এক দিন আগেই পাঁচ নেতার কমিটি গড়ে দিয়ে তৃণমূল বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, স্কুলে-স্কুলে তাঁরাই প্রার্থী বাছাই করবেন। অথচ শুক্রবার বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে পরিচালন সমিতির সম্পাদক পদে অন্য গোষ্ঠীর কাছে হেরে গেলেন কমিটির মনোনীত প্রার্থী। ফের প্রকাশ্যে চলে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
এ দিন ভোটাভুটির আগেই কমিটির পাঁচ নেতা পরেশ সরকার, সুশান্ত ঘোষ, নিহারেন্দু আদিত্য, খোকন দাস ও উত্তম সেনগুপ্তের সই করা একটি কাগজ ওই স্কুলে বিলি করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, পরিচালন সমিতির সম্পাদক পদে তাঁদের প্রার্থী সোমা মজুমদার। তা সত্ত্বে ৭-৫ ভোটে সোমাদেবীকে হারিয়ে দেন কিছু দিন আগে স্কুলে ‘শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি’ হিসেবে নির্বাচিত থাকহরি ঘোষ।
কয়েকটি স্কুলে দলের প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা রুখতে বৃহস্পতিবারই বিধায়ক তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে বসে পাঁচ নেতার কমিটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর কথায়, “যে যেখানে পারছে, দলেরই প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ছে। সেটা রুখতে আমি ওই পাঁচ নেতাকে নিয়ে কমিটি করে দিয়েছি। কে কোন স্কুলে কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা তাঁরাই ঠিক করবেন।”
মন্ত্রীর এই প্রচেষ্টা অবশ্য মাঠে মারা গিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ভোট নিয়ে বৈঠকে প্রথমে শহরের অন্যতম নেতা সুব্রত কুশারীর নাম নিয়ে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু কমিটির পাঁচ নেতা তা না মেনে সোমাদেবীকে প্রার্থী করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী বলেন, “পরিচালন সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদ নির্বাচন নিয়ে কোনও ভোটাভুটি হয়নি। কিন্তু সম্পাদক পদে ভোটাভুটি হয়। ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১২ জন উপস্থিত ছিলেন। থাকহরিবাবু সাতটি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।”
কমিটির পরেশ সরকার বলেন, “কেন আমাদের মনোনীত প্রার্থী জিতলেন না, বলতে পারব না। আশা করেছিলাম, কেউ ওঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। কিন্তু তা হল না!” থাকহরিবাবু বলেন, “সকালে স্কুলে একটি কাগজে একটা বয়ান ছড়ানো হচ্ছিল। তাতে পাঁচ নেতার নাম ছিল। বলা হয়েছিল, সকলে যেন দলের প্রার্থী সোমাদেবীকে ভোট দেন। কিন্তু সেটি সাদা কাগজ, দলের লেটারহেড নয়। সেটিকে কেউই তেমন গুরুত্ব দেননি। আমাকেও দলের তরফে ভোটে না দাঁড়ানোর ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।”
জেলা তৃণমূল নেতা নিহারেন্দু আদিত্যের ব্যাখ্যা, “আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সাদা কাগজে লিখে পাঁচ জনে মিলে সই করি। তাই লেটারহেড ব্যবহার করার দরকার মনে করিনি।” ভোটের ফলপ্রকাশের পরে স্কুলের পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য তারকনাথ রুদ্র বলেন, “সাদা কাগজে সই করা নির্দেশ মানতে চাননি আমাদের অনেক সদস্যই। চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থীকে জিততে দেওয়া হয়নি।” অপর নেতা সুজিত ঘোষ বলেন, “থাকহরিবাবু যথেষ্ট যোগ্য প্রার্থী। তাঁরই সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল। ভোটারেরা ভুল করেননি।” |