শিক্ষা নিয়ে ক্ষোভ মন্ত্রীর, স্বাস্থ্যে অস্বস্তি রাজ্যের
টানাটানির সংসার। তাই সাধ্যের মধ্যে থাকতে গিয়ে পি চিদম্বরম কিছুটা রাশ টেনেছেন শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে। স্বাভাবিক কারণেই বরাদ্দ অর্থ নিয়ে অসন্তোষের সুর দুই মন্ত্রকেই।
অমর্ত্য সেনের মতো অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের মতো দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য সরকারের অগ্রাধিকার থাকা উচিত প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে। কিন্তু এ দেশে ওই দু’টি মন্ত্রকই সব চেয়ে বেশি উপেক্ষার শিকার হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চলতি বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি হলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষাবিদেরা। অসন্তোষ জানিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী এম এম পল্লম রাজু। যে পরিমাণ অর্থ শিক্ষার অধিকার আইন রূপায়ণ তথা সর্বশিক্ষা অভিযান (প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা) খাতে দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সাহায্যের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে। তাই আমাদের নতুন করে অর্থের জন্য দরবার করতে হবে।”
প্রাথমিক স্কুলগুলিতে মিড ডে মিলের জন্য ১৩,২১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ওই রান্নার জন্য যে অতিরিক্ত গ্যাস সিলিন্ডার প্রয়োজন, তা নিয়ে মুখ খোলেননি অর্থমন্ত্রী। ফলে ওই বিষয়টি আগামী দিনে কেন্দ্র-রাজ্য বিতর্কের কারণ হতে চলেছে বলে মনে করছে মন্ত্রক। সার্বিক ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে মোট ৪৯,৬৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন অর্থমন্ত্রী। উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১৬,১৯৮ কোটি। কিন্তু সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তার প্রেক্ষিতে এই বরাদ্দ কম বলেই মনে করছে মন্ত্রক।
পল্লম রাজু সরাসরি ক্ষোভ জানালেও পোড় খাওয়া কংগ্রেস নেতা তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ অবশ্য বাজেট নিয়ে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। বাজেটে মোট বরাদ্দের (৩৭,৩৩০ কোটি টাকা) মধ্যে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’-এ বরাদ্দ হয়েছে ২১,২৩৯ কোটি টাকা। এই মিশনে ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন’ (এনআরএইচএম) ও প্রস্তাবিত ‘শহর স্বাস্থ্য মিশন’ দু’টিই রয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট বরাদ্দ বাড়েনি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা।
ঠিক এখানেই অস্বস্তি রয়ে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের। সরকারি রিপোর্ট বলছে, ২০১২-১৩ সালে এনআরএইচএম খাতে কেন্দ্রের বরাদ্দ ১৪০০ কোটি টাকার মধ্যে রাজ্য এখনও পর্যন্ত মাত্র আড়াইশো কোটির কিছু বেশি খরচ করতে পেরেছে। মা ও শিশু-র স্বাস্থ্য ও কন্যাভ্রূণ হত্যা রোধের ব্যবস্থার মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কেন্দ্রের দেওয়া টাকার ৮২ শতাংশই খরচ করা যায়নি। হাসপাতালের পরিকাঠামো, গ্রাম ও ব্লক স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি, মোবাইল হেলথ ইউনিট, গর্ভবতীদের জন্য মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট, পিপিপি প্রকল্প, ওষুধ কেনা, প্রচার ইত্যাদি খাতে কেন্দ্র অনুমোদন করেছিল প্রায় ৭৪৫ কোটি টাকা। রাজ্য এখনও টেনেটুনে খরচ করতে পেরেছে ১০২ কোটির মতো টাকা। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের প্রকল্প অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের দাবি, “শহরে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষের জন্য যে বিশেষ সহায়তা দরকার সেটা আমরা উপলব্ধি করেছি। আর তাই শহর স্বাস্থ্য মিশন ২০১৩ নাম দিয়ে একটি প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।”
চিদম্বরম জানিয়েছেন, বয়স্কদের জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যক্রম ২১টি রাজ্যের ১০০টি বাছাই করা জেলায় চালু হবে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে দেড়শো কোটি টাকা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই কার্যক্রমের জন্য এক বছর আগেই দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাকে বাছা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল ও দক্ষিণ দিনাজপুর মহকুমা হাসপাতালে বয়স্কদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড ও আলাদা আউটডোর চালুর কথা ছিল। তার পর আর কাজই এগোয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “ভবন সংস্কারে সময় লাগছে। এমডি ডাক্তারও পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জেলা হাসপাতালে চুক্তি ভিত্তিতে যেতে রাজি হচ্ছেন না।” ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বরাদ্দের কতটা সদ্ব্যবহার করতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.