পুর-বাজার নিয়ে গাফিলতি কবুল কর্তাদের
রক্ষীদের নজরে রাখতে ভিডিও কল
পুরবাজারের হাল ফেরাতে পরিকল্পনার ছড়াছড়ি। কিন্তু তার কতটা বাস্তবায়িত করা যাবে, প্রশাসনের একাংশই তা নিয়ে সন্দিহান।
সূর্য সেন বাজারের আগুনের পরে গঠিত পুরসভার টাস্কফোর্সের শনিবারের বৈঠকেও এমন নয়া পরিকল্পনার নমুনা মিলেছে। এ বার ঠিক হয়েছে, পুরবাজারের সুপার ও নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে-হাতে থ্রি জি মোবাইল দেওয়া হবে। বাজারে ঢুকেই ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ওই মোবাইল থেকে ভিডিওকল করতে হবে। তাতে ছবি উঠে স্পষ্ট হয়ে যাবে ওই কর্মী সত্যিই বাজারে ঢুকেছেন কি না। রাত-পাহারার সময়ে রক্ষীদের চাপে রাখতে বাজারে ১৫ মিনিট অন্তর দম দেওয়ার দেওয়ালঘড়ি বসানোর কথা আগেই বলা হয়েছিল। এ দিন দামি ফোন দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কোনও বড় ধরনের দুর্ঘটনার পরেই তো শুধু এ ভাবে নড়েচড়ে বসা। আগেও বহু দুর্ঘটনার পরে এমন নানা ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। বহু সাধারণ পরিকল্পনাও কার্যকর করতে কেটে গিয়েছে অনেক সময়। তার উপরে এ বার আবার অত্যাধুনিক নানা ব্যবস্থার চিন্তা। তাই স্বভাবতই সাধারণ নাগরিক থেকে প্রশাসনের অন্দরের মানুষ, সকলের মনেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এ সব ব্যবস্থা আদৌ কার্যকর করা যাবে কি? দু’দিন পরেই তো আবার সব যে-কে-সেই।
সাধারণত এ সব ত্রুটির ব্যাপারে যে তাঁরা চোখ বুজেই থাকেন, তা মেনে নিয়েছেন পুরকর্তারাও। বাজার-সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ নিজেই কড়া ভাষায় আত্মসমালোচনা করেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, বেসরকারি বাজার দূরে থাক, পুরবাজারেও নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন না। বাজারের সুপার বা সার্জেন্টরা সময়মতো বাজারে যান না। সাফাইকর্মীরাও কোনও রকমে কাজ সারেন। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদেরও দেখা মেলে না।
তারকবাবুর কথায়, “এই ঢিলেমির ফলেই বাজারে জঞ্জাল জমতে থাকে। বাজারের ভিতরে আগুন জ্বেলে রান্না হয় অবাধে।”
বাজারগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রক্ষীদের আরও দায়বদ্ধ করতে চাইছেন পুরকর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদেরও বেশি করে কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁরা। নতুন টাস্কফোর্সে এনসিসি বা স্কাউটের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়াদেরও রাখা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে পুরকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলর প্রমুখ থাকবেন। বলা হয়েছে, কাউন্সিলরেরা চাইলে টাস্ক ফোর্সে স্থানীয় কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও নিতে পারবেন। অগ্নিকাণ্ডের পরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীও কলকাতার বাজারের নিরাপত্তা নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি কমিটি গঠনের কথা বলেছিলেন।
কমিটিতে দমকলের কেউ নেই কেন? পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দমকল তো অন্য কমিটিতে পুরসভার সঙ্গেই বাজারে বাজারে ঘুরছে। দমকলের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকও হচ্ছে। তারকবাবুর কথায়, “সাধারণ নাগরিকদেরও তো একটা দেখার চোখ আছে। নতুন কমিটিতে সেটিও গুরুত্ব পাচ্ছে।” কমিটির জন্য তিন পাতার একটি প্রশ্নমালা তৈরি হয়েছে। পরিদর্শনের সময়ে প্রশ্ন ধরে-ধরে কমিটির সদস্যেরা বাজারটির খুঁটিনাটি যাচাই করবেন।
যেমন,
• বাজারটি পুরসভার না বেসরকারি?
• বাড়িটি পুরসভার অনুমোদিত কি না?
• বাজারে ঢোকা এবং বেরোনোর কতগুলি রাস্তা?
• সিঁড়ির কী অবস্থা?
• বাজারে কি রান্না হয়?
• কেউ রাতে থাকেন কি?
• বাজারে জেনারেটর ও সিসি টিভি আছে কি না?
এক-একটি বাজারের বিষয়ে এ সব সাধারণ তথ্য দিয়ে নথি তৈরি করতে চাইছে পুরসভা। টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে। তিনি বিষয়গুলি দমকলের নজরে আনবেন বলে পুরসভা সুত্রের খবর।
স্টিফেন কোর্ট-কাণ্ডের পরে গঠিত প্রশাসনের পরিদর্শন কমিটিও এ দিন শহরের অগ্নিপ্রবণ বাড়ি দেখতে বেরিয়েছিল। পুরসভা, দমকল, পূর্ত দফতর, সিইএসসি-র কর্তারা বড়বাজারের রাজা কাটরা ও সদাসুখ কাটরার হাল-হকিকত খতিয়ে দেখেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.