|
|
|
|
|
|
অন্য আলোয় |
পিছিয়ে নেই ওরাও |
চন্দন রুদ্র |
পাহড়ে চড়া ওর নেশা। বিরাট কোহলির বড় ভক্ত ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র পাপ্পু। মগরাহাটের এক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র স্বরূপ হালদার বড় হয়ে উকিল হতে চায়। এদের মধ্যে মিল একটাই। দুজনেই দৃষ্টিহীন। এমনই এক ঝাঁক ছেলেমেয়ে মাঠে নেমে দৌড়ে বা লংজাম্পে প্রথম হল। কেউ হল দাবায় চ্যাম্পিয়ন। রাজ্যের ১৭টি জেলার ৩২০ জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়াকে নিয়ে এই প্রথম হল রাজ্যস্তরের অ্যাথলেটিক্স ও দাবা প্রতিযোগিতা। আয়োজক ১১৮ বছর পেরনো বেহালার কলকাতা অন্ধ বিদ্যালয়।
উপস্থিত ছিলেন আয়োজক স্কুলের সচিব পঙ্কজকুমার দাস, ইন-চার্জ অশোক মিত্র, স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান মানিকলাল চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন ফুটবলার শান্তি মজুমদার প্রমুখ। আর পাঁচটা সাধারণ ছেলেমেয়ের মতোই প্রতিযোগিতায় নেমে ওরা বুঝিয়ে দিল, দৃষ্টিহীনতা কোনও বাধাই নয়। এরা কেউ আংশিক দৃষ্টিহীন, কেউ একেবারেই দেখতে পায় না।
উত্তর ২৪ পরগনার পাপ্পু জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। পুরুষদের ৫০ মিটার দৌড়ে জুনিয়র বিভাগে প্রথম হয়েছে সে। সিনিয়র বিভাগে প্রথম দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্বরূপ। পড়ে গিয়ে সামান্য আঘাত লেগেছে বাঁ হাঁটুতে। বরফ ঘষে উঠে দাঁড়িয়ে স্বরূপ বলল, “গ্রামে দেখেছি অশিক্ষিত গরিব মানুষের জায়গা-জমি বেদখল হয়ে যায়। উকিল হয়ে তাঁদের পাশে
দাঁড়াতে চাই।” |
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
নবদ্বীপ থেকে আসা খোকন, সান্ত্বনা, শাবিনা, প্রতিমা, শুভ-রা চেন্নাইতে দৃষ্টিহীনদের জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা থেকে একাধিক সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ জিতে এনেছে। আর এক ছাত্র মীর জান শেখ সিউড়ির লখিন্দর বেসরার সঙ্গে যুগ্ম ভাবে পেল দাবায় চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার। দু’জনেরই স্বপ্নের দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ। দাবা প্রশিক্ষক দৃষ্টিহীন নিমাই দাস বললেন, “এই খেলায় বাংলার দৃষ্টিহীন প্রতিযোগীরা এখন জাতীয় স্তরেও ভাল
ফল করছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুতুল মজুমদার ও দীপালি সিংহের এক জনের বাবা রাজমিস্ত্রি, অন্য জনের বাবা করেন চাষের কাজ। প্রথম জন ৫০ মিটার দৌড়ে এবং দ্বিতীয় জন লংজাম্পে সেরা হয়ে খুব খুশি। নবদ্বীপের শুভর মা কলকাতার এক বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। অ্যাথলেটিক করলেও ওর লক্ষ্য বড় সাঁতারু হওয়া। শারীরিক বা আর্থসামাজিক, কোনও প্রতিবন্ধকতাই আটকে রাখতে পারেনি এই সব জন্ম-চ্যাম্পিয়নদের। কলকাতা অন্ধ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক উদয়ন রায়ের কথায়, “শুধু পড়াশোনাই নয়, মাঠে নামলে খেলাধুলোতেও যে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েরা দক্ষ, এই প্রতিযোগিতাই তার প্রমাণ।” তবে শিক্ষক লিসা বন্দ্যোপাধ্যায় আর বাণী দাস দাশগুপ্তের মতে, স্কুলস্তরে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েরা সুযোগ-সুবিধা পেলেও পরে নানা কঠিন সমস্যা আসে। এ বিষয়ে আরও নজর দেওয়া দরকার।
|
|
|
|
|
|