স্বপ্ন দেখানোর প্রস্তাব সত্ত্বেও হতাশ ছোট শিল্প
তাঁর অষ্টম বাজেটে বৃহস্পতিবার ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি (এমএসএমই) শিল্পকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু তাতেও তিনি মন পেলেন না সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের। হতাশ ছোট-মাঝারি শিল্পের বক্তব্য, আগে বাঁচতে হবে। তারপর তো বড় হওয়ার প্রশ্ন। তাদের দাবি, বেঁচে থাকার নতুন কোনও রসদ নেই এই বাজেটে।
এ ধরনের শিল্প সংস্থা এখন করছাড় বাদেও বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। চিদম্বরমের মতে, সুযোগ থাকলেও অনেক সময়েই ওই সুবিধা হারানোর ভয়ে বহু সংস্থাই ব্যবসা বাড়াতে চায় না। কারণ ছোট-মাঝারি শিল্প থেকে বড় শিল্পের তকমা গায়ে লেগে গেলে আর ওই সব সুবিধা মেলে না। তাই তাদের বড় হতে উৎসাহ দিতেই বাজেটে তিনি জানিয়েছেন, এমন কোনও সংস্থা বড় শিল্পের আওতায় পড়ে গেলেও তিন বছর পর্যন্ত ছোট-মাঝারি শিল্পের ওই সব সুবিধা পাবে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যুক্তি দিলেও ছোট শিল্পের সংগঠন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান মাইক্রো অ্যান্ড স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (ফিসমি) বা ফেডারেশন অফ স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ (ফসমি), ফেডারেশন অফ অ্যাসোশিয়েশন অফ কটেজ অ্যান্ড স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ (ফ্যাকসি)-র মতো বণিকসভাগুলির দাবি, বড় হওয়ার আগে বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করাটাই এই শিল্পের আসল সমস্যা।
ফসমি-র প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য ও ফ্যাকসি-র প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহ-র দাবি, এই বাজেটে তাঁদের পক্ষে আদৌ উৎসাহব্যঞ্জক নয়। বিশ্বনাথবাবুর বক্তব্য, কৃষি-সহ যে-সব ক্ষেত্র অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কম সুদে ঋণ পায়, এই শিল্পের ক্ষেত্রেও সেই সব সুবিধা প্রয়োজন। হিতাংশুবাবুর মতে, উৎপাদন শুল্ক হ্রাস, ভর্তুকি বৃদ্ধি ইত্যাদিও জরুরি। একই সঙ্গে ব্যাঙ্ক ঋণ সহজলভ্য না-করলে বড় হওয়া তো দূরর কথা, বেঁচে থাকাই দায় এই শিল্পের। আর্থিক সমস্যা কমাতে ক’বছর আগে এই শিল্পের জন্য পৃথক শেয়ার বাজার গঠন করা হলেও এখনও তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। ফিসমি-র সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজের দাবি, বাজেটে এই ব্যবস্থার সরলীকরণের কিছু প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। বরং যে সব কারণে সংস্থাগুলি এই ব্যবস্থা সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছে না, সেসব এড়িয়ে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
তিন বছরের ওই আর্থিক সুবিধার জন্য চিদম্বরমের যুক্তিও মানতে নারাজ অনিল। তাঁর দাবি, ওই প্রস্তাব আসলে যত না এমএসএমই-র বড় হওয়ার স্বার্থে, তার চেয়ে বেশি খুচরো ব্যবসায় লগ্নিকারী বহুজাতিক সংস্থাকে সুবিধা দিতেই। তাঁর যুক্তি, নিয়ম বলছে, ভবিষ্যতে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে এ দেশের ছোট-মাঝারি শিল্পের কাছ থেকে ৩০% কাঁচামাল কিনতেই হবে। সে ক্ষেত্রে ছোট-মাঝারি শিল্পকে ব্যবসা বাড়াতে হবে। তাই তাদের উৎসাহিত করতে চায় কেন্দ্র। যদিও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে ছোট-মাঝারি শিল্প যে বিপুল বাজার হাতের নাগালে পাবে, তাকে কেন তারা উপেক্ষা করতে চায়, সে প্রশ্নও উঠেছে। বরং আর্থিক সুবিধা পেলে তা আখেরে শিল্পের বিকাশেরই সহায়ক হত বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
তবে অর্থমন্ত্রীর অন্য কয়েকটি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। যেমন স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (সিডবি)-র ‘রিফাইনান্সিং’ প্রকল্পের তহবিল দ্বিগুণ করে ১০০০ কোটি টাকা করা, বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় দ্বাদশ পঞ্চবাষির্কী যোজনায় ১৫টি ‘টুলরুম’ ও প্রযুক্তি উন্নয়ন কেন্দ্র গড়তে ২২০০ কোটির বরাদ্দ, পণ্য বিক্রির টাকা দ্রুত ফেরত পাওয়ার জন্য বিশেষ প্রকল্পে সিডবিকে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ, প্রযুক্তিগত উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা কেন্দ্র (ইনকিউবেটর) গড়লে সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পের সুযোগ পাওয়া ইত্যাদি।
সাধারণ ভাবে এমএসএমই এই বাজেটে খুশি না-হলেও বস্ত্রশিল্পমহল অনেকটাই সন্তুষ্ট। বস্ত্রশিল্পের জন্য বাজেটে চিদম্বরমের প্রস্তাব, তৈরি পোশাকের উপর উৎপাদন শুল্ক হ্রাস, দ্বাদশ পরিকল্পনায় ‘টাফ’ প্রকল্প অব্যাহত থাকছে। ‘স্ফুর্তি’ প্রকল্প আরও ৮০০টি ‘ক্লাস্টার’-এ সম্প্রসারণ, শর্তসাপেক্ষে বস্ত্র পার্কের জন্য অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ, হস্তচালিত তাঁত শিল্পের জন্য ৬% সুদে ঋণের সুযোগ। বণিকসভা ‘কোটি’-র অন্যতম কর্তা মহেন্দ্র জৈন বাজেটকে স্বাগত জানালেও মনে করান, এ রাজ্যে বস্ত্রশিল্পের প্রসারে সে সব সুযোগ নিতে রাজ্যকে পরিকাঠামো-সহ কিছু ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.