হতাশ বাজার, সূচক পড়ল ২৯১
মূলধনী বাজারকে আরও চাঙ্গা করতে দাওয়াই চিদম্বরমের
হাত-পা বাঁধা। এক দিকে, আর্থিক সংস্কারের এক গুচ্ছ বিল আটকে রয়েছে সংসদে। অন্য দিকে, ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচন। ঘুরে দাঁড়াতে সাহসী পদক্ষেপের জমি নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে মূলধনের বাজারে (ক্যাপিটাল মার্কেট) অর্থমন্ত্রী যেটুকু করতে পারতেন, তা হল তাকে গুছিয়ে নেওয়া। আর বাজেট পেশ করতে গিয়ে এ দিন ঠিক সেটাই করেছেন পি চিদম্বরম।
কোনও চমক না-দিয়েও, দীর্ঘ মেয়াদে মূলধনী বাজারকে চাঙ্গা করতে এ দিন এক গুচ্ছ ঘোষণা করেছেন চিদম্বরম। যেমন, স্পষ্ট ফারাক করে দিয়েছেন প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি আর বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নির মধ্যে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সেবি-র হাত শক্ত করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেই সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের। দুই বাজারের মধ্যে সাযুজ্য আনতে শেয়ার কেনা-বেচায় কর যেমন কমিয়েছেন, তেমনই নতুন করে কর বসিয়েছেন আগাম পণ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে (কৃষিপণ্য ছাড়া)। সাধারণ মানুষকে বেশি করে শেয়ার বাজারের চৌহদ্দিতে টেনে আনতে প্রশস্ত করেছেন রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিমের পরিসর। বাড়িয়েছেন এই প্রকল্পে করছাড়ের সুযোগ-সুবিধাও। শেয়ার ছাড়াও লগ্নির আওতায় এনেছেন মিউচুয়াল ফান্ডকে। শেয়ার লেনদেনের ধাঁচে সেই বাজারেই ঋণপত্রের (বন্ড) জন্যও আলাদা বিভাগ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ দিন মূলধনী বাজারে পা রাখার পথ অনেক বেশি সরল করতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বিশেষত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির জন্য। যে কারণে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবিকে নথিভুক্তির নিয়ম সরল করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এ বার থেকে সেবি অনুমোদিত কিছু ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্টের মাধ্যমে (যার মধ্যে রয়েছে ব্রোকার সংস্থাগুলি) ওই নথিভুক্তি করা যাবে। আগে তা করা যেত শুধু সেবির মাধ্যমেই। তা ছাড়া, তাদের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে বিদেশি মুদ্রা ডেরিভেটিভে লগ্নি করার। ওই সব সংস্থা এখন থেকে তাদের কর্পোরেট বন্ড এবং সরকারি ঋ
ণপত্রে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র জমা দিয়ে ‘মার্জিন মানি’ মেটানোর ব্যবস্থা করতে পারবে।
বিদেশি আর্থিক সংস্থা (এফআইআই) এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির (এফডিআই) পৃথক সংজ্ঞাও এ বারের বাজেটে ঠিক করে দিয়েছেন চিদম্বরম। তাঁর ঘোষণা, এ দেশে কোনও সংস্থার ১০% পর্যন্ত অংশীদারি একটি বিদেশি সংস্থা কিনলে, তা এফআইআই হিসেবে ধরা হবে। কিন্তু তার বেশি হলে, তা পড়বে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির আওতায়।
পরিকাঠামোয় উৎসাহ দিতে ফিরিয়ে এনেছেন করমুক্ত বন্ডের সুযোগ। আগামী অর্থবর্ষে মোট ৫০ হাজার কোটি টাকার এই বন্ড ছাড়তে পারবে বিভিন্ন সংস্থা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে ওই প্রকল্প। আইডিবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও দেবাশিস মল্লিক বলেন, “আয়ের সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানোয় এই প্রকল্পে লগ্নি করে মোটা অঙ্কের করছাড়ের সুযোগ মিলবে। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট ছাড়াও টাকা রাখা যাবে মিউচুয়াল ফান্ডে।”
এক গুচ্ছ ঘোষণা থাকলেও, তা অন্তত এ দিন খুশি করতে পারেনি শেয়ার বাজারকে। যে কারণে অর্থমন্ত্রী বাজেট পড়তে শুরু করার সময়ে সেনসেক্সের মুখ উপরের দিকে থাকলেও, দিনের শেষে তা পড়েছে প্রায় ২৯১ পয়েন্ট।
এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া অবশ্য মিশ্র। বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে-র অভিযোগ, “এই সব পদক্ষেপ করে বাজারের হাল ফেরানো অসম্ভব। তা ছাড়া, ঘাটতি কমাতে টাকা কোথা থেকে আসবে, সে পথের সন্ধানও বাজেটে নেই।” ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের ডিরেক্টর এস কে কৌশিকের মতে, “শেয়ার লেনদেন কর যে-হারে কমানো হয়েছে, তা শুধু নগদ লেনদেনেই প্রযোজ্য। বর্তমানে মোট লেনদেনের মাত্র ২-৩% নগদে হয়। বাকিটা ডেরিভেটিভে। তাই আশঙ্কা, এ বার বাজার দ্রুত পড়বে।”
উল্টো দিকে, স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান এবং ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখের মতে, “সার্বিক ভাবে দেশের আর্থিক অবস্থা ফেরানোর ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কথা দিয়েছেন রাজকোষ ঘাটতি ক্রমাগত কমিয়ে আনার। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন শিল্প উপকৃত হবে। তাই বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাজার এ দিন পড়লেও ধীরে ধীরে তা চাঙ্গা হবে বলেই ধারণা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.