আজ দাস ক্যাপিটাল না অ্যাডাম
স্মিথ, প্রশ্ন সংসদের আড্ডাতেও

র্থিক সমীক্ষা পেশ করা হয়ে গিয়েছে চিদম্বরমের। সংসদের লবিতে চায়ের আড্ডায় মশগুল সব দলের সাংসদ। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিকে লক্ষ্য করে সীতারাম ইয়েচুরি বললেন, “দাস ক্যাপিটাল আর অ্যাডাম স্মিথের লড়াই কিন্তু থামবে না!”
জেটলিও দমবার পাত্র নয়। কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্লকে লক্ষ্য করে বললেন, “কিন্তু কংগ্রেস তো এটাই ঠিক করতে পারছে না, কোন জার্সিটা গায়ে দেবে। কখনও নেহরু, ইন্দিরা গাঁধীর নামাবলি গায়ে জড়িয়ে সমাজতন্ত্রী সাজতে চায়। আবার ভিতরে ভিতরে চিদম্বরম-মন্টেক বাঘের মতো গর্জন করছেন। সংস্কার কাকে বলে বাজেটে নাকি দেখিয়েই ছাড়বেন।”
বিতর্কটা জমে গেল, যখন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ সিদ্দিকি আগুনে ঘি ঢাললেন। “আরে বাবা, বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তো তোমরাই হয়ে উঠেছিলে সংস্কারবাদী। হোটেল থেকে যাত্রিনিবাস সব কিছু বেচে দিয়ে নিজেদের তো তখন খোলা বাজারের অ্যাডাম স্মিথ ভাবছিলে! এখন বিরোধী দলে এসে সমাজতন্ত্রী সেজে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছ! লজ্জা করছে না?”
ঠিক কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস। ধোঁয়া ওঠা পেয়ালায় তুফান। আর এই বিতর্কের তুফান থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, অর্থনৈতিক সমীক্ষাই হোক বা বাজেট পর্ব এ দেশে অর্থনীতির চেয়ে রাজনীতির দাপটই যেন বেশি।
চিদম্বরমের পেশ করা সমীক্ষা বলছে, আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও দুই অঙ্কে। আর্থিক ঘাটতির সঙ্কট প্রায় ’৯১ সালের মতোই। এই অবস্থা সামলাতে দরকার ’৯১ সালের মনমোহনকে, যিনি দেশের অর্থনীতিকে কড়া দাওয়াই দেবেন। সেই চিকিৎসা আপাতত যন্ত্রণাদায়ক হলেও শেষে স্থায়ী উপশম দেবে।
অথচ সেই পথে চলা যাচ্ছে কই! পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজনীতি। বিজেপি-র নেতা হয়েও অরুণ শৌরি (যিনি একদা বিলগ্নিকরণ মন্ত্রী ছিলেন) এই প্রবণতায় দুঃখিত। কিঞ্চিৎ ক্ষমাপ্রার্থীও। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের দেশে অর্থনীতি নিয়ে রাজনীতিটা বন্ধ হওয়া উচিত। বিদেশ নীতির মতোই একটা অখণ্ড আর্থিক নীতি করা যায় না? আমি তো বলি, কংগ্রেস আর বিজেপি যৌথ অঙ্গীকার করুক। আমরা যে সব বিল আনতে চেয়েছিলাম, তাতে কংগ্রেসকে সমর্থন দেব। আর কংগ্রেস যে সব বিল আনতে চায়, বিজেপি ক্ষমতায় এলে তাতে সমর্থন করবে। এমনটা কেন হয় না বুঝি না!”
তবে এই যে এক দিকে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার সুখসাধ্য কৌশল, আর অন্য দিকে আর্থিক বৃদ্ধির জন্য অ্যাডাম স্মিথের ‘লেইজে ফেয়ার’-এর সংঘাত ভারতীয় রাজনীতি দেখছে সেই ’৪৭ থেকেই। গাঁধীর স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি অর্থনীতি সরিয়ে রেখে সোভিয়েত প্রভাবে ভারী শিল্পের পথে হাঁটলেন নেহরু। ইন্দিরা হাঁটলেন ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের পথে। কংগ্রেসের বৃদ্ধতন্ত্রকে উপেক্ষা করে সংবিধানের প্রস্তাবনায় যোগ করলেন চির পুরাতন শব্দ: সমাজতন্ত্র। ফের ’৯১ সালে দ্বিতীয় বিপ্লব এল মনমোহনের সংস্কার পর্বে। পেন্ডুলামের মতো দাস ক্যাপিটাল আর অ্যাডাম স্মিথকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলেছে এ দেশের অর্থনীতি।
এই আলোচনায় অবশ্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন কূটনীতিক শশী তারুর। বললেন, “আরে ভাই! সমাজতন্ত্র মানেই কি দাস ক্যাপিটাল?” তাঁর বক্তব্য, “নেহরু ও কংগ্রেসের মতাদর্শেও সমাজতন্ত্র আছে। আমাদের রাষ্ট্র জনকল্যাণকামী। এত আর্থিক মন্দার মধ্যেও ব্রিটেন বা ইউরোপের বহু দেশ গরিব মানুষকে ভাতা দেয়। এ দেশে সংস্কারের পাশাপাশি সেটা করতেই বা অসুবিধা কোথায়?” শশী বলতে চান, এটা সংঘাত নয়। এটাই সমন্বয়। এটাই মিশ্র অর্থনীতি। এটাই অর্থনীতি আর রাজনীতির বোঝাবুঝি।
সংসদে প্রাক্-বাজেট এই আড্ডায় একটা ব্যাপারে অনেকেই এক মত। প্রণববাবুর রাজনীতিতে সমাজতন্ত্র ছিল। যাকে বলা যায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মানসিকতা। নরসিংহ রাও তখন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন অর্থমন্ত্রী। অন্ধ্রপ্রদেশে দু’টাকা কিলোগ্রাম দামে চাল দেওয়ার স্লোগান তুলে এনটিআর মুখ্যমন্ত্রী হলেন। তখন বৈঠকে প্রণববাবু বলেছিলেন, মনমোহনের কঠোর সংস্কার নয়, চাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংস্কার। ভোটে জিততে হবে তো? ইন্দিরা জমানায় প্রণববাবুর সঙ্গে কাজ করেছেন এমন আমলা, আজকের রাজ্যসভার সাংসদ নন্দকিশোর সিংহ বলেন, “প্রণববাবু ইন্দিরা জমানায় যে তিনটি বাজেট পেশ করেছেন, তাতেও আর্থিক উদারবাদের শিকড় ছিল। অর্থনীতি এক ক্রমিক বিকাশের পথনির্দেশিকা। কোনও একটা সময়কে, অন্য সময় থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।”
এ বার চিদম্বরমের পেন্ডুলাম কোন দিকে ঝুঁকবে, সেটাই আজ সাংসদদের প্রশ্ন। নাকি দুনিয়া যেমন মিশ্র অর্থনীতির দিকেই হাঁটছে, তেমনই চিদম্বরমও ধর্ম ও জিরাফ দুই-ই রাখবেন?

নজর থাকবে
খাদ্য সুরক্ষা
দেশের ৬৭% মানুষকে এর আওতায় আনতে দরকার ২৫ হাজার কোটি টাকার। সনিয়া গাঁধীর এই স্বপ্নের প্রকল্প, যাকে অস্ত্র করে লোকসভা ভোটে যেতে চায় কংগ্রেস, তার জন্য টাকা জোগাড়ই মাথাব্যথা চিদম্বরমের।

রোজগার নিশ্চয়তা
এই প্রকল্পকে সরকারের অন্যতম সাফল্য বলে মনে করেন সনিয়া-মনমোহন। কিন্তু পওয়ার-সহ অনেকেরই মত, এতে রাশ টানা উচিত। গত বারেও বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার কোটি। এ বার ৬% বাড়তি চান জয়রাম।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন
শহরের গরিবদেরও বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে চায় সরকার। লোকসভা ভোটের আগে ৭৭৯টি শহরে প্রকল্পটি চালু করতে চায় তারা। তাই বরাদ্দ বাড়তে পারে ২০ হাজার কোটি টাকা।

জিএএআর (গার)
কর ফাঁকি রুখতে গত বার ‘গার’ চালুর প্রস্তাব দেন প্রণব। এমন কঠোর বিধিতে লগ্নি আটকাকে, সেই আশঙ্কায় তা এখন হিমঘরে। উল্টে দাবি, কর বিধি শিথিল হোক।

পণ্য পরিষেবা কর
সংস্কারের লক্ষ্যে এই কর এ বার চালু করতে চায় সরকার। যদিও সব রাজ্য রাজি, এমন নয়। নরেন্দ্র মোদী, বা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী রাজি। কিন্তু বিজেপি সায় দেবে কি?

বিমল জালান,


বৃদ্ধির হার বাড়াতে, মূল্যবৃদ্ধি সামলাতে
এবং পরিকাঠামোয় লগ্নি টানতে
সরকার চেষ্টা শুরু করেছিল। এখন
তা ফল দিতে শুরু করেছে।
স্বামীনাথন আইয়ার,


যোজনা বরাদ্দ ছেঁটে চিদম্বরম
যে ভাবে আর্থিক ঘাটতি
কমাতে চাইছেন, সেটাই সেরা
পথ বলে মনে করি না।
অরুণ জেটলি,


বৃদ্ধির হার খারাপ। এই
বৃদ্ধির হার থাকলে সরকারের
পক্ষে সামাজিক প্রকল্প নিয়ে
এগোনো মুশকিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.