কম ভোট পেলেন বাম প্রার্থী। ২০১১-র তুলনায় নয়-নয় করে প্রায় ছয় শতাংশ। কিন্তু তার পরেও সে লাভের কড়ি গাঁটে তুলতে না পেরে আফশোস করছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের একটা বড় অংশ। তাদের নেতা-নেত্রীরা দলের অন্দরে তো বটেই, প্রকাশ্যেও বলে ফেলছেন, “মানুষ এখনও বামেদের চায় না। আমাদের প্রার্থী বাছাই ঠিক হলে, নলহাটি হাত থেকে বেরোয় না।”
নলহাটি উপনির্বাচনে জয়ী ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক চট্টোপাধ্যায়। গতবারের বিজয়ী কংগ্রেস এ বার দ্বিতীয়। তৃতীয় তৃণমূল। কেন এই ফল, তার কাটাছেঁড়ায় বীরভূমে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বই প্রকাশ্যে এসেছে। দলের ভিতরে-বাইরে একটা বড় অংশের ক্ষোভ, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘প্রিয় পাত্র’ তথা নলহাটি পুরভোটে দু’টি ওয়ার্ডে লড়ে পরাস্ত হওয়া বিপ্লব ওঝাকে প্রার্থী করারই খেসারত দিতে হয়েছে তৃণমূলকে। তবে অনুব্রত বা তাঁর ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহরা এ দিনও বলেছেন, “প্রার্থী বাছাই ঠিক ছিল।”
১৪ রাউন্ডের মধ্যে সবে ছ’ রাউন্ড গণনা হয়েছে। তখনই রামপুরহাট কলেজের গণনাকেন্দ্রের তিন তলার ঘর থেকে মাথা নাড়তে নাড়তে নেমে আসতে দেখা গেল জেলা তৃণমূলের এক নেতাকে। কর্মী-সমর্থকদের একটা ছোট জটলা দেখেই নেতা বলে ফেললেন, “কারও প্রিয় পাত্রকে প্রার্থী করার খেসারত দিতে হল দলকে। নতুন মুখ আনলে ভোট কাটাকুটিতে ফরওয়ার্ড ব্লক বেরোত না।” নলহাটি পুরসভার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর একরামুল হক ওরফে তোতা গণনা চলাকালীনই বলেন, “দলকে বলেছিলাম, রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহকে (নলহাটির বর্তমান পুরপ্রধান) এ বার প্রার্থী করা হোক। কেউ শুনল না।” তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “আমাদের প্রার্থী বাছাই ঠিক হয়নি।” নলহাটি পুরসভার উপপ্রধান তৃণমূলের ইমাম হোসেন বলেন, “দেখতে হবে, কোথায়, কী গণ্ডগোল হল!”
কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে নলহাটিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে দলের একাংশ। দলের একাংশ চেয়েছিল, ২০০৬-এর ওই কেন্দ্রের প্রার্থী মনুস্মৃতি দেবনাথই এ বার লড়ুন। জেলায় অনুব্রতবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের বক্তব্য ছিল, ভোট-যুদ্ধে ‘পুরনো মুখ’ বিপ্লববাবুর পরিবর্তে নতুন কাউকে প্রার্থী করা হোক। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু কাউকেও দাঁড় করানো যেতে পারে! কিন্তু দল তাঁদের কথায় কান দেয়নি।
এ দিন মনুস্মৃতিদেবী বলেন, “হারের অন্যতম কারণ, দলের পুরনো কর্মীদের সম্মান ও গুরুত্ব না দেওয়া। আমাদের মতো যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের তো প্রচারেই ডাকা হয়নি!” তাঁর আক্ষেপ, “বামেদের ছয় শতাংশ ভোট কমল। বোঝাই যাচ্ছে, জনতা এখনও বামেদের চান না। খারাপ লাগছে, ঠিক প্রার্থী না দেওয়াতেই সেই সুযোগটা আমরা নিতে পারলাম না।”
বিপ্লববাবু এবং অনুব্রতবাবু অবশ্য বৃহস্পতিবার সারা দিনই এই সমস্ত বিতর্ক থেকে দূরে তারাপীঠে কাটিয়েছেন। প্রার্থী বাছাই-বিতর্ক নিয়ে বিপ্লববাবুর বক্তব্য, “এ সব কথা তো আগে কেউ বলেননি! কর্মীরা চেয়েছিলেন। তাই দল আমাকে প্রার্থী করেছে।” আর অনুব্রতবাবু বলেন, “কে-কী বলল, তাতে আমার কিছু আসে-যায় না। নলহাটিতে আমাদের কিছুই ছিল না। এটা আগামী পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফলের ইঙ্গিত।”
কেন কমছে বাম-শিবিরের ভোট? জয়ী ফব প্রার্থী দীপক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এখনই বলতে পারব না।” তাঁর দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষও সে ব্যাখ্যায় না গিয়ে চেন্নাই থেকে বলেন, “সরকারের কাজকর্মে শাসক দলের প্রতি মানুষের অসন্তোষ যে ক্রমেই বাড়ছে, রেজিনগর এবং নলহাটিতে তৃণমূলের তৃতীয় হওয়া থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে।” আর বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “রাজ্যে নৈরাজ্য বাড়ছে। অন্ধ গলির জীবেরা প্রশ্রয় পাচ্ছে, উৎসাহিত হচ্ছে। মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। এই ফলাফলে তা স্পষ্ট।”
|
|
|
|
প্রার্থী |
দল |
ভোট |
শতকরা |
|
দীপক চট্টোপাধ্যায় |
ফরওয়ার্ড ব্লক |
৫৫,৩৪১ |
৩২.৯৯ |
আব্দুর রহমান |
কংগ্রেস |
৪৭,৫৯৫ |
২৮.৩৮ |
বিপ্লব ওঝা |
তৃণমূল |
৪৭,০৪১ |
২৮.০৫ |
অনিল সিংহ |
বিজেপি |
১২,২১৯ |
৭.২৮ |
|
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় (কংগ্রেস) |
কংগ্রেস-তৃণমূল জোট |
৭৬০৪৭ |
৪৯.০৩ |
দীপক চট্টোপাধ্যায় |
ফরওয়ার্ড ব্লক |
৬০৮৮৭ |
৩৯.২৫ |
অনিল সিংহ |
বিজেপি |
১০৬৫৬ |
৬.৮৭ |
|
|