মাটি উৎসবের আগে কাঁকসা ব্লকের নানা এলাকায় সেচের সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছিলেন অনেক চাষি। তাঁদের অভিযোগ ছিল, উৎসব করতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ, তাঁদের এলাকায় কোথাও পাম্প বিকল হয়ে সেচ বিপর্যস্ত, কোথাও সেচের ব্যবস্থাই নেই। প্রশাসন সে ব্যাপারে উদাসীন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন চাষিরা। এর পক্ষকালের মধ্যেই কাঁকসা ব্লকের সেচ ব্যবস্থার হাল ফেরাতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করল জেলা প্রশাসন।
কাঁকসার বিস্তীর্ণ এলাকা ডিভিসি-র সেচ প্রকল্পের বাইরে রয়েছে। সেই সব এলাকায় চাষের জন্য বৃষ্টিই ভরসা। ক্ষুদ্র কৃষি সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে প্রায় কুড়িটি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প চালু হয়েছে। এক একটির মাধ্যমে সর্বাধিক ৬০ হেক্টর জমি চাষ হওয়ার কথা। সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে মাটির নীচের জল তুলে তা পাইপে করে জমিতে পাঠানো হয়। প্রকল্প গড়ার পরে তা হস্তান্তর করা হয় চাষিদের গড়া উপভোক্তা কমিটির হাতে। সেই কমিটি ঠিক করে কে কতটা জল পাবে এবং সে জন্য কত টাকা দিতে হবে। ওই টাকায় প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ হয়।
মাটি উৎসব যেখানে হয়েছে, সেই বিরুডিহা থেকে দেড়-দু’কিলোমিটার দূরে আমলাজোড়া পঞ্চায়েতের সোকনা গ্রামেও গড়ে উঠেছে এমন গুচ্ছ সেচ প্রকল্প। কিন্তু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুতের বিল বাকি থাকায় একাধিক পাম্প বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বোরো চাষ করতে পারেননি অনেক চাষি। সে কারণে মাটি উৎসব নিয়ে আগ্রহ হারানোর অভিযোগ প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন তাঁদের অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, ডিভিসি-র সেচখাল থেকে সপ্তাহে এক দিন জল মেলে। নীচু জমিতে কোনও মতে সে জল পৌঁছয়। কিন্তু উঁচু জমি জল পায় না। গুচ্ছ সেচ প্রকল্প গড়ার পরে সে সমস্যা মিটেছিল। কিন্তু পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। যাঁদের সঙ্গতি আছে তাঁরা নিজের জমিতে শ্যালো পাম্প বসিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশের সে সামর্থ্য নেই। কাজেই চাষ বন্ধ।
মাটি উৎসবের প্রাক্কালে চাষিদের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসায় বিব্রত জেলা প্রশাসন তড়িঘড়ি আমলাজোড়ার পাম্প সংস্কার ও চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তত দিনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন কাঁকসার অন্য নানা এলাকার চাষিরাও। তাঁরাও অভিযোগ তোলেন, পাকা সেচ ব্যবস্থা গড়ে দিলে ব্লকের হাজার হাজার চাষি উপকৃত হতেন। এর পরেই কাঁকসার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার জেলা পরিকল্পনা কমিটি গোটা জেলায় ৭৬টি গুচ্ছ সেচ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। যার ২০টি গড়ে উঠছে কাঁকসা ব্লকে। এক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত ৩০ হেক্টর জমি চাষ হবে। এর সঙ্গে একটি নদীসেচ প্রকল্পও গড়া হবে কাঁকসায়। বছর খানেক আগে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁকসা ও আউশগ্রামে ডিভিসি সেচখাল সংস্কারের কাজ হয়েছিল। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার একশো দিনের কাজে ডিভিসি-র খালের আরও সংস্কার হবে, যাতে সেচের জল কাঁকসা ছাড়িয়ে আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট পর্যন্ত অনায়াসে পৌঁছতে পারে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “শুধু কাঁকসা নয়, গোটা জেলার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নেই এ দিন বেশ কিছু পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে। খুব শীঘ্র সব ক’টি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।” |