উত্তর কলকাতা
যেখানে খুশি...
জলহীন স্রোত
প্রকৃতির ডাক। সাড়া দেওয়ার জায়গাও পেলেন। কিন্তু জল? অভিযোগ, এ শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে যত্রতত্র গড়ে ওঠা অধিকাংশ প্রস্রাবাগারেই এর ব্যবস্থা নেই। নেই সাফাইয়ের ব্যবস্থাও। ফলে নোংরা হচ্ছে শহর। ছড়াচ্ছে দূষণও।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে সুলভ শৌচালয়ের সংখ্যা ২৪৬। এমনিতেই এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। অভিযোগ উঠেছে, এর মধ্যে অনেকগুলি আবার অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এই অভাব মেটাতে পুরসভার অনুমতি ছাড়াই যত্রতত্র প্রস্রাবাগার তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জলের ব্যবস্থা নেই। নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না।
ধর্মতলা খিদিরপুর
পুরসভার একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্থানীয় দাবিতে অনুমতি ছাড়াই নানা সংগঠন বা রাজনৈতিক দল এ ধরনের প্রস্রাবাগার তৈরি করে। অনেক সময়েই ফুটপাথ দখল করে প্রস্রাবাগার তৈরি হয়। পুরসভার বস্তি দফতরের এক আধিকারিক জানান, জলের ব্যবস্থা ছাড়া প্রস্রাবাগার তৈরির অনুমতি দেওয়া যায় না। এ রকম কয়েকটি প্রস্রাবাগার পুরসভা ভেঙেও দিয়েছে। কয়েকটি জায়গায় জল ও পরিষ্কার করার ব্যবস্থা থাকায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, নানা জায়গায় সুলভ শৌচালয় তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় জমি জটে সুলভ তৈরি আটকে গিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুলভ তৈরির পরে তা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে পরিচালনার জন্য হস্তান্তর করা হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতায় এই হস্তান্তর সম্ভব হয়নি। কয়েকটি জায়গায় আবার সুলভ তৈরির পরে বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের সংযোগ না হওয়ার জন্য ব্যবহার শুরু হয়নি বলেও এক পুর-আধিকারিক জানিয়েছেন।
হাতিবাগান বেনিয়াপুকুর
প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে এ ধরনের প্রস্রাবাগার গড়ে উঠছে? কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব জায়গায় সব সময় নজর রাখা সম্ভব নয়। যেখানে জানতে পারা যাচ্ছে সেখানে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আরও সুলভ তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে জমি পাওয়ার ব্যাপারে সমস্যা হচ্ছে।”
রয়েছে অন্য সমস্যাও। পুরসভা সূত্রে খবর, সুলভ চালানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী পুরসভাকে অর্থ দেয়। সংগঠনগুলি আবেদনের ভিত্তিতে অনুমতি পায়। পুরকর্তৃপক্ষ সংস্থাগুলিকে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর পরেই সংগঠনগুলি বেঁকে বসে। তাঁদের দাবি, এটি ব্যবসার মধ্যে পড়ে না। এর পরে পুরসভা পদ্ধতি সরলীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযোগ, সে কাজ এখনও হয়নি। তা ছাড়া কয়েকটি জায়গায় সুলভ তৈরির পরে বাসিন্দাদের আপত্তিতে তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য জায়গা পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
কুমোরটুলি দত্তবাগান
মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার বলেন, “নানা জায়গায় সুলভ শৌচালয় তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও অনেক জায়গায় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। পরিকাঠামোরও সমস্যা রয়েছে। পুরসভা ও নানা সরকারি দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। অনুমতি ছাড়া প্রস্রাবাগারগুলির ব্যাপারে বরো-তে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” স্বপনবাবুর দাবি, জমি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর ও বিভিন্ন বরো আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজা মণীন্দ্র রোড, তেলেঙ্গাবাগান, বেনিয়াপুকুর, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং বেহালা এলাকায় সুলভ শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য ও স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.