সব হারিয়েও ফাঁকতালে ভিতরে ঢুকে যা কিছু সম্বল উদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা চলছে পুড়ে-যাওয়া বাজারে। এ দিকে, দেখতে পেলেই ‘রে-রে’ করে তেড়ে এসে ওই দোকানদার-ছোট ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে দিচ্ছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে গোটা বাজার। এখন ঢোকা যাবে না বলে জানিয়ে দিচ্ছে স্থানীয় থানা।
সূর্য সেন স্ট্রিট বাজারে শনিবার দিনভর এই টানাপোড়েন দেখল পুলিশ। তিন দিন আগের আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। শুক্রবার রাতে মারা গিয়েছেন দীনেশ চট্টোপাধ্যায় নামে আর এক দোকানদার। গুরুতর আহত অবস্থায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। আগরপাড়ার বাসিন্দা দীনেশবাবুর দেহ এ দিন তাঁর পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। |
আগুনের কারণ খুঁজতে পুলিশি তদন্ত কোথায় দাঁড়িয়ে তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ ছড়িয়ে আছে, এ কথা জানিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দারা গোটা বাজার পাহারায় মুড়ে রাখতে বলেছেন। কিন্তু দোকানদারদের কান্নাকাটিতে স্থানীয় পুলিশকর্মীরা পড়ছেন সমস্যায়। এ দিন সকালে তবু কিছু ক্ষণের জন্য বাজারের একটি অংশে ব্যবসায়ীদের ঢুকতে অনুমতি দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। এক দল লোক সঙ্গে সঙ্গে ছুটে ভিতরে ঢুকলেন। যে যেমন পেলেন প্লাস্টিকের বাসন, প্যাকিং বাক্স, ‘লিকুইড সোপ’-এর বোতল, কয়েকটি শোলার থালা বার করে আনলেন। দমকলের জলে ভিজে সপ্সপ্ করছে সব। ধ্বংসস্তূপে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজছেন বিধ্বস্ত চেহারার যুবক বা প্রৌঢ়। কারও কাগজের ব্যবসা। আগুন আর জলে সেই কাগজের দফা রফা। একটু স্বচ্ছল ব্যবসায়ীরা ভাড়া করা লোক এনে টেবিল বা চৌকি বার করাতে ব্যস্ত।
এই ব্যবসায়ীরা যাবেন কোথায়? কী করবেন? এখনও পর্যন্ত কারও কাছেই তার উত্তর নেই। তবে সব্জিবিক্রেতাদের এ দিন সূর্য সেন স্ট্রিটের ফুটপাথে পসরা নিয়ে বসার অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেটাও বেলা ১০টা পর্যন্ত। ফুটপাথে বাজার বসলে রাস্তায় যানজট হবে, তাই এর পরেই পুলিশ এসে বিক্রেতাদের উঠে যেতে বলল।
বেলাবেলি বাজার থেকে মালপত্র বার করার সময়েই হঠাৎ রোল উঠল, লালবাজারের অফিসারেরা আসছেন। সঙ্গে সঙ্গে পড়ি-কি-মরি করে নিজেদের জিনিস বার করে উল্টো দিকের ফুটপাথে ঝুপড়িবাসীদের জিম্মায় সব চালান করার কাজ শুরু হল। ফুটপাথবাসী শিশুরাও ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে দুর্গত ব্যবসায়ীদের সাহায্যে এক পায়ে খাড়া। জিনিসপত্র বার করতে তারাও হাত লাগাচ্ছে।
কী পেলেন এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে? কেন ঢুকলেন অগ্নিকাণ্ডের পরে ভাঙাচোরা বাজারের বিপজ্জনক বাড়িটার ভিতরে? প্রশ্ন শুনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার হতাশ ভঙ্গিতে নিজের কপালে হাত ঠেকালেন। জানালেন, একতলায় দোকান ছিল। গুদামটি ছিল দোতলায়। তাঁর কথায়, “টুকটাক কিছু পেলেও কম দামে বিক্রি করা যেত।” বাজারের সামনে বিকেল পর্যন্ত বিমর্ষ জটলা। আলোচনা চলছে কী ভাবে বিমার টাকা উদ্ধার করা যাবে।
নিজেরা আগুন থেকে প্রাণে বাঁচলেও পুড়ে যাওয়া বাজারের অন্দরেই ওই দোকানদারদের জীবন এখন থমকে রয়েছে। |