রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে সে দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড ডন’, কলকাতার জেলে বন্দি সুব্রত বায়েনের সাম্প্রতিক খবরাখবর কলকাতা পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি সিবিআই মারফত কলকাতা পুলিশকে চিঠি দিয়ে বিদেশ মন্ত্রক এই ব্যাপারে তথ্য চায়।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “সিবিআই আমাদের জানিয়েছে, ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফরের যোগসূত্রে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সিবিআই-কে সুব্রত বায়েনের সাম্প্রতিক খবরাখবর জানাতে অনুরোধ করেছে। সুব্রতর নামে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশ রয়েছে। তাই ভারতে ইন্টারপোলের নোডাল এজেন্সি সিবিআইয়ের মাধ্যমেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সুব্রতর ব্যাপারে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। আমরা বিস্তারিত জানিয়ে সিবিআই-কে চিঠি দিয়েছি।”
গত বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) গোয়েন্দাদের হাতে সুব্রত ধরা পড়েছে। এর আগে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবরও দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউ এলাকা থেকে সে এসটিএফের হাতেই ধরা পড়েছিল। কিন্তু পুলিশ সময় মতো চার্জশিট না দিতে পারায় ২০০৯-এর জানুয়ারি মাসে সে জামিনে ছাড়া পায় এবং তার পর পালিয়ে নেপালে চলে যায়। কিছু দিনের মধ্যে সুব্রত সেখানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তার পর গত বছর ৮ নভেম্বর নেপালের সুনসারি জেলার ঝুমকা জেলের ভিতর ৭০ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ কেটে সুব্রত বায়েন-সহ ১২ জন বন্দি পালিয়ে যায়। বরিশালে জন্মানো সুব্রত বায়েন ২০০৪ সালের অগস্ট মাসে ঢাকায় আওয়ামি লিগের জনসভায় গ্রেনেড হানার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং আহত হন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা-সহ অসংখ্য মানুষ।
এ ছাড়াও বাংলাদেশে অসংখ্য
খুন, অপহরণ ও তোলাবাজির ঘটনায় সুব্রত অভিযুক্ত।
বাংলাদেশ এখন উত্তাল। তার মধ্যেই নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ, রবিবার প্রণববাবুর তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার কথা। তার আগেই সুব্রত বায়েনকে নিয়ে বিদেশমন্ত্রকের এই নড়াচড়ায় পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্রের মত, প্রথমত, এর সঙ্গে নিরাপত্তার কোনও বিষয় যুক্ত থাকতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, সুব্রত বায়েনকে সে দেশের সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াও হয়তো শুরু হতে চলেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছেও সুব্রত বায়েন নিয়ে খবরাখবর চেয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে শনিবার এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত গোপনীয় ও স্পর্শকাতর বিষয়। এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।”
বছর পঁয়তাল্লিশের সুব্রত এখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। তার এই বর্তমান অবস্থান, কী কী ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং কী ভাবে ও কোথা থেকে তাকে এ যাত্রায় গ্রেফতার করা হল, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে শুক্রবারই কলকাতা পুলিশের
পক্ষ থেকে সিবিআই-কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের দাবি, নেপালের জেল থেকে পালিয়ে সুব্রত বায়েন এ দেশে ঢুকে প্রথমে আশ্রয় নেয় বিহারের পূর্ণিয়ায়। সেখানে কিছু দিন কাটিয়ে সে চলে আসে পশ্চিমবঙ্গে। এসটিএফের দাবি, বীরভূমের সিউড়িতে সে বেশ কিছু দিন আত্মগোপন করেছিল। কলকাতায় এসে সে চাঁদনি চক এলাকায় আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই তাকে এ বার গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, এ বার সুব্রতর কাছ থেকে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ১১ লক্ষ টাকার জাল ভারতীয় নোট। সেই সঙ্গে বিদেশি আইনেও মামলা রুজু করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। |