প্রাক্তনের বহু সিদ্ধান্ত বদল বাজেটে
প্রণব-জমানার বিদায় ঘোষণা চিদম্বরমের
রাইসিনা হিলে পৌঁছে তখনও থিতু হননি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। অর্থ মন্ত্রকে ফের পা রেখেই পূর্বসূরির বহু সিদ্ধান্ত বদলাতে শুরু করেছিলেন চিদম্বরম। আজ আরও এক কদম এগোলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তাঁর অষ্টম বাজেট বক্তৃতায় চিদম্বরম যেন বোঝাতে চাইলেন, অর্থ মন্ত্রকে প্রণব-জমানা ভুলে যাওয়াই ভাল! সরাসরি প্রণববাবুর নাম না করলেও প্রকারান্তরে তাঁর বার্তা, বিপথে যাওয়া ছেলেকে এ বার আর্থিক শৃঙ্খলে বাঁধতে চাইছেন তিনি। এবং সে কথা বোঝাতে গিয়ে প্রণব-জমানা প্রসঙ্গে আজ বহু খোঁচাও থাকল চিদম্বরমের বাজেট বক্তৃতায়। তা সে গত বাজেটে যোজনা খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রসঙ্গে হোক বা তলানিতে ঠেকে যাওয়া জিডিপি (গড় জাতীয় উৎপাদন)। সেই সঙ্গে কর ফাঁকি রুখতে প্রণব-প্রবর্তিত জিএএআর (গার) নীতি তো এক রকম হিমঘরেই পাঠিয়ে দিলেন চিদম্বরম!
বাজেট বক্তৃতার গোড়াতেই আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, “গত বাজেটে যোজনা খাতে উচ্চকাঙ্খী বরাদ্দ করা হয়েছিল, আর যোজনা বহির্ভূত খাতে বরাদ্দ ছিল খুবই রক্ষণশীল। কিন্তু বিপুল আর্থিক ঘাটতির মুখোমুখি হয়ে সঙ্গত ভাবে খরচ ছাড়া আমার উপায় ছিল না। কিছু তেতো ওষুধ দিতে হয়েছে। মনে হচ্ছে তার কাজ হচ্ছে।” রাজনীতির কারবারিদের কথায়, পূর্বসূরি সম্পর্কে এর থেকে কঠোর ভাষা আর কী বলতে পারেন এক জন অর্থমন্ত্রী। চিদম্বরম কার্যত এটাই বলে দিলেন যে, গত বছর যোজনা খাতে ও যোজনা বহির্ভূত খাতে বরাদ্দের নীতিই ছিল ভ্রান্ত। যোজনা খাতে গত বাজেটে প্রণববাবু বরাদ্দ করেছিলেন ৫ লক্ষ ২১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অগস্ট মাসে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে চিদম্বরম তার মধ্যে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে দেন। আবার যোজনা বহির্ভূত খাতে গত বাজেটে বরাদ্দ হয়েছিল, ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশ লক্ষ কোটি টাকা।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, প্রণববাবুর সঙ্গে মনমোহন-চিদম্বরমের মতান্তর খুব অস্বাভাবিক নয়। ইন্দিরা গাঁধী জমানার রাজনীতিক প্রণববাবু। তাঁর আর্থিক নীতিতে তাই নেহরুর সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার প্রভাব ছিল। ছিল রক্ষণশীলতাও। প্রণববাবু যত দিন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তত দিন দ্বিতীয় দফার সংস্কার কর্মসূচি শুরুই করতে পারেননি মনমোহন। কিন্তু প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাঁর আমলে নেওয়া অনেক সিদ্ধান্ত রাতারাতি বদলে দিতে শুরু করেন মনমোহন-চিদম্বরম। তার মধ্যে মুখ্য বিষয়ই ছিল প্রণব জমানায় প্রবর্তিত কর ব্যবস্থা।
চিদম্বরম আজ শুধু সেই ব্যবস্থা বদলের কথাই বললেন না। এ প্রসঙ্গে প্রণব-জমানার চাঁচাছোলা সমালোচনাও করলেন। সেই সঙ্গে এ-ও বোঝাতে চাইলেন, বাজার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সুস্থির কর কাঠামো প্রবর্তন করতে চাইছেন তিনি। এই লক্ষ্যে কর ব্যবস্থার প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠনেরও আজ প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। তার পরেই চিদম্বরম বলেন, “২০১১-১২ অর্থবর্ষে প্রত্যক্ষ কর এবং জিডিপি অনুপাত ছিল মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ। পরোক্ষ করের সঙ্গে সেই অনুপাত ছিল মাত্র ৪.৪ শতাংশ। এই অনুপাত যে কোনও উন্নতিশীল রাষ্ট্রের পক্ষে সর্বনিম্ন এবং তা সার্বিক এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন কায়েম করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।” এখানেই না থেমে চিদম্বরম অতীতে তাঁর আমলের সঙ্গে প্রণব জমানার তুলনাও টানেন।
কর্পোরেট সংস্থার কর ফাঁকি রুখতে গত বাজেটে ‘গার’ ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছিলেন প্রণব। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে যেতেই সেই ব্যবস্থা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন মনমোহন। বস্তুত কর ফাঁকি রুখতে যখন প্রণব রক্ষণশীল অবস্থান নেন, তখন চিদম্বরমদের বক্তব্য ছিল, এতে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বরং যে ভোডাফোন সংস্থার থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ে সক্রিয় ছিলেন প্রণববাবু, চিদম্বরম তাদের সঙ্গে রফা করতে তৎপর। আর আজ বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, “গার প্রসঙ্গে অনেক আপত্তি উঠেছিল। তার পর বিশেষজ্ঞ কমিটির বিবেচনা করে গার-এর নিয়মনীতি সংশোধনের জন্য কিছু সুপারিশ করেছে। সরকার কিছু সুপারিশ মেনেও নিয়েছে।” গার-এর ধার কমিয়ে দেওয়ার এই ঘোষণার পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী এ-ও জানান, ওই নিয়ম এখনই প্রয়োগ হবে না। তা প্রয়োগ হবে ২০১৬ আর্থিক বছর থেকে।
স্বেচ্ছায় বকেয়া পরিষেবা কর জমা দেওয়ার যে প্রকল্প আজ চিদম্বরম ঘোষণা করেছেন, তার সঙ্গেও প্রণব জমানার মতান্তর স্পষ্ট। স্বেচ্ছায় বকেয়া কর জমা দেওয়ার প্রকল্প ঘোষণায় আপত্তি ছিল প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর।
রাজনীতির কারবারিদের কথায়, প্রণব-জমানার সমালোচনা করে চিদম্বরম কার্যত একটা চ্যালেঞ্জও নিলেন। অর্থনীতির হাল ফেরাতে ব্যর্থ হলে, কে বলতে পারে কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই সমালোচনা হতে পারে তাঁর সম্পর্কেও। কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার বলেই ফেলেছেন, “এটা একটা খারাপ বাজেট!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.