নিষিদ্ধ ঠিকানা থেকে নিজের পরিবার।
শনিবার দুপুরে শিলিগুড়ির থানার সামনের একটি স্টুডিওতে দু’জনে যখন ঘনিষ্ঠ হয়ে ছবি তুলছেন, সেই পরিবারের স্বপ্নই ভরে ছিল তাঁদের চোখে। মিকি ডেকা এবং বিকু রায় সরকার। সেই স্বপ্ন নিয়েই শুক্রবার রাতে শিলিগুড়ি ছেড়ে দূরে চলে যেতে চেয়েছিলেন তাঁরা। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত নতুন রাস্তায় হাঁটার পথ খুলেছে। নাগাল্যান্ডের মেয়ে মিকি শিলিগুড়ির নিষিদ্ধপল্লি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিকুর সঙ্গে নতুন করে জীবন শুরু করতে চলেছেন।
নিষিদ্ধ পল্লিতেই আলাপ দু’জনের। সে দিন মিকির বেশ জ্বর। বিকু কথায় কথায় জানতে পারেন মিকি ডিমাপুরের মেয়ে। বিকু কর্মসূত্রে থাকে মেঘালয়ে। মিকি সে কথা শুনে জানতে চান ডিমাপুরের খবর। সেই গল্পেই সম্পর্ক তৈরি হতে শুরু করে। শিলিগুড়ির দক্ষিণ প্রান্তের একটি কলোনির বাসিন্দা পেশায় গ্রিল শ্রমিক বিকু বলেন, “খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম বার গিয়েছিলাম বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। তারপর থেকে মিকির ঘরে যেতাম ওর টানেই।” সেখানেই জানতে পারেন, এক আত্মীয়াই কিছু দিন আগে মিকিকে বিক্রি করে দিয়ে গিয়েছে এই পল্লিতে। পুজোর ছুটির পরে মেঘালয়ে ফিরে গেলেও মিকির জন্যই প্রতি মাসেই শহরে ফিরেছেন বিকু। আয় সামান্য। যাতায়াতে খরচ অনেক। বিকু বলেন, “তখনই বুঝতে পারছিলাম, ওর সঙ্গেই আমার জীবন বাঁধা হয়ে গিয়েছে।” সপ্তাহখানেক আগে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে মিকিকে বিয়ে করে মেঘালয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। সাহস দেন তাঁর বন্ধুরাও।
কিন্তু মিকি রাজি হননি প্রথমে। অনেক কষ্টে রাজি করাতে পেরেছিলেন বিকু। শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ দু’জনে হাত ধরে নিষিদ্ধপল্লির ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটতে থাকেন। বিবেকানন্দ রোডে বন্ধুরা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তখন পিছু নেয় একদল মদ্যপ দালাল। তীব্রগতিতে গাড়িও ছুটতে থাকে। হইচই শুনে পুলিশের একটি টহলদারি ভ্যান গাড়িটি আটকায়। পুলিশ প্রথমে বিকু-মিকির প্রেমের কথা বিশ্বাস করেনি। সকলকে থানায় নিয়ে যায়। রাতভর জেরা চলে।
ভোরে সব কথা জানতে পারেন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল। তিনি খোঁজখবর করে জানিয়ে দেন, দু’জনেই যখন প্রাপ্তবয়স্ক এবং বিয়ে করে সংসার পাতবে বলছে তা হলে বাধা দেওয়ার দরকার নেই। এর পরেই শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে দু’জনকে দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে বিকুকে জামিনে ছেড়ে দেন। থানা চত্বরে দাঁড়িয়েই বিকুর বন্ধু কুন্দ রায় বলেন “নিষিদ্ধপল্লির মেয়ে ‘সনিয়া’কে ‘বাস্তব’ সিনেমায় বিয়ে করে ঘরে তুলেছিলেন নায়ক, তখন দর্শক হিসেবে সেটা মেনে নিতে পারি। সত্যিকারের জীবনে তা হলে পারব না কেন?” বিকুর বাবা-মা দু’জনেই বলেছেন, “ছেলে সুখে থাকলেই আমরা সুখী। মেয়েটাকে দেখেও বড় দুঃখী মনে হয়।”
মাত্র কয়েক মাস আগেই ২ অগস্ট কলকাতার সোনাগাছির যৌনকর্মী মানালি সিংহকে বাড়ির লোকজনের মত নিয়ে বিয়ে করেন বিক্রম অগ্রবাল। নাগেরবাজারের শ্বশুরবাড়িতে জমিয়ে সংসার করছেন মানালি। |
মেঘালয়ে ছোট্ট সংসার পাতবেন এ বার মিকিও। (নামগুলি কাল্পনিক) |