পূর্ব কলকাতা
পুর-উদ্যোগ
হুলে বাঁধন
ডেঙ্গি-সহ মশাবাহিত রোগের ভয়াবহ সংক্রমণের পরে পেরিয়ে গিয়েছে এক বছর।
মশা নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামো সংস্কারের পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি এখনও। প্রশাসনের দাবি, সচেতন নন বাসিন্দারা। অন্য দিকে ফিরে ফিরে আসছে মশকবাহিনীও। ফলে একগুচ্ছ পরিকল্পনা থাকলেও বিধাননগরের মশা-সমস্যা সেই তিমিরেই বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। যদিও এ বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নির্দেশে’ জোরকদমে কাজ শুরু করার দাবি করেছে স্থানীয় বিধাননগর পুর-প্রশাসন।
বিধাননগরের দু’দিকে কেষ্টপুর ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ খাল। আবাসিকদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, জলে স্রোতের অভাবে খাল দু’টি মশার আঁতুড়। পুর-প্রশাসনও এ নিয়ে একাধিক বার সরকারের কাছে দরবার করেছে। দাবি মেনে সম্প্রতি কেষ্টপুর খালে গঙ্গার জল ছাড়ার কাজও হয়। কিন্তু ইস্টার্ন ড্রেনেজ খালের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। অভিযোগ, বিধাননগরের বিভিন্ন জায়গায় গজিয়ে ওঠা অসংখ্য ঝুপড়ির বাসিন্দারা অনেকেই জল ধরে রাখেন। খালপাড় ও ফাঁকা প্লটে আগাছা, ঝোপ-জঙ্গলও নিয়মিত সাফ হয় না। প্রশাসনের দাবি, গত বছর আবাসিক অঞ্চলেই ডেঙ্গির লার্ভা মিলেছিল বেশি। আবাসিকেরা সচেতন না হলে মশার প্রকোপ বাড়বেই।
বাসিন্দাদের একাংশের মতে, সচেতনতার অভাব রয়েছে সত্য। তবে সেটাই মশার দাপট বাড়ার একমাত্র কারণ নয়। পুরসভার গাফিলতির দিকেও আঙুল তুলেছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনু দে বলেন, “নিয়মিত মশার ওষুধ স্প্রে হয় না। যেখানে এক বার স্প্রে করা হয়, সেখানে ফের ওষুধ স্প্রে করা হয় অনেক দিন পরে। তত দিনে মশা ফিরে আসে।” আর এক বাসিন্দা মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়: “এ বার শীত কিছুটা কমতেই ফের মশার উপদ্রব বেড়েছে।”
সমস্যা মোকাবিলায় কর্মীর অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছে খোদ পুর-প্রশাসন। চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “ওয়ার্ড পিছু কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।” কিন্তু কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে সমস্যা মিটবে কী করে? গত বছরে ডেঙ্গি-নিয়ন্ত্রণে নেমে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর ছিল, মশার লার্ভা চিহ্নিতকরণ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশিক্ষণই ছিল না অধিকাংশ কর্মীর। এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণাদেবী বলেন, “সরকারি সহযোগিতায় জোরকদমে কাজ শুরু করেছি। আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পরিকাঠামো উন্নত করার চেষ্টা চলছে। কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, উন্নত যন্ত্রপাতি সরবরাহ, তথ্যসংগ্রহে জোর দেওয়া হবে। তবে, নিজ নিজ বাসস্থান সাফ রাখলে সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব। পুরসভা সেই সচেতনতার প্রচারেই বেশি জোর দিচ্ছে।” চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে একাধিক আধুনিক যন্ত্র কেনা হচ্ছে। এতে কাজের গুণ ও মান বাড়বে।”
বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “সীমিত ক্ষমতা সত্ত্বেও পুরসভার প্রয়াস প্রশংসনীয়। আমরাই সচেতন নই। বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রশাসন ও পুরকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই সমস্যা মিটছে না।”

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.