জয়ের খবরটা তখন ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের আনাচে কানাচে থেকে বামপন্থী কর্মীরা দলে দলে এসে ভিড় করেছেন গণনা কেন্দ্রের বাইরে। এক কর্মী বললেন, “লাল আবির বাজারে পেলাম না। শেষে এই মেটে রঙের আবিরই নিয়ে এলাম।” মাখিয়ে দিলেন অন্য কর্মীদের। এক কট্টর বামপন্থী তো আবিরের রঙ দেখে আঁতকে উঠলেন, “এ তো বিজেপি-র রঙ। গায়ে লাগলে তো অ্যালার্জি হবে।”
|
নাম ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সাকিন সাগরদিঘি। পেশা কলেজ কর্মী। নলহাটি উপনির্বাচনে তিনি ‘ডিশ অ্যান্টেনা’ চিহ্নের প্রার্থী হয়েছিলেন। ভোট পেয়েছেন ১৩৬৮টি ভোট। বললেন, “আগে বামবিরোধী ছাত্র সংগঠন করতাম। দলের টিকিট পাইনি। তাই নির্দলের প্রার্থী হয়েছিলাম। জিতব না জানতাম। অভিজ্ঞতা তো হল। সেটাই বা কম কি?”
|
কলেজে ভোট গণনা চলছে। আর বাইরে বিভিন্ন দলের পতাকা, ফেস্টুন নেই! বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হইহল্লাও নেই। বৃহস্পতিবার রামপুরহাট এক অন্যরকম ভোট গণনা দেখল। ফল ঘোষণা হতেই এক বামপন্থী কর্মী বলে ওঠেন, “ওরে পতাকা ওড়া।” জবাব আসে, “পতাকা কোথায়? থাকলে তো ওড়াব।” সঙ্গে সঙ্গেই কিছু কর্মী কোথা থেকে কয়েকটি পতাকা নিয়ে এসে উড়িয়ে দিলেন।
|
গণনাকেন্দ্রের সদর দরজাতেই পুলিশের বাঁশের ব্যারিকেডে আটকে পড়েছিলেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই পরস্পরকে চিনতেন না। জানতেন না অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয়ও। পুলিশের ভূমিকা ‘এ বার বড্ড বাড়াবাড়ি’, ‘রোদটাও বেশ চড়া’এমনই নানা আলোচনা চলছিল নিজেদের মধ্যে। হঠাৎ ভিতর থেকে প্রথম রাউন্ডের ফল জানাজানি হতেই লাফিয়ে উঠলেন কয়েক জন কংগ্রেস কর্মী। মুখ চুপসে গেল তৃণমূল কর্মীদের। তখনই ওরা বুঝে যান, সকলের রাজনৈতিক পরিচয়। কেটে গেল গল্পগুজব। উল্টে পরস্পরকে দেখে মুখ বেঁকানো শুরু হল।
|
শুধু সময়ের অপেক্ষা। গণনার শেষ প্রহরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল গণনা কেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের। তাঁরা নিজেদের মধ্যেই আবির ছড়িয়ে জয়োল্লাসে মেতে ওঠেন। কেউ কেউ স্লোগান ছুড়লেন, “এক দুই তিন চার, তৃণমূল পাংচার।” হঠাৎই এক কর্মী স্মরণ করিয়ে দিলেন, “চুপ। পাশেই মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। ভুলবেন না, বামপন্থীরা শৃঙ্খলাবদ্ধ দল।”
|
গণনাকেন্দ্রের পাশেই রামপুরহাট হাইস্কুলে চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই প্রতি রাউন্ডে গণনার ফল বাইরে মাইকে ঘোষণাও এ বার ছিল বন্ধ। কর্মীদের উৎসাহে অবশ্য তাতে খামতি ছিল না। কেউ বার বার ভিতরে থাকা সাংবাদিক ও দলীয় কর্মীদের ফোন করে খবর নিচ্ছিলেন। অনেকেই অবশ্য কাছের কয়েকটি টিভির দোকানে ভিড় জমিয়েছিলেন। সেখানে ভোটের সঙ্গে বাজেটের খবর ছিল উপরি পাওনা।
|
জোট ভেঙেও কংগ্রেস ও তৃণমূল গতবারের তুলনায় এ বার বেশি ভোট পেয়েছে। জোট প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭৬০৪৭ ভোট। এ বার কংগ্রেস পেয়েছে ৪৭৫৯৫ ও তৃণমূল পেয়েছে ৪৭০৪১ ভোট। দু’দলের মোট প্রাপ্তি ৯৪৬৩৬। |