জামিনে মুক্ত ৪৪ দিন পরে
দলনেত্রীর নির্দেশ পালন করে চলব, বললেন আরাবুল
চুয়াল্লিশ দিন হাজতবাসের পরে জামিনে মুক্ত ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে ফুলে-মালায় বরণ করে নিলেন তাঁর অনুগামীরা। আর যে আরাবুল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দলের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, শুক্রবার তিনিই নিজেকে দলের একনিষ্ঠ কর্মী। হিসেবে ঘোষণা করে জানিয়ে দিলেন এ বার থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলবেন। অবশ্য একই সঙ্গে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
তুলে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করার ‘হুমকি’ দিয়েছেন।
গত ৮ জানুয়ারি বামনঘাটায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগে আরাবুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চার বার তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ হয় আদালতে। বৃহস্পতিবার তিনি শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। গ্রেফতারের পরে সোনারপুর থানার লকআপে আরাবুল দলীয় নেতাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “দলকে জানিয়েই সব করেছি। তা সত্ত্বেও আমাকে গ্রেফতার করা হল কেন?”
স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে নিজের বাড়িতে আরাবুল। শুক্রবার।
শুক্রবার আলিপুর আদালত থেকে ৪০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভাঙড়ের ঘটকপুকুর মোড়ে একটি ছোট সভায় অবশ্য আরাবুল শুধু বিঁধেছেন পুলিশ এবং সিপিএমকে। তাঁর কথায়, “আমি মনে করি, সিপিএম এবং পুলিশের একাংশ মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাকে ফাঁসিয়েছে। ৪৪ দিনের জায়গায় চার বছর জেল-হাজত হলেও কিছু আসে-যায় না। দলের নির্দেশে গ্রেফতার হয়েছি। এ বার আমি তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করব। ওটা আমার লড়াই।” তবে, ভাঙনের প্রাণকেন্দ্রে এই সভায় আরাবুল অনুগামীদের ছাড়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড় প্রায় ছিলই না। দেখা যায়নি দলের আর এক নেতা কাইজার আহমেদকে।
কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা মানে তো বকলমে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই মামলা! এ প্রশ্নের উত্তরে আরাবুল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিরপেক্ষ প্রশাসন চালাচ্ছেন। সেই কারণে তিনি দলীয় কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাকেও গুরুত্ব দিয়েছেন।”
তবে আরাবুলের এই ‘হুমকি’কে গুরুত্ব দিতে নারাজ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কর্তারা। এক
পুলিশ কর্তা বলেন, “যে কেউ যে কোনও অভিযোগে মামলা করতে পারেন। সকলের মামলা করার অধিকার রয়েছে। উনিও করবেন।” আরাবুলের ‘হুমকি’ নিয়ে জেলা তৃণমূলের শীর্ষনেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে আরাবুল।
শুক্রবার সকালেই হাজার খানেক আরাবুল অনুগামী আলিপুর আদালত চত্বরে ভিড় করেন। সাড়ে ১২টা নাগাদ আরাবুল বেরোতেই তাঁকে মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। নতুনহাটে বাড়ি ফেরার পথে আরাবুল বামনঘাটায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে কনভয় গিয়ে পৌঁছয় ঘটকপুকুর মোড়ে। শ’দেড়েক তৃণমূলকর্মী সবুজ আবির ছুড়ে ‘আরাবুল ইসলাম জিন্দাবাদ’ ধ্বনি তুলে স্লোগান দিতে থাকেন। পথসভার পরে তাঁর কনভয় যায় ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে। সেখানে কিছু দলীয় সমর্থকের সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করেন তিনি। এর পরে শোনপুর, কাশীপুর, পোলেরহাট এবং শ্যামনগরেও তাঁর কনভয় দাঁড়ায়। কোথাও মহিলারা ফুল ছুড়ে দেন, কোথাও দলীয় কর্মীরা হাত মেলানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বাড়ির সামনের গলিতে আরাবুল পৌঁছনোমাত্র তাঁকে রসগোল্লা খাওয়ানোর ধুম পড়ে যায়। উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের আরাবুলের পরামর্শ, “ঠিকঠাক খবর লিখুন। খবর বিকৃত করবেন না। সিপিএম আমার উপর গুলি চালিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। উল্টে প্রশাসন আমাকে ফাঁসিয়েছে। ওই ঘটনাগুলি একটু তদন্ত করে সংবাদ পরিবেশন করুন।”
স্ত্রী জাহানারা এ দিন দুপুরে আরাবুলের জন্য ডিমের ঝোল-ভাত রেঁধেছিলেন। কিন্তু আরাবুলের পৌঁছতে বিকেল সাড়ে চারটে বেজে যায়। ওই খাবার তিনি আর খাননি। তবে বলেন, “এ বার ভালমন্দ খেতে পারব। এ ক’দিন জেলে ভাল খাবার জোটেনি।”

ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.