ময়ে। টুইটার, ফেসবুক, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আছড়ে পড়ছে একটার পর একটা মেসেজ।
‘নাউ ইটস ক্যাপ্টেন কুল ভার্সাস ক্যাপ্টেন সেন্সিবল!’
‘মিস্টার ক্লার্ক, আপনি কি জানেন ভারত শেষ উইকেট ফেলতে কত মুশকিলে পড়ে? দিব্যি তিরিশ-চল্লিশটা রান তো পেতে পারতেন।’
কেউ সাবাশি দিচ্ছেন, কেউ ধন্ধে। তর্ক-বিতর্কের এমন লোভনীয় মঞ্চ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনেই অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছেন ক্লার্ক। প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিয়ে, ওই উপরোক্ত স্কোরে! |
ক্লার্কের সারা দিন |
অশ্বিনকে গ্যালারিতে ফেলছেন। |
ব্যাগি গ্রিনদের শেষ উইকেটটা শুধু পড়া বাকি। মিনিট পাঁচেক আগে চেন্নাইয়ের পর আরও একটা মহাকাব্যের জন্ম দিয়ে হেলমেট হাতে ড্রেসিংরুমের দিকে হেঁটে গিয়েছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। বোঝা যায়নি, ক্যাপ্টেন ক্লার্ক আবার ফিরে আসবেন। তবে সশরীরে নয়, আসবে তাঁর একটা ছোট্ট বার্তাআর টানার দরকার নেই। চলে এসো। ইন্ডিয়াকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে দু’টো উইকেট তোলার চেষ্টা করি। গাওস্কর যা আন্দাজ করেছিলেন, ম্যাথু ওয়েড যা পরে বলে গেলেন।
অতীতে ভিন্ন যুগে বিভিন্ন অধিনায়কদের রোমাঞ্চকর ডিক্লেয়ারেশনের উদাহরণ প্রচুর আছে। ক্যারিবিয়ান দৈত্যদের হাত থেকে বোলারদের রক্ষা করতে এক বার মাঝপথে ইনিংস ছেড়ে দিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক বিষেণ সিংহ বেদী। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্রেফ দর্শকদের কথা ভেবে মরা টেস্টকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়ে। ০-০ স্কোরে দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। তবে টেস্টের ইতিহাসে প্রথম দিনই ক্লার্ক-সম কাণ্ড কবে ঘটেছে, খুঁজে বার করা মুশকিল।
যদিও ভারতকে তিন ওভার ব্যাট করতে পাঠিয়ে উইকেট আসেনি। কিন্তু ওটুকু সময়েই প্যাটিনসনের ‘ক্ষেপণাস্ত্র’ অস্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি করেছে ভাল রকম। দু’বার বল মুরলী বিজয়ের ভাইজারের উচ্চতায় পৌঁছল। যা পূর্বাভাস দিয়ে রাখছে, রবিবাসরীয় হায়দরাবাদে ভারতীয়দের জন্য অজি-উপহারের। ক্লার্কও ডিক্লেয়ারেশন মারফত ‘মাইন্ড গেম’ চালু করে একটা জিনিস বুঝিয়ে রাখলেন। তাঁর অস্ট্রেলিয়া স্টিভ-পন্টিং জমানার মতো দুর্ধর্ষ না হতে পারে, কিন্তু তাঁর ভিতরের কাঠামোটা পূর্বসুরিদের মতোই। ইস্পাতের। |
|
দ্রুত রান তুলতে গিয়ে পতন। |
যে ইস্পাতে ফাটল ধরানোর মতো ওষুধ এমএস ধোনির হাতে আজও নেই। বরং চোখের সামনে তাঁকে আবার দেখতে হল, চলতি ভারত সফরে কী ভাবে একের পর এক অমরত্বের মাইলস্টোন ছুঁয়ে চলেছেন অজি অধিনায়ক।
চেন্নাইয়ের সেঞ্চুরির পর এ দিন ৯১। একই ভাবে ব্যাটিং লাইন আপের যাবতীয় ব্যর্থতার দায়ভার সামলে, অনেক বেশি প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধে জিতে। কারণ চিপকের মতো আজ শুধু স্পিনার নয়, পেসারদের দৌরাত্ম্যও ছিল যথেষ্ট। কিন্তু ক্লার্ক সে সব গ্রাহ্য করলে তো?
রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে স্টেপ আউট করে বিশাল ছক্কা যেমন মেরেছেন, তেমনই পেসারের বলে ক্লার্কের প্লেসমেন্ট বন্ধ করতে এক সময় মিডউইকেটে গায়ে গায়ে দু’টো ফিল্ডার রেখেও লাভ হয়নি ধোনির। ভুবনেশ্বর কুমারের বল ওই দুই ফিল্ডারের মধ্যে দিয়েই বিলবোর্ডে ধাক্কা খেয়েছে। অশ্বিনের বলে এক বার তাঁর ক্যাচ পড়েছে, কিন্তু তাতে ইনংসের মাহাত্ম্য কমেনি। বহু দিন পর ‘পুরনো’ হরভজন, বা তিন উইকেট নেওয়া জাডেজাকেউ তাঁকে ব্যাকফুটে পাঠাতে পারলেন? সাধে আর ম্যাথু ওয়েড পরে বলছিলেন, “চোটের যন্ত্রণা নিয়েও চেষ্টা করছিলাম ক্লার্ককে যতটা পারা যায় সাহায্য করতে। হল না। তিরিশ-চল্লিশটা রান বেশি হলে ওর ইনিংসটা আরও মর্যাদা পেত।” |
|
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ককে ফিরিয়ে জাডেজা। |
তবু অস্ট্রেলিয়া একেবারে ‘রিং’-এর বাইরে ছিটকে পড়েছে বলা যাচ্ছে না। উপ্পলের বাইশ গজ আর যা-ই হোক, চিপকের মতো ‘ক্লে কোর্ট’ নয়। উইকেটে টার্ন ধরেছে প্রথম দিনের শেষাশেষি, ফাটলও আছে, কিন্তু তাই বলে পেসারদের বধ্যভূমি ভাবার কারণ নেই। বরং ভিভিএস লক্ষ্মণ স্ট্যান্ডের মুখোমুখি প্রান্তে একটা নির্দিষ্ট ‘স্পটে’ বল পড়লে স্কিড করে ভিতরে আসছে অসমান বাউন্সে।
ভারত অধিনায়ক প্রায় গোটা দিন ও দিক থেকে পেসার লেলিয়ে দিলেন। কখনও ইশান্ত, কখনও ভুবনেশ্বর। ভুবনেশ্বরের তিনটে উইকেটের পিছনে অনেকটাই নির্দিষ্ট ওই ‘স্পটে’র দাক্ষিণ্য। ওয়ার্নার কিছু বোঝার আগেই বল স্পটে পড়ে তীব্র গতিতে ভিতরে ঢুকে এল, ওয়াটসন আবার বাউন্সটা ধরতে পারলেন না। পুল করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ! মনে রাখা ভাল, ক্লার্কের পকেটেও প্যাটিসন-সিডল আছেন। আর স্পিন-ব্যাঙ্কও চিপকের চেয়ে ভাল। নাথন লিয়ঁ বাদ, বদলে বাঁ হাতি ডোহার্টি। সঙ্গী মাক্সওয়েল। এবং অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ড দেখেও উর্ধ্ববাহু হয়ে নাচানাচির বিশেষ কারণ নেই। রবিবার সহবাগ-বিজয়ের ব্যর্থতার ‘মেগাসিরিয়াল’ যদি চলে, চাপ পড়বে মিডল অর্ডারে। দরকার হবে বড় পার্টনারশিপের। চেন্নাইয়ে ধোনির রানের হাইরাইজ কিন্তু সৃষ্টি হয়েছিল সচিন-বিরাটের পার্টনারশিপের ‘বাস্তুভিটে’-তে।
রোজ-রোজ এক কাহিনি হবে, গ্যারান্টি কোথায়?
|
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস |
ওয়ার্নার বো ভুবনেশ্বর ৬
কাওয়ান এলবিডব্লিউ ভুবনেশ্বর ৪
হিউজ ক ধোনি বো অশ্বিন ১৯
ওয়াটসন এলবিডব্লিউ ভুবনেশ্বর ২৩
ক্লার্ক বো জাডেজা ৯১
ওয়েড ক ভুবনেশ্বর বো হরভজন ৬২
এনরিকে বো জাডেজা ৫
ম্যাক্সওয়েল ক ধোনি বো জাডেজা ১৩
সিডল এলবিডব্লিউ হরভজন ০
প্যাটিনসন নঃ আঃ ১
ডোহার্টি নঃ আঃ ০ অতিরিক্ত ১৩ মোট ২৩৭-৯ ডিঃ। পতন: ১০, ১৫, ৫৭, ৬৩, ২০৮, ২১৭, ২৩৩, ২৩৬, ২৩৬। বোলিং: ভুবনেশ্বর ১৫-২-৫৩-৩, ইশান্ত ১৭-৫-৪৫-০,
অশ্বিন ১৫-৬-৪১-১, হরভজন ২২-২-৫২-২, জাডেজা ১৬-৪-৩৩-৩। |
ভারত প্রথম ইনিংস |
বিজয় নঃ আঃ ০
সহবাগ নঃ আঃ ৪। অতিরিক্ত ১ মোট ৫। বোলিং: প্যাটিনসন ২-১-১-০, সিডল ১-০-৪-০। |
|
|
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
|
|
|
|
|