নেত্রীর অভয়, হেরেও তাই মন্ত্রী হুমায়ুন
যাঁরা একদা তাঁকে জিতিয়েছিলেন, রেজিনগরের সেই ভোটারদের সাম্প্রতিকতম রায়ে তিনি পরাজিত। তবু আপাতত মন্ত্রী থাকছেন হুমায়ুন কবীর। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মন্ত্রিত্ব ও দলের কাজ— দু’টোই চালিয়ে যেতে বলেছেন।
দল বদল করে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় হুমায়ুনকে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী করে দেন মমতা। দিনটা ছিল ২১ নভেম্বর। কিন্তু মন্ত্রী থাকতে গেলে তাঁকে ছ’মাসের মধ্যে ভোটে জিতে ফের বিধায়ক হতে হবে। দলত্যাগ রোধ আইনের এই নিয়মেই তাঁর পুরনো কেন্দ্র, মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হন হুমায়ুন। বৃহস্পতিবার ভোটের ফল জানিয়ে দিয়েছে, মন্ত্রী হুমায়ুন ত্রিমুখী লড়াইয়ে তৃতীয় হয়েছেন। সম্মানরক্ষার এই লড়াইয়ে অধীর চৌধুরীর কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার মহাকরণে। —নিজস্ব চিত্র
মন্ত্রী হয়ে তিন মাসের মধ্যে ভোটে হেরে যাওয়ায় মহাকরণে তাঁর চেয়ারটা থাকবে কি না, শুক্রবার দিনভর তা-ই নিয়ে বিস্তর কৌতূহল ছিল রাজনীতির কারবারিদের। সন্ধ্যায় তার নিরসন করে দেন হুমায়ুন নিজেই। দু’বারের চেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে তাঁর দাবি, “সিএম আমাকে মন্ত্রিত্ব এবং দলের কাজ একই সঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সেইমতো কাজ করে যাব।” সরকারি সূত্রের খবর, ছ’মাসের মেয়াদ ধরলে ১৯ মে পর্যন্ত মন্ত্রী থাকতে পারবেন হুমায়ুন।
রেজিনগর আসনটি গিয়েছে। মন্ত্রিত্বও চলে যাবে কি না, তা নিয়ে নিজের মধ্যেও কম উৎকণ্ঠা ছিল না হুমায়ুনের। জেলায় নিজের বাড়িতে রাত কাটিয়ে শুক্রবার সকালে তাই কলকাতার উদ্দেশে সড়কপথে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। লক্ষ্য একটাই, ‘দিদি’র সঙ্গে দেখা করে নিজের ভবিষ্যৎ অবস্থান বুঝে নেওয়া। দুপুরে মহাকরণে পৌঁছেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। মমতা তাঁকে পরে আসতে বলেন। উদ্বেগ নিয়ে মহাকরণের তেতলায় নিজের ঘরে ফেরেন হুমায়ুন। অবশেষে বিকেল ৫টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় তাঁর। প্রায় আধ ঘণ্টার বৈঠকে পরাজয়ের কারণ বিস্তারিত ভাবে জানান মুখ্যমন্ত্রীকে। যখন বেরিয়ে এলেন, চোখেমুখে উৎকণ্ঠার লেশমাত্র নেই। বললেন, “বরাবরই আমি অধীর চোধুরীর সঙ্গে ছিলাম। তার পরেই অধীরবাবুর সঙ্গে বিরোধ হয়। আমি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিই। মুখ্যমন্ত্রী ম্যাডাম আমাকে মন্ত্রী করেছেন। আমাকে সব রকম সাহায্য করেছেন। এ বার মুর্শিদাবাদ জেলায় দলের কাজ করতে চাই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংগঠন করে দেখাব।”
কিন্তু এক সময় যে-কেন্দ্রে জিতেছেন, সেখানে হারলেন কেন?
জবাবে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবুর বিরুদ্ধে ঢালাও বিষোদ্গার করেছেন হুমায়ুন। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ রয়েছে নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও। খোলাখুলি জানান, দলের নেতা মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারী খুবই সাহায্য করেছেন। জেলার মন্ত্রী সুব্রত সাহা রেজিনগরে মিটিং করে চলে গিয়েছেন। তৃণমূলের অন্য দুই জেলা নেতাও আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। তার পরেই বলেন, “দলের একাংশ তেমন সক্রিয় ছিল না। জেলা নেতৃত্বও খুব দুর্বল। তবে আমি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না। আড়াই মাস হল দলে এসেছি। সে-ভাবে সকলকে ভাল চিনিও না।” এ বার খানিকটা দার্শনিক মন্তব্য হুমায়ুনের, “নির্বাচনে হারা-জেতা আছে। আমি এ-সব নিয়ে কিছু ভাবছি না। ভাবছি, শনিবারেও মহাকরণে আসব। সব কাজ করব।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু এ দিন মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি বলেন, “হুমায়ুনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি তৃণমূলের কোনও নেতার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেননি।” মুকুলবাবু জানান, মে মাস পর্যন্ত মন্ত্রী থাকার সুযোগ আছে হুমায়ুনের। আর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতা সুব্রত সাহা বলেন, “গোটা জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আন্তরিক ভাবেই হুমায়ুনের হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন। ফলাফল দিয়ে এখানে তৃণমূলের শক্তিকে পরিমাপ করা যাবে না। বোঝা যাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.