আধা সামরিক বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ইংরেজবাজার উপনিবার্চন শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হয়েছে। শুরুতে ভোট গ্রহণ খুব ধীরে চললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ছোটখাট গোলমাল ছাড়া ইংরেজবাজার উপনিবার্চন কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বিঘ্নে নিবার্চন শেষ হয়েছে। ইংরেজবাজার উপ নিবার্চনের রিটার্নিং অফিসার পুষ্পেন্দু চৌধুরী বলেন, “বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। বেশ কয়েকটি বুথে লম্বা লাইন থাকায় ৫টার পরেও ভোটগ্রহণ চলছে।”
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে দলীয় ব্যাচ পড়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা, ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের জানালা খোলা ও ১২৫ ,২২৯ ,২৩৭ বুথে ইভিএম খারাপ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। বিবেকানন্দ স্কুলে ১৭২এ নম্বর বুথে সিপিএমের এক পোলিং এজেন্টকে সেই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার বুথের ভিতরে বসতে না দেওয়ায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। প্রশাসনের কর্তারা ও অসামারিক বাহিনীর অফিসাররা ছুটে গিয়ে দ্রুত পরিস্থিতির সামাল দিয়েছে। |
এদিন সকালে চিন্তামণি চমৎকার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ব্যাচ পড়ে প্রচার করছিল বলে অভিযোগ। সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা বাধা দেওয়ায় ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। সিপিএম প্রার্থী কৌশিক মিশ্রের অভিযোগ, “তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা ব্যাচ পড়ে বুথে ভোটার প্রভাবিত করছিল। ভয় দেখাচ্ছিল। আমাদের কর্মীরা বাধা দেওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা তেড়ে আসেন। বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের ১৭২ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার তপন দাস উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এজেন্টকে বুথে বসতে দেননি। দু’ঘণ্টা বুথে আমাদের এজেন্ট ছাড়াই ভোট হয়েছে। নিবার্চন আধিকারিক, পর্যবেক্ষককে অভিযোগ জানানোর চিন্তামণি চমৎকার বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে তৃণমূল কর্মীদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে নিবার্চন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছি।”
এ দিন সকাল থেকে বেরিয়ে বুথে বুথে ঘোরার সময় ঝলঝলিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে ৮১ নম্বর ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের জানলা খোলা থাকতে দেখে ক্ষুব্ধ হন তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। বুথে ঢুকে জানলা বন্ধ করার নির্দেশ দিতেই তড়িঘড়ি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার মহম্মদ ওয়াজেদ আলম জানলাটি বন্ধ করে দেন। বুথের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, “জানালা দিয়ে ইভিএম দেখা যাচ্ছিল না। তবু প্রার্থী যখন অভিযোগ করেন তখনই জানলা বন্ধ করেছি।” তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “যে নিরাপত্তার মধ্যে ভোট হয়েছে তাতে আমি খুশি। ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট দিয়েছেন।” |
ধীরেন্দ্র নাথ সাহা বিদ্যাপীঠ স্কুলের ১২৫ নম্বর বুথে দেড় ঘন্টা ভোটগ্রহণের পরে ইভিএম অকেজো হয়ে যাওয়ায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। ৩৫ মিনিট ভোট বন্ধ থাকার পর নতুন ইভিএম মেশিন পৌঁছয়। উত্তেজনা কমে।
ইংরেজবাজারের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচরে হরিভূষণ দাস মেমোরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে অন্য বুথের ভোটারকে এজেন্ট করায় উত্তেজনা দেখা দেয়। কংগ্রেস প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি অভিযোগ করেন, “তৃণমূল যেখানে ভোট হচ্ছে, সে বুথের ভোটার এজেন্ট করতে পারেনি। ভোটারদের প্রভাবিত করতে অন্য বুথের ভোটারকে এনে তৃণমূল পোলিং এজেন্ট করেছিল। পর্যবেক্ষককে কাছে অভিযোগ করে অন্য বুথের এজেন্টকে সরানো হয়।”
এই দিন সকালে কোতোয়ালির জুনিয়ার বেসিক স্কুলে সকালে নিজের ভোট দেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। কেমন ভোট হচ্ছে তা দেখতে সপার্ষদ শহর ঘুরে বেড়ান তিনি। বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের কাছে জানান। এর পরই পুলিশ পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীকে জেলা কংগ্রেস পার্টি অফিসে ঢোকার অনুরোধ করে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অবশ্য কোনও আপত্তি না করে দলীয় অফিসে ঢুকে যান। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আবু হাসেম খান চৌধুরী শহরে আর বেরোননি। |