সিনেমা সমালোচনা ২...
ফুটবলের ডানা আরও মেলতে পারত
সেই ১৯৭৮-এ হয়েছিল ‘স্ট্রাইকার’। আর ‘সাহেব’ ১৯৮১-তে। (মোহনবাগানের ১৯১১-র ঐতিহাসিক শিল্ড জয়কেন্দ্রিক ‘এগারো’ কার্যত তথ্যচিত্র) তার পরে ফুটবল খেলাটাকে মুখ্য চরিত্রে রেখে বাংলা সিনেমা ফিরে এল। আর সেটাও দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটা মাঠ। লেকের মাঠ। উত্তর কলকাতার সরু গলির হাত ধরে। আউটডোর বলতে বড়জোর বোলপুর। যখন কি না শু্যটিং বলতেই বাংলা সিনেমা দৌড়চ্ছে মালয়েশিয়া, ইতালি, মিশর এমনকী আইসল্যান্ড!
প্রযোজক নতুন। পরিচালক জুটি নতুন। নায়ক নতুন। প্রথম শটেই তেকাঠিতে বল ঢোকাতে পারার মতো ছবির তিন নতুন-ই প্রথম ‘শটে’ কিন্তু ‘গোল’ দিতে পেরেছেন। ছবির ভাবনার মধ্যেই যেন চমকের সন্ধান। প্রয়াত বিখ্যাত সাহিত্যিক তথা ক্রীড়া সাংবাদিক মতি নন্দীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘বাইসাইকেল কিক’! ‘স্ট্রাইকার’, ‘স্টপার’, ‘কোনি’-র স্রষ্টার নামেই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রও রয়েছে পরিচালক দেবাশিস সেনশর্মা আর তাঁর সহকারী সুমিত দাসের ছবিতে।
ছবির দৃশ্যায়ন নজরকাড়া। একেবারে শুরুতে ক্রেডিট টাইটেলেই একটা নতুনত্বের স্বাদ মেলে। জয় সরকারের সুরে অনেকগুলো গান আছে ছবিতে। যার মধ্যে অনুপম আর সোমলতা-র আলাদা গাওয়া ‘ইচ্ছে ডানা মেলে’ বিশেষ শ্রুতিমধুর। ‘মতি নন্দী থিম’ কিংবা একটা গানের মধ্যে ‘সব সেরার খেলা বাঙালির তুমি ফুটবল’বিখ্যাত গানটাকে ট্রিবিউট হিসেবে ব্যবহারের মধ্যে একটা অন্য রকমের মুন্সিয়ানা আছে।
বাইসাইকেল কিক
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ, ঋদ্ধিমা, ঋত্বিক
শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর ব্যাপারটা অবশ্য একটু বাড়াবাড়িও লাগে। যখন ছবির ফুটবলার-নায়ক রুবায়েতের (সৌরভ) কোচ মতি-কে (ঋত্বিক) তাঁর মেন্টর (সৌমিত্র) ‘ফেলু’ বলে ডাকেন। কিংবা পাল্টা মতি তাঁকে ডাকে ‘সিধুজ্যাঠা’ নামে। রুবায়েতের পাড়ার রকে গুলতানিতে ব্যস্ত চার যুবকের দলও বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত পটলডাঙা-র আদলে। ছবিতে চার জনের নামও প্যালা-হাবুল-ক্যাবলা-টেনিদা।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রটা নিছক একজন মনস্তত্ত্ববিদ, না ফুটবল দলের সাপোর্ট স্টাফের কেউ ঠিক পরিষ্কার নয়। যেমন স্পষ্ট নয় ছবির একাধিক ফ্রেমিংয়ের অন্তর্নিহিত অর্থ।
যদিও ফুটবলের সিনেমার মধ্যে নায়ক-নায়িকার প্রেমের দৃশ্যায়নগুলো যথাযথ। এই পর্বে ঋদ্ধিমা বেশ সাবলীল। ঋত্বিককে ছবিতে রক্তমাংসের ফুটবল কোচ লেগেছে।
ছোট্ট চরিত্রে সৌমিত্র যথারীতি নিখুঁত। ফুটবলার-নায়কের বাবার চরিত্রের আশঙ্কা-বেদনা-আশা-আনন্দ দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ে আরও বেশি ফুটে উঠবে আশা ছিল।
ছবির নায়ক রুবায়েত। ছবিটাও রুবায়েতেরই গল্প। ছোট থেকে তার বড় ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন। প্রথমে সেই স্বপ্নে ধাক্কা। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, দুর্বিনীত, হামবড়া ভাবের অভিশাপে। সঙ্গে ডোপিং করার অপবাদ। যে মিথ্যেকে চিরে রুবায়েতকে সফল ভাবে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে কোচ মতি নন্দী। নিঃসঙ্গ রুবায়েত শহরে এসে অবশেষে হ্যাটট্রিক পায় কোচ। প্রেমিকা। ফুটবল।
রুবায়েতের লড়াইকে রীতিমতো লড়েই পর্দায় দাঁড় করিয়েছে তরুণকুমারের নাতি (মেয়ের ছেলে) সৌরভ। ‘২৬ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ডান পায়ের ইনস্টেপে বল রিসিভ করা’র মতো নিখুঁত না হোক, প্রথমবার নায়কের চরিত্রে তিনি যথেষ্ট সাবলীল। আসলে রক্তেই তো অভিনয়!
ছবির কিছু কিছু সংলাপ মনে দাগ কাটার মতো। ‘ফুটবলের জার্সি গায়ে দেওয়ার সুযোগ খুব বেশি মানুষের হয় না। যাদের হয় তারা ঈশ্বরের বরপুত্র’রুবায়েতকে বলা তাঁর কোচ মতি নন্দীর ডায়ালগ। কিংবা ‘ব্যালেন্স হারাস না’সাহিত্যিক মতি নন্দীর সেই বিখ্যাত লাইনকে ছবিতে নায়কের গ্রামের কোচের মুখে শোনাটা এই ছবি দেখার একটা প্রাপ্তি তো বটেই।
ছবিতে দুটো মাত্র ফুটবল ম্যাচ আছে। একটা নায়কের হারার ম্যাচ। একটা জেতার। কিন্তু ফুটবলার নায়ক কী ভাবে কোচ মতি নন্দীর প্র্যাক্টিসে নিজেকে বিজয়ী করে তুলল তার দৃশ্যায়ন কোথায়? কেনই বা তাঁকে জিরো থেকে হিরো হয়ে ওঠার জন্য শেষমেশ পেনাল্টি গোলের আশ্রয় খুঁজতে হল? ফুটবলের ছবি কিন্তু এখানে লাল কার্ড খেয়ে থাকছে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.