|
|
|
|
|
মহিলা ব্যাঙ্ক গড়তে পুঁজি
বরাদ্দ এক হাজার কোটি
গার্গী গুহঠাকুরতা • কলকাতা |
|
আঁচলে চাবির গোছা নিয়ে সংসারের চাবিকাঠি করায়ত্ত বহুদিন।
ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার পরে সেই গোছায় চাবির সংখ্যা আরও বেড়েছে।
আর এই চাবি সামলানোর কাজ কতটা নিপুণ হাতে মহিলারা করতে পারেন, তার নিদর্শন দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্প। সরকারি ও বেসরকারি ব্যঙ্ক মিলিয়ে মোট সাতটি ব্যাঙ্কের সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন মহিলারা।
শুধুই দায়িত্বশীল পদে নিয়োগ নয়। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার এক ধাপ এগিয়ে ‘মহিলা ব্যাঙ্ক’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিল। বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “আজ অনেক ব্যাঙ্কের প্রধান মহিলা। কিন্তু শুধু মাত্র মহিলাদের জন্য পৃথক কোনও ব্যাঙ্ক নেই। এমন একটা ব্যাঙ্ক তৈরি করা যায় না, যেখানে মূলত মহিলা ও মহিলা পরিচালিত ব্যবসা ঋণ পাবে? যে-ব্যাঙ্ক মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও মহিলাদের রোজগারে সহায়তা করবে? যেখানে অধিকাংশ কর্মী হবেন মহিলা?”
নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়েই তিনি ঘোষণা করেন, চলতি বছরেই এই ব্যাঙ্ক চালু হয়ে যাবে। প্রাথমিক পুঁজি হিসেবে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তিনি। মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যাঙ্ক ঘিরে ইতিমধ্যেই পক্ষ ও বিপক্ষ তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য সাধারণ ব্যাঙ্কের পরিষেবা নিতে মহিলাদের অসুবিধা কোথায়? বিরোধীদের একাংশের মতে, এ ধরনের পৃথক ব্যাঙ্ক তৈরি করে দিলে লিঙ্গ বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠবে।
তবে এ সব বিরোধিতা উড়িয়ে দিলেন বণিকসভা বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নয়নতারা পালচৌধুরী। বিভিন্ন ক্লাবের চিরাচরিত রীতি ভেঙে উঁচু পদ সামলানোর অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর মত, “অবশ্যই এ ধরনের ব্যাঙ্কের প্রয়োজন রয়েছে। শহরে থাকার সুবাদে আমরা অনেক নাগরিক পরিষেবা পেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের বহু মহিলা তা থেকে বঞ্চিত। সামাজিক কারণেও সবসময়ে তাঁরা ব্যাঙ্কে যান না। মহিলাদের ব্যাঙ্কে সেই আড়ষ্টতা থাকবে না। সহজেই পরিষেবা নিতে পারবেন তাঁরা।”
ব্যাঙ্কিং শিল্পের মহিলা প্রধানরাও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিজয়লক্ষ্মী আইয়ার জানান, ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় সকলকে আনার বিষয়ে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আরও এক ধাপ এগিয়ে ভারতে এইচ এস বি সি-র প্রধান নয়না লাল কিদোয়াই জানান, এই ব্যাঙ্ক পরিচালনার করার জন্য তাঁর মতো অনেক মহিলা ব্যাঙ্ক প্রধানই আগ্রহী হবেন। ভারতে প্রথম কোটি টাকা অঙ্কের বেতন পাওয়া মহিলা হিসেবে তাঁর এই বক্তব্য বিরোধিতা অনেকটাই উড়িয়ে দিল বলে মনে করছে ব্যাঙ্কিং মহল। এঁদের সঙ্গে সহমত জানিয়ে দেশের অন্যতম বেসরকারি ব্যাঙ্ক ‘ইয়েস ব্যাঙ্ক’-এর প্রতিষ্ঠাতা রানা কপূর বলেন, “এটা নিঃসন্দেহে খুবই প্রগতিশীল পদক্ষেপ। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মহিলারা। সেই সঞ্চয় ব্যাঙ্কের পরিধিতে নিয়ে আসতে পারা জরুরি। মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাঙ্ক কাজে আসবে। এখানে স্বর্ণ সঞ্চয় প্রকল্প রাখা উচিত। এই পদক্ষেপ ব্যাঙ্কিং শিল্পের পক্ষেও লাভজনক হয়ে উঠবে।” |
|
|
|
|
|