ছাঁদনাতলায় পাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কনেপক্ষের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন মৃতের বাড়ির লোকজন। কনে চন্দনা মাজি, তাঁর দিদি মিঠু মাজি ও পরে চন্দনার সঙ্গে যাঁর বিয়ে হয়েছে, সেই মৃত্যুঞ্জয় গোপের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে খুনের অভিযোগ করেছেন মৃতের ভাই শ্যামল মণ্ডল। চন্দনার বাবা বাদল মাজির যদিও দাবি, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
গত সোমবার আসানসোলের হিরাপুরের করঞ্জবেড়া গ্রামের যুবক পার্থ মণ্ডল পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির বালিতোড়া গ্রামে বিয়ে করতে যান। তাঁর বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, মেয়ের বাড়ির লোকজন শরবত ও মিষ্টি খাইয়ে বরণ করার পরে ছাঁদনাতলায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন পার্থ। মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোতে থাকে। আসানসোলের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হলে মঙ্গলবার ভোরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। সে দিন আসানসোল উত্তর থানার পুলিশের কাছে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে উপযুক্ত তদন্তের অনুরোধ করেছিলেন মৃতের পরিজনেরা। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়। আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল পুলিশকে জানায়, ময়না-তদন্তে প্রাথমিক ভাবে মৃতের শরীরে বিষক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাত্র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সেই রাতেই চন্দনার বাড়ির লোকজন তার দিদি মিঠুর আত্মীয়, রানিগঞ্জের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় গোপের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। পরিবারের দাবি, লগ্নভ্রষ্টা হওয়া থেকে পাত্রীকে বাঁচাতেই অনাড়ম্বর ভাবে এই বিয়ে দেওয়া হয়।
বুধবার রাতে সাঁতুড়ি থানায় গিয়ে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন পার্থর ভাই শ্যামলবাবু। তাঁর অভিযোগ, “মৃত্যুঞ্জয়বাবুর সঙ্গে চন্দনার আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। তাঁর অমতে দাদার সঙ্গে বিয়ে স্থির করেছিল পরিবার। তাই বিয়ের রাতে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খুন করা হল দাদাকে।” শ্যামলবাবুর আরও অভিযোগ, “পুরো ঘটনার ছক কষেছিল চন্দনা, তার দিদি মিঠু ও মৃত্যুঞ্জয়। দাদা অসুস্থ হওয়ার পরেই পরিকল্পনা মাফিক মৃত্যুঞ্জয়কে বিয়ে করে চন্দনা। তাই আমরা ওই তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছি।”
মৃত্যুঞ্জয়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু এ দিন চন্দনার বাবা বাদলবাবু দাবি করেন, “পুরোপুরি মনগড়া অভিযোগ করেছেন পার্থর পরিবার। চন্দনার সম্মতিতেই পার্থর সাথে বিয়ে স্থির করা হয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয় ও চন্দনা আগে কেউ কাউকে চিনতই না।” পেশায় ছোট চাষি বাদলবাবু জানান, অনেক কষ্টে পাত্রপক্ষের দাবি মতো নানা দানসামগ্রীর বন্দোবস্ত করেছিলেন তাঁরা। তাঁর বক্তব্য, “পার্থ অসুস্থ হওয়ার পরে চন্দনাকে লগ্নভ্রষ্টা হওয়া থেকে বাঁচাতে পাত্রের ভাই শ্যামলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু ওঁরা কিছুতেই রাজি হননি। তাই আমাদের আত্মীয়েরা বহু অনুরোধ করে চন্দনাকে মৃতুঞ্জয়ের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে রাজি করায়।”
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন “অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হয়েছে।” পুলিশ জানায়, আসানসোল উত্তর থানা থেকে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট সংগ্রহ করা হবে। পুরুলিয়ার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ময়না-তদন্ত রিপোর্টেই জানা যাবে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল কি না। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে তদন্ত পুরোদমে শুরু করা যাচ্ছে না।” পুলিশ আরও জানায়, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়ে থাকলে তা কোন ধরনের বিষ বা কখন খাওয়ানো হয়েছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মৃতের ভিসেরা কলকাতায় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর চিন্তাভাবনা চলছে। |