খাস মহাকরণের নাকের ডগায় পুড়ে যাওয়া বহুতল বাজারের বেআইনি তলা গজিয়ে উঠলে তা দেখেও দেখে না প্রশাসন। আবার অঘটনের পরে কেউ ত্রুটি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করলে মুখ ফিরিয়ে থাকে সেই প্রশাসনই।
তিন বছর আগের ভয়াবহ আগুনের পরে বারবার প্রশাসনের কাছে দরবার করতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা স্টিফেন কোর্টের বাসিন্দাদের। বড়বাজার নন্দরাম মার্কেটের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, আদালত সাত-সাতটি বেআইনি তলা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিলেও কিছুই হয়নি। বরং সবার চোখের সামনে আর একটি বেআইনি তলার সংযোজন হচ্ছে। কিন্তু স্টিফেন কোর্টের বাসিন্দারা দমকল ও পুরসভার পরামর্শ মেনে, মেরামতিতে নামলেও ছাড়পত্র পেতে হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতে হচ্ছে।
তিন বছর বাদে বাড়ি ফেরার আশায় প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে ১৫০টি পরিবার। অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউ চলে গিয়েছেন মফস্সলে। কাউকে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে হয়েছে। প্রশাসনের সুপারিশ অনুযায়ী, বহুতলটি সারাইয়ের কাজও অনেক দূর সেরে ফেলেছেন তাঁরা। কিন্তু স্টিফেন কোর্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নে পুরকর্তারা দমকলের কোর্টে বল ঠেলছেন। আর দমকল বলছে, পুরসভার শংসাপত্র চাই। |
২০১০-এর ২৩ মার্চ দুপুরে শহরের কেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটে স্টিফেন কোর্টের আগুনে ৪৩ জনের মৃত্যুর পরে শর্তসাপেক্ষে বহুতলটির দু’টি ব্লকে নীচ থেকে চারতলা পর্যন্ত ফ্ল্যাটে লোকেদের ঢুকতে দিতে রাজি হয় প্রশাসন। কিন্তু উপরের ফ্ল্যাটগুলির বিশেষত, এক ও দু’নম্বর লিফ্টের দিকের বাসিন্দাদের বাড়ি ফেরা এখনও দূর অস্ত্।
স্টিফেন কোর্টের বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফের মজবুত করে গড়ে আগুন রুখতে বাসিন্দাদের যাবতীয় সতর্কতার ব্যবস্থা নিতে বলেছিল প্রশাসন। তিন বছরে সেই কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বৃহস্পতিবার স্টিফেন কোর্টে গিয়ে দেখা গেল, এক ও দু’নম্বর লিফ্টের দিকের যে অংশ ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছিল, সেখানে মেঝে ঢালাই করে পাঁচ, ছয় ও সাত নম্বর তলা নতুন করে তৈরি হয়েছে। ওই দিকটার সিঁড়িটাও একেবারে তলা থেকে ফের নতুন করে গড়া হয়েছে।
ফ্ল্যাট-মালিকদের দাবি, পুরসভার সুপারিশ মেনেই এ বছরের গোড়ায় বহুতলটির ঢালাই শেষ হয়েছে। বেরোনোর বিকল্প পথ, জলের ট্যাঙ্ক, পাম্প বসানোর পরিকল্পনায় এখনও দমকলের ছাড়পত্র মেলেনি।
দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “শুধু স্টিফেন কোর্টই নয়, আরও কয়েকটি বহুতলে কী হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখছি।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বাসিন্দাদের ভরসা দিয়ে বলেন, “শীঘ্রই বহুতলটি পরিদর্শনের পরে সংশ্লিষ্ট কর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।” সেটা কবে হবে? বিল্ডিং বিভাগের কর্তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
বাড়ি ফিরতে মুখিয়ে থাকা বাসিন্দাদের তরফে দেবাশিস গুহনিয়োগী বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশ মেনে সব কাজ হয়েছে। আশা রাখছি, সহযোগিতা মিললে বাকিটুকুতেও সমস্যা হবে না।” |