সুপ্রকাশ চক্রবর্তী • কলকাতা |
নামে কী বা আসে যায়! গোলাপকে যে নামেই ডাকো, তার খোশবাই যে কে সেই! বলেছিল শেক্সপিয়রের জুলিয়েট। মহাকরণের বাবু-বিবিরা কিন্তু এই নাম-বিভ্রাটেই জেরবার।
সমস্যার সূত্রপাত, ইংরেজির দু’টি অক্ষরে। ই এবং এ। অর্থাৎ ইএ। আদতে এই ‘ইএ’ হল দু’টি শব্দের আদ্যক্ষর। গোটা-গোটা করে বললে ‘এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট’। সরকারি মহলে এই গালভরা শব্দের অভিষেক ঘটছে কাল, শুক্রবার। এত দিন মন্ত্রীর আপ্ত-সহায়ক ও ব্যক্তিগত সহায়কদের সিএ (কনফিডেনশিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট) বা পিএ (পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) বলা হতো। এ বার তাঁরা ইতিহাস হয়ে যাচ্ছেন। তার বদলে পদটির নতুন নামকরণ হচ্ছে ই এ (এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট)।
নতুন নাম হাতে-কলমে চালু হওয়ার আগেই কিন্তু অস্বস্তির সূত্রপাত। ঘনিষ্ঠ মহলে এক মন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন, মহিলা ‘ইএ’ কিছুতেই রাখা যাবে না! “ধুর মশাই! লোককে কী বলা যায়, ব্যাপারটা আমার ‘ইয়ে’র থেকে জেনে নিন!” বলছেন তিনি।
রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সচিবও প্রমাদ গুনছেন। “তবে কি এ বার মন্ত্রীর ঘর থেকে ফোন আসবে ‘আমি মন্ত্রীর ইয়ে বলছি’ বলে?” |
এত দিনের সরকারি রীতি অনুযায়ী, মন্ত্রীদের সিএ পদটি কার্যত রাজনৈতিক সহকারীর পদ হয়ে উঠেছিল। মন্ত্রীদের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাজের মধ্যে সমন্বয় রাখতেন সিএ-রা। বাম আমলে শতাধিক সিএ বা পিএ-র জন্য আজীবন মাসিক পেনশন ও চিকিৎসাভাতা বরাদ্দ করে তৎকালীন রাজ্য সরকার। দু’বছর মন্ত্রীর আপ্ত-সহায়ক থাকলেই ভদ্রস্থ অঙ্কের ভাতা নিশ্চিত।
তৃণমূল সরকার এসে এই ব্যবস্থা রদ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে পুরনো পদগুলিও পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক হয়েছে এক-একটি দফতরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব, বিধানসভার স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলনেতারা এক-এক জন ‘ইএ’ রাখতে পারবেন। সিএ-র মতো স্থায়ী নয়, ইএ হল অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক পদ। একাধিক দফতরের মন্ত্রী হলে মিলবে একাধিক ইএ। আর মুখ্যমন্ত্রীর জন্য থাকছে এক জন স্পেশাল ইএ (বিশেষ প্রশাসনিক সহায়ক)-র ব্যবস্থা।
গোল বেধেছে এই ইএ-দের নিয়েই। সাধারণ কথ্য বুলিতে ইএ হয়ে যাচ্ছে ইয়ে। চাপা অস্বস্তি থেকে প্রকাশ্য ঠাট্টাও শুরু হয়ে গিয়েছে। এটা হওয়ারই ছিল, মানছেন ভাষাবিদেরা। অধ্যাপক পবিত্র সরকারের মতে, দু’টো সম ধ্বনিরূপের মধ্যে এমন ঠোকাঠুকি লাগতেই পারে। এদের বলে ‘হোমোফোন’। বাংলার ইয়ে-র উৎস কিন্তু অভিধানে মিলবে না। বরং কোনও শব্দ খুঁজে না-পেয়েই অনেকে ‘ইয়ে’ বলে থাকেন। পবিত্রবাবু বলছেন, “চলতি কথায়, ইয়ে বলতে কখনও একটু খারাপ ব্যঞ্জনাও থাকে। স্ত্রী বাদে অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে কারও সম্পর্ক থাকলেও ‘তার ইয়ে’ বলা হয়। তাই হাসি-ঠাট্টা হতেই পারে।”
টেলিফোনে ইএ-বিভ্রাটের কথা শুনেই হেসে ফেলেছেন নবনীতা দেবসেন। আনকোরা ইএ-দের নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জবাব এসএমএসে।
‘‘মন্ত্রীর ঘরে কে সেঁধিয়ে?
গোপন ফাইল বগলে নিয়ে?
ও কিছু নয় উনি তো ইএ
আরে মশাই ওই যে, ইয়ে
ইয়ে আছে না, সেই যে ইএ
দেন আমাদের কাজ গুছিয়ে!”
ইএ নিয়ে এই ‘ইয়ে’র জেরে শেষ পর্যন্ত ইএ-দের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। “নতুন পদটির নাম যাঁরা ভেবেছেন, তাঁরাই হয়তো বিপদটা বুঝে নামটা পাল্টে ফেলবেন,” ধারণা পবিত্রবাবুর। আর হাসতে হাসতে নবনীতা বলছেন, “বেশ নাম! সরকারি অফিসে একটু-আধটু নিষ্পাপ হাসি-ঠাট্টা তো ভালই!” |