নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গুড়াপ কাণ্ডের পর যতই শোরগোল হোক না কেন, রাজ্যের সরকারি হোমগুলিতে আবাসিকদের উপরে অন্যায়-অত্যাচারের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
এ বার মেদিনীপুরের একমাত্র সরকারি হোমের এক আবাসিকাকে মারধরের অভিযোগ উঠল হোমেরই কয়েকজন আবাসিকার বিরুদ্ধে। প্রহৃত আবাসিকার মা বৃহস্পতিবার লিখিত ভাবে এই অভিযোগ জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্তের কাছে। অতিরিক্ত জেলাশাসকের নির্দেশে হোমে গিয়ে সেদিনই তদন্ত করে এসেছেন সমাজকল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক নীহাররঞ্জন সামন্ত।
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, যে আবাসিকাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে, সেই আঞ্জুমান খাতুনের বাড়ি মেদিনীপুরে। বছর দেড়েক আগে মহকুমাশাসকের (সদর) নির্দেশে তাঁকে হোমে পাঠানো হয়। এখন সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। অন্য দিকে, যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ, তারা আদালতের নির্দেশে হোমে রয়েছে। মারধরের ঘটনাটি ঘটে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে। ওই আবাসিকার অভিযোগ, “৪-৫ জন মেয়ে মিলে আমাকে খুব মারধর করে, অত্যাচার করে। তখন হোমের দু’জন কর্মী এবং সুপারও উপস্থিত ছিলেন।” বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে এসে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন প্রহৃত আবাসিকার মা সুলসান বিবি। অভিযোগ পেয়েই তদন্তের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। তাঁর নির্দেশে ওই দিন দুপুরে হোমে যান সমাজকল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, একটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা নিয়ে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে কয়েকজন আবাসিকার ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়। তারপরই এই ঘটনা। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনও কর্মীর গাফিলতি থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে ওই আবাসিকাকে অন্য হোমে স্থানান্তর করা হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
আবাসিকার এই অভিযোগ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন হোম কর্তৃপক্ষ। হোমের সুপার ভারতী ঘোষের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “যা জানানোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সব মিলিয়ে ৯টি হোম রয়েছে। এর মধ্যে মেদিনীপুরের রাঙামাটির ‘বিদ্যাসাগর বালিকা হোম’ শুধু সরকারি। মূলত, আদালতের নির্দেশে তরুণীদের এখানে রাখা হয়। যারা অনাথ, তাদেরও রাখার ব্যবস্থা আছে। আগেও মেদিনীপুরের এই হোম নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। গত পাঁচ মাসে তিন দফায় আবাসিক পালানোর ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুড়াপ কাণ্ডের পর হোমগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়লেও এই হোমে পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি বলে অভিযোগ। |