ধানের দাম এল ত্রাণ তহবিল থেকে
বাসে চাপিয়ে টাউন হলে এনে চেক দিলেন মমতা
ক বছর আগে সরকারি সহায়ক মূল্যের আশায় ধান বিক্রি করেছিলেন। শনিবার তার টাকা হাতে পেলেন মন্তেশ্বরের চাষিরা। কিন্তু নিজের এলাকার কৃষি সমবায় থেকেই যা তাদের পাওয়ার কথা ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে তা নিতে আসতে হল কলকাতার টাউন হলে।
বকেয়া টাকার দাবিতে এর আগে বর্ধমানের মন্তেশ্বর ব্লক অফিসের সামনে একাধিক বার অনশন করেছেন চাষিরা। ফেব্রুয়ারির শেষ দিন পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েও সমবায় তা রাখতে পারেনি। শেষমেশ এ দিন বাস ভাড়া করে তাঁদের আনা হল টাউন হলে। দুপুরে মাছ-ভাত খাইয়ে নিজের ত্রাণ তহবিল থেকে ১৬৬ জনের হাতে ৪৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের প্রায় সব টাকা শেষ হয়ে গেল। কিন্তু আমি চাষিদের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা মানতে পারিনি।”
ধান নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ইতিমধ্যেই মন্তেশ্বরের একটি চালকলের দুই মালিকের বিরুদ্ধে কলকাতার নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে রাজ্যের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম (ইসিএসসি)। সাধারণত ইসিএসসি-র মতো সরকারি সংস্থাগুলি কৃষি সমবায় মারফত চাষিদের থেকে ধান কেনে। সমবায় সেই ধান পাঠায় চালকলে। তারা ধান ভাঙিয়ে চাল তৈরি করে সরকারের ঘরে জমা দেয়। তার বিনিময়ে খাদ্য দফতর যে দাম দেয়, তা থেকেই সমবায়ের টাকা মেটায় তারা। সমবায় আবার সেই টাকায় চাষিদের পাওনা শোধ করে।
কৃষকদের হাতে চেক তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। টাউন হলে। -নিজস্ব চিত্র
এ ক্ষেত্রে সুনন্দ রাইস মিল নামে মন্তেশ্বরের একটি চালকল ৯০ লক্ষ টাকারও বেশি চাল জমা দেয়নি বলে অভিযোগ। গত বছর খরিফ মরসুমে জামনা পঞ্চায়েত এলাকার একটি কৃষি সমবায় চাষিদের থেকে ওই চাল সংগ্রহ করেছিল। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভিযোগ, “ওই রাইস মিল এবং জামনা কৃষি সমবায় সমিতি চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ওই চাল অন্য রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়েছিল।
কিন্তু কাজ হয়নি। চাষিরা প্রতারিত হবেন আর সরকার হাত ধুয়ে বসে থাকবে তা তো চলতে পারে না। সে কারণেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।” যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত চালকলের দুই মালিক অরিজিৎ ও অভিজিৎ মণ্ডল গ্রেফতার হননি। জামনা সমবায়ের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জামনা কৃষি সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে তারা জামনা, কুলে, দেওয়ানিয়া, লস্করপুর, সেলে, মরাইপিড়ি, আসুরি, নতুনগ্রাম থেকে ধান সংগ্রহ করে। এর মধ্যে কিছু লোক টাকা পেলেও তিনশোরও বেশ চাষি তা পাননি। গত বছর অক্টোবরেই চাষিরা এক বার ব্লক অফিসের সামনে অনশনে বসেছিলেন। প্রশাসনের চাপে সে সময়ে ৫০ লক্ষ টাকা জোগাড় করে চাষিদের বিলি করে সমবায়। এর পরেও চাষিদের ৭০ লক্ষ টাকার বেশি পাওনা ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের অনশন শুরু করেন চাষিরা। বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৩০ লক্ষ অগ্রিম নিয়ে সমবায় ফের কিছু চেক দেয়। বাকি ৪০ লক্ষ টাকা মেটাতে খাদ্য দফতরের কাছে ধার চাওয়া হয়েছিল। তারা আবার কৃষি দফতরের কাছে টাকা চায়। কিন্তু কৃষি দফতরের ভাঁড়ারেও অত টাকা ছিল না।
এই যখন পরিস্থিতি, শুধু সুনন্দ রাইস মিলের কাছেই জামনা সমবায়ের পাওনা ছিল ৯২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। চাপে পড়ে ২২ ফেব্রুয়ারি তারা সেই অঙ্কের চেক দেয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি সেটি ভাঙিয়ে টাকা তোলা যাবে বলে সংস্থার মালিকেরা আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে সমবায় চাষিদের জানায়, সে দিনই সব টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু চালকলের সেই চেক ‘বাউন্স’ করে যায়। এই পরিস্থিতি কেন হল, তা বুঝতে চেয়ে ইসিএসসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি এস ক্যাথিরেশনকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি আবার বৃহস্পতিবারই অবসর নিয়েছেন। সে কারণে সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার গৌতম চৌধুরীর কাছে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর চাপে বর্ধমানেও তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। শুক্রবার জেলা খাদ্য নিয়ামক আধিকারিক শঙ্করনারায়ণ বাঁকুড়া চাষিদের জানিয়ে দেন, পরের দিন তাঁদের কলকাতা নিয়ে যাওয়া হবে। বাস এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। সেই মতো, শনিবার সকালে পাঁচটি বাসে চাষিদের নিয়ে রওনা দেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। ডিম-কলা-পাঁউরুটি দিয়ে প্রাতরাশ তিনিই করিয়েছেন। টাউন হলে নতুন সাদা টি-শার্ট পরে তৈরি ছিলেন কৃষি দফতরের অফিসারেরা। সাড়ে তিনশো প্লেটের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। সরু চালের ভাত, শুক্তো, ডাল, রুই মাছের কালিয়া, চাটনি, পাঁপড়, দই-মিষ্টি দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারার পরে শুরু হয় সভা।
এক সরকারি কর্তার টিপ্পনী, যে কাজ পঞ্চায়েত প্রধান এবং সমবায় অফিসার করে থাকেন, এত খরচ করে মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব আর জেলাশাসক মিলে তা-ই করলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার অবশ্য দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রী এতটাই কৃষক-দরদী যে সংবাদমাধ্যমকে না জানিয়ে এত বড় কাজ করে ফেলেছেন। চাষিদের জন্য কাজ করে তিনি প্রচার চান না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.