আর পাঁচটা ছাত্রের কাছে পরীক্ষার তিন ঘণ্টা সময় বড্ড কম মনে হয়। সেখানে দুই হাতের কনুইয়ে কলম গুঁজে মনজিৎ মঙ্গর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। কোনরকম সুবিধা ছাড়া। পর্ষদের কাছে আবেদন করলে প্রতিবন্ধীরা উত্তর লিখে দেবার জন্য ‘রাইটার’ পেয়ে থাকে। কিন্তু, মনজিৎ কিছুই পায়নি। বানারহাট গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কাজরি ঘোষ বলেন, “ছেলেটা সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না দেখছি। রাইটার থাকলে তার সুবিধা হত। তবে তার বিষয়ে নির্দেশ আসেনি।” গত বার পাশ করতে না পারায় দ্বিতীয় বার মাধ্যমিকে বসলেও পরীক্ষায় দ্রুত লিখে দেবার জন্য সে যে ‘রাইটার’ নিতে পারে সে কথা স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়নি বলে ওই ছাত্র দাবি করেছে।
বৃহস্পতিবার ইতিহাস পরীক্ষার পর মনজিৎ বলে, “গত বার অঙ্কে পাশ করেছিলাম। তবে অন্যদের মতো লেখা সম্ভব নয়। ‘রাইটার’ থাকলে ভাল হত। সে কথা আমাকে কেউ জানায়নি।” বল্কা পরিমল হিন্দি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দ্র শেখর যাদব অবশ্য যুক্তি দেন, “পঞ্চম শ্রেণি থেকে ওই ছাত্র এ ভাবে পরীক্ষায় বসছে। ও তো রাইটারের জন্য বলেনি। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “ও যে প্রতিবন্ধী তা ফর্মে লিখে দিয়েছিলাম। আশা করি এবার পাশ করবে। না হলে আগামী দিনে রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” |
তবে এ ভাবে লিখে সে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাসী মনজিৎ। ডুয়ার্সের বানারহাট শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ডুডুমারী গ্রামে বাড়ি ওই প্রতিবন্ধী কিশোরের বাড়িতে মা ও নবম শ্রেণির পড়ুয়া এক বোন রয়েছে। ছোট বেলায় তার বাবা নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তার এক দাদা ভিন রাজ্যে দিনমজুরি করে যা রোজগার করে সংসারে যে টাকা পাঠান, তা দিয়ে বাড়ির তিন জনের খাবার জোটে। দু হাতের কনুইয়ের পর থেকে হাতের বাকি অংশ বিহীন অবস্থায় মনজিতের জন্ম হয়।
সে ভাবে ওই ছাত্র গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে কলাবাড়ি গ্রামে পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে চেপে স্কুলে যাতায়াত করে এসেছে অর্থাভাবে গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়তে পারেনি সে। ওই প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর মা তানিসা মঙ্গর বলেন, “বহু কষ্টে দিন গুজরান হয় আমাদের কষ্টে থেকেও আমার দ্বিতীয় সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে তাকে কেউ লিখে দিলে তো গত বার সে পাশ করত।” বানারহাট ১ পঞ্চায়েতের সদস্য কাঞ্ছা ছেত্রী বলেন, “কী ধরণের কষ্টের মধ্যে মনজিতের পরিবার দিন কাটায় তা আমরা জানি প্রাইভেট টিউশন পড়ার মত টাকা নেই। এমন কি পড়াশোনা দেখিয়ে দেবার মত কাউ কে না পেয়ে ও যে ভাবে মাধ্যমিকে বসেছে তা ভাবা যায় না।” |