সম্প্রতি রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়লেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়ে দিলেন দুই পক্ষই। এমনকী, তাঁরা সরকারি মঞ্চে পাশাপাশি বসে ‘অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম’ নিয়ে বিভিন্ন সম্ভাবনার দিকগুলি খতিয়ে দেখলেন। বৃহস্পতিবার শহরের সরকারি অতিথি নিবাস মৈনাকে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম একটি সেমিনারে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, সরকারি অফিসারেরা সঙ্গেই অংশ নিলেন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) প্রতিনিধিরাও। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাও করলেন জিটিএ-র প্রতিনিধিরা। আর সেখানে প্রত্যাশিতভাবেই দার্জিলিং পাহাড়ের সাম্প্রতিক বন্ধ, ধমর্ঘটের বিষয়ও উঠে এল।
রাজ্যে মন্ত্রী, সচিবেরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পাহাড় সমস্যার সমাধানের কথা বললেও জিটিএ-র প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অনুষ্ঠানের পর রাজ্যের উত্তরবঙ্গর উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পাহাড়ে একটি স্বশাসিত সংস্থা গঠন হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধি তাতা আছেন। অনেকে ক্ষেত্রে কাজের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা, অসুবিধা ঠিকই। কিন্তু উন্নয়নে তার প্রভাব পড়তে দেওয়াটা ঠিক নয়। এ দিনের অনুষ্ঠানে জিটিএ-র প্রতিনিধিরা এসেছেন। এটা খুব ভাল ব্যাপার।” |
এই অঞ্চলের পর্যটনে পাহাড়ের বন্ধ, ধর্মঘটের প্রভাব পড়বে না বলে আশাবাদী রাজ্যের পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব বিক্রম সেনও। বিক্রমবাবু বলেন, “এটা সাময়িক বিষয় বলেই আমাদের মনে হচ্ছে। সরকারিস্তরে আলোচনায় সমস্যা মিটে যাবে। পর্যটনের যে কাজ নতুন সরকার এই অঞ্চলে শুরু করে তা দ্রুততার সঙ্গে চলছে। সম্প্রতি জিটিএকে ১০ কোটি টাকা পর্যটন খাতে দেওয়া হয়েছে।”
আর জিটিএ পর্যটন সচিব সোনাম ভুটিয়া বললেন, “বন্ধ, ধর্মঘট নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। পাহাড়ের উন্নয়নে পর্যটনের কাজ আমরা জোরকদমে চালাচ্ছি। ১০ কোটি টাকার মধ্যে ৭৫ শতাংশ টাকা পুরানো পর্যটন কেন্দ্র সংস্কারের কাজ হবে। বাকি টাকায় রিকিসম, মিরিক, লাভায় নতুন অতিথি নিবাস হবে। আরও ৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।” সোনামবাবু ছাড়া সেমিনারে উপস্থিতি ছিলেন জিটিএ-র সদস্য দাওয়া লেপচাও।
এ দিনের সেমিনারে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স এলাকায় নদী, পাহাড় এবং সমতলের এলাকাকে কাজে লাগিয়ে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের প্রসার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্যারাগ্লাইডিং, র্যাফটিং, কায়াকিং, সাইক্লিং, ট্রেকিং আলোচনা হয়েছে। ছিলেন দেশের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সদস্যরা। সংগঠনের সভাপতি তেজবীর আনন্দ বলেন, “এই অঞ্চলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করতে সবরকম সাহায্য করব।”
পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব বিক্রমবাবু এ দিন জানান, ইউনাইটেড ন্যাশন ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি ভেনেসা সি সতুর সম্প্রতি রাজ্যে এসেছিলেন। ওঁরা রাজ্যের পর্যটনের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা রাজ্যের হাতে চলে আসবে। তার তা ধরে ধরে কাজ শুরু হবে। সেখানে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম এই বড় অংশ জুড়ে থাকবে। তবে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় যে প্রকল্পগুলি চলছে তা দ্রুত শেষ করা হবে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, শিলিগুড়িতে দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার রক ক্লাইম্বিং ব্যবস্থার কাজ চলছে। এ ছাড়াও শিলিগুড়িকে ঘিরে এই ধরনের নানা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেমিনারে পর্যটন দফতরের ডেপুটি ডাইরেক্টর সুনীল অগ্রবাল-সহ ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দার্জিলিং পাহাড়, সিকিম, নেপাল, ডুয়ার্স থেকে প্রতিনিধিরা সেমিনারে যোগ দেন। |