সম্পাদকীয় ২...
মহানগরী বারণাবত
বারণাবত কলিকাতায় আরও একটি জতুগৃহ ভস্মীভূত। অগ্নিদগ্ধ হইয়া আরও জনা বিশেক মানুষের মৃত্যু। এমন জতুগৃহ যদি মহানগরীর যত্রতত্র সাজানো থাকে, তবে আজ একটিতে, কাল অন্যটিতে আগুন লাগিবেই। কেবল স্ফুলিঙ্গ সংযোগের অপেক্ষা। স্ফুলিঙ্গটি সরবরাহ করিবে কখনও স্টোভের রান্না, কখনও বা শর্ট সার্কিট। মোট কথা নগর কলিকাতায় কখনও বস্তিতে, কখনও বাজারে, কখনও বহুতলে অগ্নিকাণ্ড ঘটিবেই। কারণ শহরের অধিকাংশ বাড়িই দমকলের অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হয়, নির্মাণের পরেও দমকলের তরফে সেগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, খতাইয়া দেখা হয় না। পুলিশ, দমকল, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ প্রোমোটার-ডেভেলপারদের দ্বারা নানা ভাবে তুষ্ট হইয়া নিয়মবহির্ভূত নির্মাণের সময় অন্য দিকে চাহিয়া থাকে। এ ভাবেই কলিকাতা তিলোত্তমা হইয়াছে।
অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ হতাহত হইলে অবশ্য আলাদা কথা। তখন মন্ত্রী-সান্ত্রী-পেয়াদা-পুরসভা-দমকল সকলেই ছুটিয়া আসেন। এ বারেও যেমন মুখ্যমন্ত্রী সপারিষদ আসিয়াছেন। হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থ ঘোষণা করিয়াছেন। সেই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করিয়া দোষীদের বাহির করা ও ভবিষ্যতে অগ্নিকাণ্ড ঠেকাইবার উপায় বাতলানোর কমিটিও গড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। দোষারোপের পালা অবশ্য তদন্তের আগেই শুরু হইয়া গিয়াছে। বর্তমান শাসকরা আপন দায় এড়াইতে পূর্বতন শাসকদের দায়ী করিয়াছেন। কেন একই বাড়িতে অতিদাহ্য পদার্থে মজুত বাজার-দোকান ও মানুষের রান্নাবান্না রাত্রিবাসের ব্যবস্থা থাকিবে, এই প্রশ্নও তোলা হইয়াছে। প্রশ্নটি পুরানো, যেমন পুরানো বেআইনি, অনুমোদন-বর্জিত নির্মাণকে জরিমানা দিয়া আইনসিদ্ধ করিবার পুর-উদ্যোগ। কিন্তু এই সকল প্রশ্নের উত্তর কখনও খোঁজা হয় না। হয়তো সকলেই উত্তর জানেন বলিয়াই খোঁজা হয় না। পুর-এলাকায় বেআইনি নির্মাণের সহিত রকমারি কায়েমি স্বার্থের সংযোগ এত নিবিড় যে, কেহ কেঁচো খুঁড়িতে চাহে না। মৃত্যুর হাহাকারধ্বনি মিলাইয়া গেলেই সব ধামা-চাপা পড়িয়া যায়।
কলিকাতার কেন্দ্রস্থলে ব্যক্তিমালিকানাধীন বহুতল আবাসিক বাড়িতে কেমন করিয়া পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স লইয়া ১৩৬টি দোকান দিনের পর দিন চলিতেছিল, কোন কমিটি তাহার উত্তর দিবে? পুরসভার বিভিন্ন দফতর তো বাড়িটি পাঁচ না ছয় তলা, আবাসিক না বাণিজ্যিক, তাহার অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা উচিত কি উচিত নয়—সে সব প্রশ্নেরও রকমারি জবাব দিতেছে। মুখ্যমন্ত্রী ভবিষ্যতে অগ্নিকাণ্ড ঠেকাইতে কড়া ব্যবস্থা লওয়ার হুমকি দিয়াছেন। কিন্তু তাঁহার সরকারেরও প্রায় দুই বছর হইতে চলিল। এবং তাঁহার দল তৃণমূল কংগ্রেস আরও আগে হইতেই কলিকাতা পুরসভা নিয়ন্ত্রণ করে। পূর্বতন পুর-বোর্ডের উপর দায় চাপাইবার আগে তাঁহার দলীয় নেতারা নিজেদের গাফিলতির দিকটি লইয়া ভাবুন। বছরখানেকের কিছু বেশি আগে আমরি হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনা যে সরকারকে কিছুই শেখায় নাই, তাহা স্পষ্ট। সূর্য সেন মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড হইতেও শিক্ষা হইবে না। কলিকাতা বারণাবতই থাকিবে, তাহার জতুগৃহগুলি গোকুলে বাড়িবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.