সম্পাদকীয় ২...
মাতুলালয় নহে
ত্সরে তিনশত পঁয়ষট্টি দিন ইলিশ মাছ খাইব, তবে চারাপোনার দরে কেহ এমন দাবি করিলে তাঁহার মুখপানে চাহিয়া মুহূর্তের করুণামিশ্রিত হাসিই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। নরম মনের মানুষরা ভাবিয়া লইবেন, আহা রে, বাজারদরের চাপে বেচারার মাথাটি গিয়াছে। কিন্তু এই দাবির সমর্থনে কেহ আগাইয়া আসিবেন বলিয়া কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু সেই একই ব্যক্তি যদি বলেন, যথেচ্ছ বিদ্যুৎ ব্যবহার করিব বটে, কিন্তু তাহার জন্য অধিকতর বিল চাপাইলে চলিবে না তাঁহার সমর্থনে যে ভিড় জমিবে, বস্তুত জমে, তাহা ভাবিলেই শিহরিত হইতে হয়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত সম্প্রতি সেই ভিড়ের উদ্দেশেই একটি আপাত-অপ্রীতিকর কথা বলিয়াছেন বিল দিতে না পারেন তো বিদ্যুতের ব্যবহার কমান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের পরিবর্তে পাখা চালাইয়া ঘুমান। ইলিশ খাইবার সামর্থ্য না থাকিলে চারাপোনা খান, এই সহজ পরামর্শটির সহিত শীলা দীক্ষিতের পরামর্শের বিন্দুমাত্র ফারাক নাই। তবু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কথাটি অনেকেরই কানে বাজিয়াছে। বি জে পি নেতাদের তো বটেই, অরবিন্দ কেজরিওয়ালেরও। তাঁহারা বিভিন্ন যুক্তি খাড়া করিতে ব্যস্ত। তাঁহাদের একটি কথা স্পষ্ট বলিয়া দেওয়া যাক: আবদার ভাল, তবে তাহা সর্বত্র করা চলে না। সরকার সর্বজনীন মাতুলালয় নহে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের, বণ্টনের খরচ বাড়িলে সেই বাড়তি খরচ গ্রাহককেই বহন করিতে হইবে। দিল্লির বিদ্যুৎ পরিস্থিতি মাত্র কয়েক বৎসর পূর্বেও ভয়ঙ্কর ছিল। দীর্ঘ লোডশেডিংই স্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসাবে গণ্য হইত। এই পরিস্থিতি বদলাইয়াছে। তাহার জন্য যে টাকা বাড়তি খরচ হইতেছে, গ্রাহকরা না দিলে তাহা কোথা হইতে আসিবে?
তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আহ্লাদেপনার প্রবণতা তৈরি হইয়াছে, তাহা কিন্তু স্বয়ম্ভূ নহে। রাজনীতিকরাই নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে এই সর্বনাশটি করিয়াছেন। এক মুখ্যমন্ত্রী যেমন গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন বাসের ভাড়া দুই টাকা বাড়িলে মানুষ বাঁচিবে কী উপায়ে? রসিক জনে বলিবেন, উদ্বেগ যতখানি মানুষের জন্য, তাহার অনেক বেশি নিজের পায়ের নীচের রাজনৈতিক মাটির জন্য। সব নেতাই এই অসুখে ভোগেন। কেহ অল্প, কেহ বিস্তর। তাঁহাদের অসুখের দায় এই দেশকে মিটাইতে হয়। পরিষেবার বিনিময়ে যথার্থ মূল্য দিব না এই মানসিকতাটি দিনে দিনে, রেলের ভাড়া বাড়িতে না দিয়া, গ্যাসের দাম চাপিয়া রাখিয়া, বিদ্যুতের মাশুলে বিপুল ভর্তুকি দিয়া গড়িয়া তোলা হইয়াছে। যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাজারদরে বাতানুকূল যন্ত্র কিনিতে দ্বিধা করে না, তাহারাই বিদ্যুতের মাশুল দেওয়ার নামে খেপিয়া উঠে এমন দ্বিচারিতা রাজনৈতিক প্রশ্রয় ভিন্ন হয় না। অভ্যাসটি পাল্টাইবার সময় আসিয়াছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কিছু চেষ্টা করিতেছেন। সত্য কথাটি বলিবার জন্য শীলা দীক্ষিত ধন্যবাদার্হ। বিদ্যুতের বিল দিতে সমস্যা হইলে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাইতে হইবে বইকী। এই কথাটি কেন কাণ্ডজ্ঞানে কুলায় না, তাহা বলিয়া দিতে হয় ইহাই বিস্ময়। অবশ্য, মাতুলালয়ে কিছু আবদার তো স্বাভাবিক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.