গত কয়েক বছরে প্রাচীন বাজারটা বদলেছে অনেকটাই। কিন্তু গড়ে ওঠেনি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন কাটান দোকানিরা। আগুন লাগলে প্রাথমিক ভাবে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে কারণে বাজারের মধ্যে অন্তত একটি জলাধারের দাবি তাঁদের অনেক দিনের। কিন্তু এখনও সেই ব্যবস্থা হয়নি।
কলকাতার সূর্য সেন বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ১৯ জনের মৃত্যুর পরে চন্দননগরের রথতলার কাছে জি টি রোড ঘেঁষা লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের দোকানিরা তাই অবিলম্বে বাজারের মধ্যে জলাধারের দাবি তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, এই ক’বছরে বাজারের পরিকাঠামোর অনেক বদল হলেও বাকি রয়েছে জলাধার নির্মাণ। সেটা হলে আর আগুনের আতঙ্কে ভুগতে হবে না। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য জলাধার নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রাচীন বাজারটিতে প্রায় ৮০০ দোকান রয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে, রাতে এখানে কেউ থাকেন না। তাই কলকাতার সূর্য সেন বাজারের মতো রাতে আগুন লাগলে প্রাণহানির আশঙ্কা না থাকলেও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, অনেক টাকার মালপত্র নষ্ট হবে। বাজারটি পরিচালনা করে ব্যবসায়ী সমিতি। পরিকাঠামোগত দেখভাল করে চন্দননগর পুরসভা।
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, গত কয়েক বছরে ওই বাজারে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছে। আগে বাজার জুড়ে অসংখ্য তারের জাল দেখা যেত। এখন সে সব অতীত। বাজার এলাকা নিয়মিত ভাবে সাফসুতরো করার কাজ হয়। নিকাশি ব্যবস্থারও উন্নতি সাধন করা হয়েছে।
বাজারের মাছ বিক্রেতা দুলাল খাঁড়া বলেন, “এখানে অনেক অব্যবস্থারই সুরাহা হয়েছে। শুধু অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাটাই গড়ে ওঠেনি। তা হলে আমাদের আতঙ্ক কাটবে।” কাপড়ের দোকানদার অসিত সাহাও বলেন, “প্রাচীন এই বাজারের সুনাম হুগলি জেলার সর্বত্র। এখানে বর্তমানে নিকাশি থেকে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সবেরই সুবন্দোবস্ত হয়েছে। শুধু আগুন লাগলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার বন্দোবস্ত হলে আমাদের আতঙ্ক কাটবে।” প্রায় একই বক্তব্য আরও অনেক দোকানিরই। তবে, তাঁরা কেন নিজেদের উদ্যোগে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কেনেননি, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বলরাম বণিক বলেন, “আমরা চাই বাজারের দু’প্রান্তে দু’টি জলাধার নির্মাণ করা হোক। তা হলে কখনও আগুন লাগলে অন্তত প্রাথমিক ভাবে আগুন প্রতিরোধ করা যাবে। এ ব্যাপারে পুরসভাকেও অনেক বার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কিছুই হল না।”
চন্দননগর পুরসভার মেয়র তৃণমূলের রাম চক্রবর্তী বলেন, “ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের জলাধারের দাবিটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই ওখানে তা গড়া হবে। ইঞ্জিনিয়াররা বিষয়টি দেখছেন। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীরা যাতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কেনেন, সে ব্যাপারে তাঁদের উৎসাহিত করা হবে।”
তবে, বাজারের ক্রেতারা মনে করছেন, এখানে আগুন লাগলে নেভানো সমস্যা হবে না। কেননা, বাজার থেকে অল্প দূরেই গঙ্গা। তা ছাড়া, চুঁচুড়া দমকল কেন্দ্র বা শহরের লিচুতলা দমকল কেন্দ্রও কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে। বাজারকে ঘিরে যে রাস্তাগুলি রয়েছে, সে সব রাস্তায় দমকলের ইঞ্জিন অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে। |