লাভ কম, চাষিরা তবু ধান বেচতে চাইছেন ফড়েকেই
তাঁরা রাজ্য সরকারকে ধান বিক্রি করেছিলেন গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। দাম পেলেন এ বছর ফেব্রুয়ারি পার করে। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে চেক নেওয়ার পরেই বর্ধমানের মন্তেশ্বর থেকে আসা দেড়শোরও বেশি চাষির একটা বড় অংশ জানিয়ে দিয়েছেন, আর সমবায় সমিতিকে (যারা খাদ্য দফতরের হয়ে ধান কেনে) ধান বিক্রি করবেন না। এ বছর বোরো ধানও তাঁরা ফড়েদের কাছেই বিক্রি করেছেন। ভোগান্তির পুনরাবৃত্তি তাঁরা চান না।
মন্তেশ্বরের মঙ্গলপুর গ্রামের চাষি অসীম সামন্ত ৬৮ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন। গত বছর ২১৬ বস্তা ধান তিনি জামনা কৃষি সমবায়কে বিক্রি করেন। বকেয়া টাকা হাতে পেয়ে তিনি বলেন, “ধানের টাকা এক বছর আটকে রইল। দু’বার অনশন করার পরে টাকা পেলাম। খাওয়া-দাওয়া ভালই হল। কিন্তু সমিতিকে আর ধান দেব না। দু’টো পয়সা কম পেলেও ফড়েদেরই দেব।” পাশের কুলে গ্রামের কৃষক সালাউদ্দিন মণ্ডল জানান, ধান বিক্রির টাকা আটকে যাওয়ায় সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে এ বছর চাষ করেছেন। সমবায়কে ১৩৩ বস্তা ধান দিয়েছিলেন তিনি। কিছু টাকা আগে পেয়েছিলেন। এ দিন ৪৩ হাজার ৬৬২ টাকার চেক হাতে নিয়ে তিনিও বললেন, “আর সরকারকে ধান বিক্রি করব না।”
টাউন হলে কৃষকদের চেক বিলি অনুষ্ঠানের আগে খাওয়া-দাওয়া। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
দেয়ানিয়ার কুন্তল সাঁই, শেখ জাহাঙ্গিরদের বক্তব্যও একই। তাঁরা জানান, প্রতি কুইন্টাল থেকে সাড়ে চার কিলোগ্রাম ধানের দাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও অনেক লড়াই করে দাম পেতে হয়েছে। মহাজনের কাছে ধার করে চাষ করতে হয়েছে। এর চেয়ে আড়তে ধান দেওয়া অনেক ভাল বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে নতুনগ্রামের ২০ বিঘা সম্পত্তির মালিক অশোক সাঁই খুশি। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর কাজে ও কথায় মিল রয়েছে। এ ভাবে খাইয়ে-দাইয়ে কোন সরকার চেক দিয়েছে?” তিনি আবার সমিতিকেই ধান বিক্রি করবেন বলে জানান অশোকবাবু। এ বছর বোরো ধান বিক্রির মরসুম চলে গেলেও তিনি এখনও সরকারকে ধান দেননি।
কৃষকদের বক্তব্যের সারবত্তা মেনে নিয়েও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এই পরিস্থিতির জন্য অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সিপিএমের দিকে। তিনি বলেন, “বর্ধমানে সিপিএম কৃষি সমবায়গুলির কলকাঠি নাড়ছে। গোলমাল পাকাচ্ছে। এ সব মদন ঘোষ-বিনয় কোঙারদের তৈরি করা।” তিনি জানান, বর্ধমানের অন্তত আরও তিনটি এবং বাঁকুড়ার একটি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কৃষকসভার নেতা মদন ঘোষ পাল্টা বলেন, “যদি মনে করেন, ওঁরা ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে চাষিদের বাঁচান।”
খাদ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, সরাসরি খাদ্য দফতরের কেন্দ্রে গিয়ে চাষিরা ধান বিক্রি করুন। চাষিদের সঙ্গে টাউন হলে এসে বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “বর্ধমানে ৮৬টি জায়গায় রোজ ধান কেনা হচ্ছে। তার মধ্যে খাদ্য দফতর ৩৬টি জায়গায় ধান কিনছে। কৃষকেরা ধান নিয়ে আসছেন, বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।” রোজ ৬০০ কুইন্টাল ধান কেনা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলাশাসক। মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, “১২৫০ টাকা দরে সরকারকেই ধান বিক্রি করুন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.