বাজেট বিরোধিতায় বাম-বিজেপির সঙ্গে একসুর মুলায়ম-মায়াবতীও
ভোট বছরে সরকারের মতো বিরোধীদেরও নজর ছিল বাজেটের দিকে। বাজেট বক্তৃতা চলাকালীনই বিরোধী বেঞ্চ থেকে ভেসে আসছিল নানা আপত্তি। আর বাজেট-পর্ব মিটতেই রে রে করে আসরে নেমে পড়লেন অরুণ জেটলি-সুষমা স্বরাজ-গুরুদাস দাশগুপ্ত-বৃন্দা কারাট-সহ তামাম বিরোধী নেতারা। এমনকী যে মুলায়ম-মায়াবতী গত কাল পর্যন্ত কপ্টার-দুর্নীতিতে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ তাঁরাও বাজেটের সমালোচনায় সরব।
সকলেরই এক সুর, এই বাজেট জনবিরোধী। আম-আদমির নাম নেই!
আয় বাড়িয়ে, খরচ কমিয়ে বেহাল ভাঁড়ার সামলানোই ছিল তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য। তবু তার মধ্যেই মাথায় রাখতে হয়েছে ভোটের অঙ্ক। আর তাই এ দিনের বাজেট থেকে মহিলা, গরিব, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দিতে ভোলেননি চিদম্বরম। কিন্তু তাঁর সেই চেষ্টাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, এই বাজেট লক্ষ্যহীন, বিরক্তিকর এবং নিছক অঙ্কের খেলা ছাড়া কিছুই নয়। সেই প্রসঙ্গেই উঠেছে ‘আম-আদমি’-র কথা। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের কথায়, “আম-আদমির কথা বলেই ভোট দরবারে যায় কংগ্রেস। অথচ চিদম্বরম এ দিন বাজেটে এক বারের জন্যও আম-আদমি শব্দটি উচ্চারণ পর্যন্ত করেননি!” বাজেটে ‘আম-আদমি’ শব্দটি উচ্চারিত না হওয়ায় চিদম্বরমের সমালোচনায় সরব হয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সদ্য গড়া ‘আম-আদমি পার্টি’ও!
অপচয় রোধের লক্ষ্যে চিদম্বরম এ বার বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দে রাশ টেনেছেন। আর সেটিকেই অস্ত্র করে বিরোধীরা বলছেন, এটা আম-জনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। বলছেন, ভোটের লক্ষ্য বড় বড় কথা বলছে সরকার। সামাজিক প্রকল্প নিয়ে ঢাক পেটালেও বাস্তবে তা খরচই করছে না তারা। সামাজিক প্রকল্প, বিশেষ করে একশো দিনের কাজের সাফল্যে ভর করেই দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছিল মনমোহন সিংহের সরকার। এ বারে তাদের তুরুপের তাস খাদ্য নিরাপত্তা বিল। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, পরিসংখ্যানে কারসাজি করে বাজেটে বিপুল বরাদ্দ দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অথচ, একশো দিনের কাজে গত বছর ৩৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ এ বারেও একই রয়েছে! আর খাদ্য নিরাপত্তায় ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা! তাঁদের বক্তব্য, সব মিলিয়ে আগামী অর্থবর্ষে যদি এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখে, তা হলেও প্রতি নাগরিকের কপালে প্রতি মাসে জুটবে সর্বসাকুল্যে আশি টাকার মতো! সরাসরি নগদ হস্তান্তর প্রকল্প নিয়েও সরকারকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা। জেটলি বলেন, “চিদম্বরম যে আর্থিক টানাটানির কথা বলছেন, তার জন্য দায়ী তো ইউপিএ সরকারের নীতিপঙ্গুত্বই! লেনদেন ঘাটতি চিদম্বরমের উদ্বেগ বাড়ালেও তার জন্য দায়ী মনমোহন-সরকারই। বাজেটে যে যে পদক্ষেপ তিনি করেছেন, তাতে রফতানিও বাড়বে না, টাকাও শক্তিশালী হবে না।” সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, বাজেটে মূল্যবৃদ্ধি রোধের কোনও ব্যবস্থা নেই।
সরব বামেরাও। তাদের অভিযোগ, সাধারণ গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য কিছুই নেই বাজেটে। বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, কয়েক হাজার ধনীর উপরে সারচার্জ বসালেও কর্পোরেট জগতকে এ যাবৎ করছাড় দেওয়া হয়েছে ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা! ওই টাকা আদায় করতে পারলেই চিদম্বরম যে হা-হুতাশ করছেন, তা মিটে যেত। বামেদের অভিযোগ, মনমোহন-সরকারের কর্পোরেট দরদই দেশের আর্থিক দুরবস্থার কারণ। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, পেট্রোলিয়াম ভর্তুকি এক ধাক্কায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানোর ফলে ভুগতে হবে সাধারণ মানুষকেই। বাড়বে মুদ্রাস্ফীতিও। কলকাতায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “১০ দফা দাবি নিয়ে শ্রমিকরা দেশ জুড়ে যে দু’দিনের ধর্মঘট করলেন, এই বাজেট সে সম্পর্কে নির্বাক। অথচ, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে।” সরকারের সমর্থক মুলায়ম-মায়াবতীও আজ বাজেটের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, দশ শতাংশ মানুষের জন্য বাজেট করতে গিয়ে কৃষিক্ষেত্রের ৬৫ শতাংশ মানুষকে অবহেলা করেছে সরকার।
শুধু অন্য সুর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের গলায়। বিহারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেন্টার ফর এক্সেলেন্স’ ঘোষণা করার জন্য চিদম্বরমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.