খুন করে দেহ লোপাটের চেষ্টার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল তিন জনের। বুধবার কালনা ফাস্ট ট্র্যাক আদালত এই নির্দেশ দেয়। এর পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্তদের দু’হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর কালনা শহরের শ্যামগঞ্জপাড়ার বাসিন্দা গুরুচরণ মুখোপাধ্যায় লিখিত অভিযোগ করেন, তাঁর বড় ছেলে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ইলেট্রনিক জিনিসপত্রের ব্যবসা ছিল। বছর একুশের সঞ্জয় ব্যবসার জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছিলেন। সে সব কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান ডাঙালপাড়ার বাসিন্দা গোপেশ্বর মাঝি ও তার ছেলে কেনারাম মাঝি। দামদর স্থির হওয়ার পরে এক সন্ধ্যায় সঞ্জয় জিনিসপত্র এক বন্ধুর ভ্যানে চাপিয়ে বেচারামের বাড়ি যায়। সেই রাতেই টাকা নিয়ে তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু রাত ১২টাতেও না ফেরায় গুরুচরণবাবুরা খোঁজ করতে বেরোন। বেচারামের বাড়ি গেলে তার বাবা গোপেশ্বর জানায়, সঞ্জয় টাকা নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন।
গুরুচরণবাবু পুলিশকে জানান, গোপেশ্বরের ওই কথা শুনে তাঁরা ফিরে আসেন ও অন্য নানা জায়গায় খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু কোনও হদিস মেলেনি। ভোরে ফের গোপেশ্বরের বাড়ি গিয়ে ছেলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করে। বেচারামের ঘরের বারান্দায় সঞ্জয়ের টাকার ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের আরও সন্দেহ হয়। কিন্তু বেচারাম ও তার বাড়ির লোকজন সাফ জানিয়ে দেয়, সঞ্জয়ের ব্যাপারে তাদের কিছু জানা নেই। এর পরেই গুরুচরণবাবু বেচারাম ও তার বাবার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্তদের কালনা থানা গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা খুনের কথা স্বীকার করে জানায়, মালপত্রের টাকা না দেওয়ার জন্য সঞ্জয়কে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। পরে একটি ডিঙিতে করে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ভাগীরথীতে দেহ ফেলে রেখে আসে। ঘটনার দিন দুয়েক পরে নরেশকুমার ঘাটের কাছে দেহটি ভেসে উঠতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তদন্তে নেমে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ সঞ্জয়ের প্রতিবেশী নিমাই মণ্ডল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। মামলার সরকারি আইনজীবী তপন গণ বলেন, “মামলা চলাকালীন মোট ২৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এ দিন বিচারক অখিলেশকুমার পাণ্ডে বেচারাম, গোপেশ্বর ও নিমাইয়ের সাজা ঘোষণা করেন।” রায় ঘোষণার পরে নিমাইয়ের স্ত্রী লক্ষ্মী মণ্ডল বলেন, “আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।” |