মনোরঞ্জন...
সাড়ে ৭৪=৬০
০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩-য় মুক্তি পেয়েছিল উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম ছবি ‘সাড়ে ৭৪’।
ষাট বছর হল ছবির, যাকে হীরক জয়ন্তী বর্ষ না কী সব বলে। তাতেও বাঙালির আফশোস আড়াই হাজার বছর দেরি করে ফেলল কমেডিটা, কারণ কমেডির শাস্ত্রকার অ্যারিস্টটলের দেখা হল না কাজটা। সত্যজিৎ রায় অবিশ্যি দেখে দিব্যি পছন্দ করেছিলেন ছবিকে।
আর আমরা যারা সবে ছবিঘরে ঢুঁ মারা শুরু করেছি, তারা দেখেছিলাম দাদা-কাকা-জ্যাঠাদের সে কী উল্লাস ‘সাড়ে ৭৪’ নিয়ে। যেন মোহনবাগান কী ইস্টবেঙ্গল তিন গোল মেরেছে মহামেডান কী ইস্টার্ন রেলকে।
জ্যাঠা-খুড়োদের বাদ দিচ্ছি, সেই সব দাদার বয়সই এখন সাড়ে চুয়াত্তর। আর আমরা যারা ঠিক তৎকালে আট হপ্তা ধরে উত্তরা, পূরবী, উজ্জ্বলা এবং হ্যাঁ প্যারাডাইসে চলা সুপারহিট মোকাবেলা দেখতে পাইনি সেদিনের সেই জ্যেষ্ঠজনদের বারফাট্টাইকে বুকে ধরে বসে আছি। শুনেছিলাম বটে কী এক নতুন যুগল এসেছে রুপোলি পর্দায়। তবে সে সব দাদাদের কথা।
খুড়ো-জ্যাঠারা মজেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবীতে। আমার থেটারপ্রেমী কাকা তো ফরমান দিয়েই বসেছিলেন, ‘হিরো-হিরোইন তো তুলসী-মলিনা। নতুন যুগলটির তো সাইড রোল।’
আরও কিছু কাল পর নির্মল দে-র তৈরি বায়োস্কোপ দেখে টের পেয়েছিলাম কিছুই প্রায় না করে নতুন যুগলের কী দবদবা, আর কেনই বা আমাদের ঘেঁষতে দেওয়া হল না ওঁদের কাছে। কী মাখোমাখো, ঢলাঢলি কেস জমে আছে ছেলেটি-মেয়েটির মধ্যে!
দৃশ্যত খারাপ কিছুই করছে না। অথচ ওদের কাছাকাছি দেখলেই টের পাচ্ছি পাড়ার দাদারা ছাদ-পাঁচিল ডিঙিয়ে এ সবই করতে যায় পাড়ার দিদিদের সঙ্গে। কী সব? কিছু বুঝি, কিছু বুঝি না। তবে কেমন যেন রোমাঞ্চ হয়। বয়স্ক জনেরা সেই সব দাদা-দিদিদের দাবড়ানি দেন, “উত্তমকুমার হচ্ছ?”, “বড় শখ না? সুচিত্রার চাল ধরেছিস?”
‘সাড়ে ৭৪’ উত্তম-সুচিত্রা কী যে এক হাল শুরু করলেন ভগাই জানে। আজকের ভাষায় বললে ট্রেন্ডসেটিং। তখনকার ভাষায় ছেলেমেয়েদের বখানো। আমার কাকার ভাষায় যা ছিল সাইড রোল, তাতে এমনই মজল যুবক-যুবতীরা যে ওই ছবির মোটে দু’মাস পরে সুচিত্রার নায়কহীন ‘কাজরী’ ছবি মুক্তি পেয়ে চার হপ্তার মধ্যে ভাল গুনাগার দিয়ে পাততাড়ি গোটাল।
পাড়ার দাদারা রায় দিল, ‘‘ধুর, এ বই চলে নাকি? উত্তম কোথায়? সুচিত্রা কার সঙ্গে কী করবে?” অবস্থা কিছুটা সামলে দিলেন বসন্ত চৌধুরী ‘ভগবান শ্রীচৈতন্য’য় সুচিত্রার বিপরীতে এসে। ছবি চলল আট হপ্তা, লাভও দিল ব্যয়ের তিন গুণ। কিন্তু চৈতন্যলীলা মিলোতেই শহরজোড়া প্রতীক্ষা ওই সেই ছেলে-মেয়েটার জন্য।
তবে বাঙালি তো ঠেকেও চট করে শেখে না, তাই বছর ঘুরতে ফের এক ছবি এল নায়কহীন (পড়ুন উত্তমবিহীন) সুচিত্রা সেনকে নিয়ে। নাম ‘অ্যাটম বোম’। সে বোম ফাটার আগে নিঃশব্দে হল ছাড়ল। আর তারই মাসখানেকের মধ্যে বোমটা ফাটাল ‘সাড়ে ৭৪’য়ের সেই ছেলেমেয়ের পাকানো জুটি ‘ওরা থাকে ওধারে’ ছবিতে ফিরে এসে।
ছ’হপ্তার দৌড় আর দু’গুণ লাভ দিয়ে সে-ছবি প্রস্থান করতে একে একে হলে লাগতে লাগল উত্তম-সুচিত্রা জুটির বাঙালি-পাগল-করা নানা রেসিপি। প্রথমে ‘মরণের পরে’, চলল তেরো সপ্তা! তার পর ‘সদানন্দের মেলা’, ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’ আর ‘গৃহপ্রবেশ’।
এর মধ্যে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ তো স্রেফ উত্তম-সুচিত্রার নয়, গোটা বাঙালি যুবকুলেরই অগ্নিপরীক্ষা। ছেলেদের হাঁটাচলা বদলে গেল, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে অতি মন্দ লয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তারা নামানো, ভরানো গলায় প্রতিপ্রশ্ন করা ধরল, ‘আমায় কিছু বললেন?’
আর মেয়েদের তো কথাই নেই, তারা সোজা করে তাকানো ভুলে গিয়ে কথায় কথায় চোখের কোণ দিয়ে চাহনি এনে মনের মতো ছোকরা পেলে বলতে লাগল, ‘শুনুন, একটা কথা ছিল।’ কী কথা? না, সে-ও জানে না, কেউই জানে না। “কী কথা?’’ জিজ্ঞেস করলে শুরু হয়ে গেল সুচিত্রা-চালে বিনুনি দোলানো। আর এই চলল সারা ১৯৫৪ সাল।
আর হিরোশিমা-নাগাসাকি কেসটা ঘটল ১৯৫৫-য় ‘সাঁঝের প্রদীপ’, ‘শাপমোচন’ আর ‘সবার উপরে’ দিয়ে। তত দিনে ছেলেদের চুলে উত্তম ছাঁট জমা হয়েছে। হাফ শার্ট আর ধুতি চলে এসেছে আর মেয়েরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রাগ-অনুরাগের এক্সপ্রেশন হিসেবে চড় প্র্যাকটিস শুরু করেছে।
আমাদের পাড়ার এক ছোকরা একদিন বান্ধবীর চড় খেয়ে এসে কাঁদো কাঁদো মুখে রকে বসে পড়ল। তাতে সব্বাই দেদার উৎসাহে তাকে ভরসা জোগাল, ‘আরে বলাই, কেস তো জমে দই! দে তোর গালে একটু হাত বুলিয়ে নিই।’
কিন্তু এহ বাহ্য। ’৫৬ পড়তে এল ‘সাগরিকা’, পায়ে পায়ে ‘একটি রাত’, ‘ত্রিযামা’, ‘শিল্পী’। দেখতে দেখতে উত্তম-সুচিত্রা জুটির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে আরেক জয়বাংলা জুটি হেমন্ত-সন্ধ্যা। বাংলা বাগ্ধারায় যেমনটা বলে না? একে ঙ তায় তুষের ধুঁয়ো।
রুপোলি পর্দার ছেলেমেয়েটিকে সামলাতেই দম ফাটছে বাঙালির, তার মধ্যে নেপথ্যে থেকে কী যে কল ধরল অন্য জুটি! সাদা-কালোর রুপোলি রঙিন বর্ণছটায় অন্ধকারে একা যখন সুচিত্রা (মনে মনে দেখুন ‘অগ্নিপরীক্ষা’), সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গাওয়া শুরু করলেন ‘কে তুমি আমারে ডাকো, অলখে লুকায়ে থাকো/  ফিরে ফিরে চাই, দেখিতে না পাই’ কিংবা খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাফ হাতা শার্ট আর ধুতির উত্তম লিপ করছেন হেমন্তর (মনে মনে দেখুন ‘শাপমোচন’) ‘ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস আজিকে হল সাথী’বাঙালি সেই চতুরঙ্গ আক্রমণে সোল্লাসে আত্মবলিদান করছে।
এ আমার স্বচক্ষে দেখা, স্বকর্ণে শোনা, নিজের সামান্য বুদ্ধিতে বোঝা এবং স্বহৃদয়ে সহৃদয় ভক্তিতে ধারণ করা। এবং নিজের বাল্যকালের মৃত্যু ঘোষণাই শুনলাম এবং অজান্তে লায়েক হয়ে গেলাম যখন ১৯৫৭-য় ‘হারানো সুর’-এ উত্তমের উদ্দেশে গীতা দত্তর গলায় সুচিত্রাকে গাইতে শুনলাম ‘তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার’।
‘সাড়ে ৭৪’-এ যে-জুটির ইনিংস পত্তন হয়েছিল ১৯৫৩-র ফেব্রুয়ারিতে তা পৌনে চার বছরের মাথায় ১৯৫৭-র পুজোর সিজনে সচিন-সহবাগের ধুন্ধুমার ব্যাটিং চালু করে দিয়েছে।
তত দিনে প্রথম ছবির একটি সংলাপও অমর হয়ে উঠেছে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে চড়ানো ‘মাসিমা মালপো খামু’। আর ঘরে ঘরে তাস-দাবার বৈঠকে-বৈঠকে, গভীর চর্চার বিষয় হয়েছে ‘শাপমোচন’-এর সেই ডায়ালগ ‘বলো বলো তুমি কী চাও? আমার সব তোমায় উজাড় করে দিতে পারি?’ এর উত্তরে বলা, ‘শুধু দশটা টাকা’, আর তার উত্তরে সেই সিনেমা কাঁপানো চড়।
যুগলের প্রথম রসায়নের ইঙ্গিত ‘সাড়ে ৭৪’য়ে
উত্তম সেই চড় খাবার পর গোটা বাঙালি তরুণ সমাজ গালে হাত দিয়ে বসে ছিল। আর এ সবের শুরু সেই ‘সাড়ে ৭৪’য়ে। বাঙালি যুবার অনুচ্চার প্রেম ও ভীরুতার প্রতিষ্ঠা উত্তম-সুচিত্রার নানা ছবিতে, বাঙালি যুবতীর সংশয় মোচন ও স্বনির্মাণও শুরু ‘অগ্নিপীক্ষা’ ও ‘শাপমোচন’ দিয়ে। তবে পরের দিকের হরেক ডাকসাইটে ছবিতে এ জুটি যাই-ই করে থাকুক তার প্রথম রসায়নের ইঙ্গিত কিন্তু ‘সাড়ে ৭৪’য়েই।
পরে যত বার দেখেছি ছবিটা, ততই যেন অবাক হয়েছি এ ছবিতে প্রায় না-থেকেও ওদের সেই সাড়া তোলায়। আমরা চোখ ভরে দেখছি আর ভালবাসছি তুলসী-মলিনাকে আর মনের কোথায় একটা বাসনা কুসুম হয়ে সৌরভ বিস্তার করছেন উত্তম-সুচিত্রা। প্রথম দর্শনেই বাঙালি এঁদের চিনে নিতে ভুল করেনি। তবেই না ’৫৫ সালের গোড়া-গোড়াতেই হলিউডের রবার্ট টেলর-এলিজাবেথ টেলর, গ্রেগরি পেক-অড্রে হেপবার্ন-এর সঙ্গে এঁদের নামও এক নিঃশ্বাসে উঠে আসছে!
তখনও বাঙালি ‘রোমান হলিডে’র হ্যাংওভারে আছে। ১৯৫৫র ২৪ অগস্ট বাঙালিকে এক অন্য সিনেমায় উত্তীর্ণ করল ‘পথের পাঁচালী’।
ওই একই বছরে বাঙালি দেখল ‘শাপমোচন’ আর ‘সবার উপরে’। আর দু’বছরের মধ্যে ‘হারানো সুর’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘পথে হল দেরী’। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ‘ইন্দ্রাণী’, ‘চাওয়া পাওয়া’ আর ‘সপ্তপদী’।
‘অপু’ ত্রয়ীর পাশাপাশি সত্যজিৎ একে একে করছেন ‘পরশ পাথর’ (সেখানেও নায়ক তুলসীবাবু), ‘দেবী’, ‘জলসাঘর’ আর বাংলা ছবির কাহিনি ও নির্মাণ আবর্তিত হচ্ছে উত্তম-সুচিত্রাকে ঘিরে এই দুই সমান্তরাল স্রোতের মধ্য দিয়ে বাঙালি জীবন এগোচ্ছে এক হৃদয় ও মেধার মেলবন্ধনের দিকে।
জীবনানন্দের মৃত্যু হয়েছে ১৯৫৪য়, এর ক’বছর পরে এক পয়সা ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছে কলকাতায়, ১৯৫৮য় শ্রীরঙ্গম থিয়েটার হল ও অভিনয় জীবন হাতছাড়া হয়ে যায় শিশির কুমার ভাদুড়ির, কিন্তু বাঙালি হাসতে ভোলেনি, ভালবাসা ছাড়েনি, নতুন নতুন প্রেম আবিষ্কারে অবসন্ন হয়নি। সে প্রেমে পড়ছে হেমন্ত, মান্না, সন্ধ্যা, লতা, গীতার, গলা ফাটাচ্ছে চুনী-পিকে-বলরামের জন্য। রাত জাগছে রবিশঙ্কর, আলি আকবর, বিলায়েতের বাজনায়, সন্ধেয় যাচ্ছে শম্ভু-উৎপল-অজিতেশের নাটকে, তর্ক জুড়ছে সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল নিয়ে, পড়ছে তারাশঙ্কর-বিভূতি-মানিক। কিন্তু সারাটা সময় বুকের কোথায় একটা তীব্র অপেক্ষা আগামী শুক্রবারের জন্য। যে দিন হয়তো নতুন করে পাওয়া হবে প্রাণের জুটিকে উত্তম ও সুচিত্রা। এত চাওয়া এত পাওয়া এক জীবনে শেষ হয় না বাঙালির।
উত্তম-সুচিত্রা জুটি হ্যালির কমেটের মতো। সেই যে দুশো বাহাত্তর না চুয়াত্তর বছরে এক বার আসে। না কি দু’শো সাড়ে চুয়াত্তরে? ইংরেজিতে যাকে বলে freak, এ জুটিও কি তাই নয়? আমরা বাল্যে রুপোলি পর্দা শব্দটার মানে পেতাম না, তাই নিজেদের মতো মনে করেছিলাম ‘যাতে উত্তম সুচিত্রা আসে’। এই মানেটাও ভুল নয় হয়তো, কারণ এতে একটা অলৌকিকের যোগ আছে। যেমন সিনেমার গোড়াপত্তনকারীদের অন্যতম লুমিয়ের ভাইদের অমন পদবি হল কেন? যে লুমিয়ের-শব্দের মানে হল আলো! বাংলা ছবির সিলভার লাইনিং বলুন চাই রুপোর চামচ, দুইই তো ওঁরা দু’জন। ভুল বললাম?
তুলসী-মলিনা ও উত্তম-সুচিত্রা জুটির জন্য ‘সাড়ে ৭৪’ ছবির আরও কয়েকটা চমৎকার দিক ছায়াচ্ছন্ন থাকে। নির্মল দে-র পরিচালনার কথা বলেছি, বতার মঙ্গলের ছাপ সাড়ে ৭৪।

তাঁরা বললেন
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
‘সাড়ে ৭৪’ বাংলার সর্বকালের এক শ্রেষ্ঠ কমেডি ছবি। আর ও রকম নায়ক-নায়িকা জুটির তো তুলনাই হয় না। নায়ক-নায়িকা বলতে বোঝাচ্ছি, তুলসীবাবু আর মলিনাদেবীকে। পার্শ্ব ভূমিকায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই সংলাপ ‘মাসিমা মালপো খামু’ তো প্রবাদ হয়ে গেছে। আর উত্তমকুমার চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে গিয়েও কিন্তু চমৎকার কাজ করে দেখিয়েছেন। শুধু একেবারে শেষটায় ছবিটা একটু দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে সেখানেও পরিচালক নির্মল দে ব্যাপারটা সামলেছেন যে ‘সাড়ে ৭৪’ তখনকার আর পাঁচটা পাতি বাংলা ছবির মতো হয়ে পড়েনি। সব মিলিয়ে এমন একটা অসাধারণ কমেডি, যে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে। এমন প্রাণখোলা হাসির ছবি কোথায় যাবে! যাকে বলে নির্মল হাসির ছবি, কোনও ধরনের বাঁকাচোরা কথা নেই।
সুপ্রিয়া দেবী
উত্তম-সুচিত্রা জুটি যে কেন এত জমে গেল, সে সময় অতখানি বুঝিনি। আমারও বয়স তখন কম। তবে একটা কথা হল, ওঁদের কেউই জন্মগত অভিনেতা-অভিনেত্রী নন। কিন্তু উত্তম ওঁর ডেডিকেশন দিয়ে কোত্থেকে যে কোথায় চলে গেলেন, তা ভাবনার অতীত।
বাংলা সিনেমায় আর কেউ সেটা পারেননি। কিন্তু জুটি হিসেবে উত্তম ও রমাদি যখন কাজ করেছেন, তখন কী যে এক জাদু ঘটে গিয়েছে, তা ঠিক বলে বোঝানো যায় না। দেখতে সুন্দর ছিলেন, ওঁদের মানিয়ে গিয়েছে নানা ভাবে। কিন্তু তার পরেও যে কী ভাবে এত জমেছিল জুটিটা, সেটা চট করে বোঝাতে পারব না।
বিভাস চক্রবর্তী
উত্তম-সুচিত্রা তো আমাদের যৌবনে আমাদেরই যৌবনের প্রতীক ছিলেন। আর ‘সাড়ে ৭৪’ এমনই একটা সরস ছবি, যার জন্য সেই সময় তিন দিন ধরে লাইন মেরে সাড়ে ছ’ আনার টিকিট কিনে দেখে ফেলেছিলাম। তার পর আর ভুলতে পারিনি। উত্তম-সুচিত্রা জুটি ক্রমশ আমাদের প্রতীক হয়ে উঠলেন ওইখান থেকেই। ওর মতো আরেকটা জুটি তৈরি হল না। আর কেন যে হল না, তার কারণ ও রকম আর হবারই নয়।
স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়
জুটি যদি বলতে হয়, তাহলে তো উত্তম-সুচিত্রাই। আমার অবশ্য অভিনয় পছন্দ উত্তমকুমারের। যদিও নায়ক-নায়িকা জুটি বললেই এসে যাবেন উত্তম-সুচিত্রাই। সেই যে ‘সাড়ে ৭৪’ থেকে দেখা হল, তার পর তো চলতেই থাকল, এখনও তো ক্লান্ত হইনি ওই জুটির ছবি দেখে। বাঙালির অদ্ভুত একটা ভালবাসা মিশে আছে, ওদের এই জুটির সঙ্গে। আর এটাও বলি, ‘সাড়ে ৭৪’ কিন্তু এখনও দেখতে খুব ভাল লাগে। সেটা শুধু ওঁদের জন্যই নয়, গোটা ছবিটার জন্য। কী মিষ্টি ছবি! অসম্ভব ভাল।
বাণী বসু
দুঃখের বিষয় আমি ‘সাড়ে ৭৪’ এখনও দেখিনি। শিগগির জোগাড় করে দেখব। তবে উত্তম-সুচিত্রা জুটি আমার ভীষণ প্রিয়। আর কারই বা না! মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের এত চমৎকার প্রতিফলন ওদের মধ্যে আমরা পাই! ওদের প্রেম-ভালবাসা, মিলন-বিরহ, রাগ-অভিমান, একে অন্যের দিকে তাকানো, সবটাই একটা ঘোরের মধ্যে রেখেছে আমাদের। না হলে ও রকম একটা জুটি আজ অবধি হল না কেন! রোম্যান্টিক জুটি, কিন্তু সব মিলিয়ে আমাদের জীবনটাকে কেমন ভরিয়ে রাখে! আর ও রকম হবে বলেও তো মনে হয় না।
মৈনাক ভৌমিক
শুধু বাংলা ছবি কেন, ভারতীয় ছায়াছবিরই এক সেরা জুটি উত্তম-সুচিত্রা। আজকের দিনেও, আমাদের প্রজন্মের কাছেও এর আবেদন অম্লান। এত রোম্যান্স, এত মজা ওঁদের জুটিতে যে ওঁদের রসায়ন আজও ভাবিয়ে যাচ্ছে। জুটির মজাটা হল, ওঁদের একের সঙ্গে অন্যের প্রতিযোগিতা, ছবিকে যা চালিয়ে নিয়ে যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.